শাব্বির আহমাদ খান
উত্তরবঙ্গে নান্দনিক সাজে সজ্জিত একটি বিভাগ — রাজশাহী। সবুজ-শ্যামল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী। এই শহরের কৃষি নির্ভর জেলা — নওগাঁ। এ জেলায় রয়েছে ৫২৭ বছরের প্রাচিন ও ঐতিহাসিক ‘কুসুম্বা মসজিদ’। বংলাদেশের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছে সুলতানি আমলের নিদর্শন। তার মধ্যে অন্যতম নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ। যা পাঁচ টাকার নোটে দেখা যায়। নওগাঁ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মান্দা উপজেলা। এই উপজেলার কুসুম্বা নামক গ্রামে অবস্থিত কুসুম্বা মসজিদ।
প্রতিদিনই দেশের নানান প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। দেশের বাইরে থেকেও আসেন ভ্রমণপিয়াসীরা। কেবল এই মসজিদটি একনজর দেখার জন্য । মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণ দিকে রয়েছে ১০০ বিঘা আয়তনের বিশাল দিঘী। সরল-সোজা গ্রামবাসী ও সাধারণ মুসল্লিদের খাবার ,অজু- গোসলের প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই দিঘিটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
কুসুম্বা মসজিদটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ৫৮ ফুট লম্বা। চওড়ায় ৪২ ফুট । মসজিদের সম্মুখভাগে রয়েছে তিনটি দরজা। দুটি বড়। একটি সামান্য ছোট। মসজিদের চার কোনে চারটি মিনার । সেগুলো মসজিদের দেয়াল সামান উঁচু। মসজিদের ছাদে রয়েছে দুটি সারিতে ছয়টি গম্বুজ।
১৮৯৭ সাল। সেবছর হয় ভূমিকম্প। সে ভূমিকম্পে মসজিদের তিনটি গম্বুজ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তিতে গম্বুজগুলো সংস্কার করা হয়। মসজিদের ভেতর রয়েছে দুটি পিলার । তার ডানে একটি মেহরাব। তার সামনে পাথরের তৈরি একটি পিলার। তার উপর তৈরি করা হয়েছিল একটি ঘর। ঘরটি মহিলাদের নামাজের ঘর। সেখানে মহিলারা নামাজ পড়তেন।
মসজিদটির সামনে খোলা প্রাঙ্গণ। সিঁড়িতে পাথর বসানো। যা দিঘীতে গিয়ে নেমেছে।
বাংলায় আফগানদের শাসন আমল। তখন শূর বংশ বাংলা শাসন করত। শূর বংশের শাসনের শেষদিকের শাসক গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহর । তার আমলে সবরখান বা সোলায়মান নামে ধর্মান্তরিত এক মুসলিম মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ।
কুম্বুস গ্রামের নামকরণ নিয়ে সমাজে ছড়িয়ে আছে নানা মুখরোচক কল্পকথা। গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিনের বেগম কুসুম বিবি। তিনি এ অঞ্চলে কিছুদিন বসবাস করেন। তার নামানুসারে গ্রামটির নাম হয় কুসুম্বা। সুলতান আলাউদ্দিনের বিবি কুসুমের নামানুসারে নির্মিত হয় মসজিদটি। তবে ইতিহাসবিদেরা এর কোনো ঐতিহাসিক সত্যতা খোঁজে পাননি।
মসজিদের সামনের খোলা স্থানে প্রায় ৭০০ মুসল্লি জামায়াতে নামাজ পড়তে পারেন। শুক্রবার ও বছরের দুই ঈদের জামাতে মসজিদের ভেতর-বাইরের পুরো চত্বর ধর্মপরায়ন মুসলমানদের পদচারণায় ভরে যায়।
নওগাঁর ঐতিহাসিক এই মসজিদে যেতে — ভ্রমণপিয়াসিদের প্রথমে ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে হবে। রাজশাহী যাওয়া ছাড়া এখানে যাওয়া সম্ভব নয়। বাস ভাড়া লাগবে ৫০০ টাকা। তারপর রাজশাহী মহানগরের গোরহাঙ্গা রেলগেট বাসস্ট্যান্ড থেকে নওগাঁর বাসে উঠে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে মান্দার ফেরিঘাটের পূর্বে কুসুম্বা মোড়ে নামবেন। তারপর এক মিনিটে হেঁটে কুসুম্বা মসজিদ। আর থাকার জন্য নওগাঁ শহরে রয়েছে বিভিন্ন হোটেল। সেখানে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় একদিনের জন্য রুম ভাড়া পাওয়া যাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম খিলগাঁও।
আরএইচ/