সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


সংস্কারের অভাবে হারাতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

 

কালের সাক্ষী হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় দাঁড়িয়ে আছে নির্দশনের মধ্যে অন্যতম আতিয়া জামে মসজিদ। এটি দেশের অন্যতম একটি প্রাচীন মসজিদ। টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রাম।

এ গ্রামের লৌহজং নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত আতিয়া মসজিদ। লাল ইটে তৈরি এ মসজিদটির স্থাপত্য শৈলী অত্যন্ত চমৎকার। এই মসজিদ থেকে পাওয়া বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত শিলালিপিটিতে সুলতানি ও মোঘল স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের আতিয়া মসজিদের নির্মাণকাল ১০১৯ হিজরী বা ১৬১০-১১ খ্রিস্টাব্দ দেয়া হলেও মসজিদটির কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উপর স্থাপিত অপর শিলালিপিতে এর নির্মাণকাল ১০১৮ হিজরি বা ১৬০৮-৯ খ্রিস্টাব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়, আতিয়া মসজিদটির নামকরণে রয়েছে একটি ইতিহাস। আরবি শব্দ ‘আতা’ থেকে ‘আতিয়া’ যার অর্থ ‘দানকৃত’। সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ টাঙ্গাইল জেলার জায়গির হিসেবে নিযুক্ত করেন আলি শাহান শাহ্ বাবা আদম কাশ্মীরি রহ.)= কে। পরে আদম কাশ্মীরি রহ. এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন।

আফগান নিবাসী কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে ওই এলাকাটি দান হিসেবে পান। এলাকাটি দানসূত্রে পাওয়ায় অঞ্চলের নাম হয়েছে আতিয়া আর এলাকার নামানুসারে মসজিদটির নাম হয়েছে ‘আতিয়া জামে মসজিদ’। শাহ্ বাবা আদম কাশ্মীরি রহ. বৃদ্ধ বয়সে তার প্রিয় ও বিশ্বস্ত ভক্ত সাঈদ খান পন্নীকে মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর আতিয়া এলাকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। সাঈদ খান পন্নী এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির স্থপতি ছিলেন মুহাম্মদ খাঁ।

আতিয়া মসজিদটি মূলত বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট। এছাড়া পূর্ব দিকে অপেক্ষাকৃত ছোট ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তকার বারান্দা রয়েছে। বারান্দা থেকে মসজিদে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে ৩টি প্রবেশপথ। মসজিদের কিবলা দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলঙ্কৃত মেহরাব। আতিয়া মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দেয়ালে রয়েছে চমৎকার সব পোড়ামাটির নকশা। মসজিদটি টেরাকোটার ইটের তৈরি। চুন, সুরকি গাঁথুনি দিয়ে মসজিদটি নির্মিত। আর সুলতানি আমলে প্লাস্টার পদ্ধতি ছিল না। তারা চুন ও সুরকির গাঁথুনি দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করত। বক্রাকার কার্নিশ, সুচালো খিলান ও গম্বুজ সবই সুলতানি আমলের নিদর্শন। আতিয়া মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দিকের বাইরের দেয়ালে টেরাকোটার ওপর চমৎকার বৃত্তের মাঝে ফুলের নকশা করা, যা মোগল আমলের নিদর্শন। মসজিদের পশ্চিম পাশেই প্রবেশের রাস্তায় একটি শানবাধা ঘাটের সাথেই রয়েছে পুকুর। স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসুল্লিরা এ মসজিদে নামাজ আদায় করে।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৮.২৯ মিটার, প্রস্থ ১২.১৯ মিটার ও দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার। মসজিদের চারকোনায় অষ্টকোনাকৃতি মিনার রয়েছে। এ মসজিদটি থেকে একটি আরবি ও একটি ফারসি শিলালিপি পাওয়া গিয়েছিল। এই লিপিগুলো থেকেই মসজিদ নির্মানের সময়কাল জানা যায়।

রওশন খাতুন চৌধুরানী ১৮৩৭ সালে ও আবুল আহমেদ খান গজনবি ১৯০৯ সালে মসজিদটি সংস্করণ করেন। বাংলাদেশ সরকার মসজিদটি প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন হিসেবে অধিগ্রহণ করে। কিন্তু মসজিদ সংস্কারে তেমন কোন বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে চুনকামের অভাব, অতত্মে অবহেলায় হারাতে বসেছে ৪১৬ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ।

স্বাধীন বাংলাদেশের পুরোনো দশ টাকার নোটে ছিল আতিয়া জামে মসজিদটির ছবি। তাই মোটামুটি সবার কাছে পরিচিতি এই মসজিদটি। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এই মসজিদটির রয়েছে সারাদেশে পরিচিতি। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এখনো অনেক মানুষ আসে মসজিদটি দেখার জন্য।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ