||বিশেষ প্রতিনিধি||
নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের শীর্ষ ইসলামি দলগুলো। তারা প্রত্যাশা করছে, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল ঘোষণার পরপরই ইসলামি দলগুলো পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের দলের পক্ষ থেকে বলেন, আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা থাকলে সেটা কেটে যাবে।
এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, এখন নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য কমিশনকে নানা গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, নির্বাচনকে অর্থবহ করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতা আমরা আশা করবো না। আমরা প্রত্যাশা করবো সুষ্ঠু-সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, জনগণের প্রত্যাশামাফিক ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে তফসিল ঘোষিত হয়েছে তাকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানায়।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, অবাধ, ক্রেডিবল ও উৎসবমুখর নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার আটটি দলের দাবিকে উপেক্ষা করে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের যে চ্যালেঞ্জ তারা নিয়েছেন সেই চ্যালেঞ্জে তারা সফল হন; সেই প্রত্যাশা আমরা করি। সেজন্য আমরা সহায়তাও করবো ইনশাআল্লাহ।
এক বিবৃতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শাইখুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে ইসিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আশাবাদ ব্যক্ত করছে যে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলকভাবে সম্পন্ন হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেশ ও জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন— আমরা আশা করি, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচনের পথ সুগম হবে।
বিবৃতিতে আমির ও মহাসচিব বলেন, নির্বাচন যেন প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটাধিকার ও মতামত প্রতিফলিত করতে পারে— তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই। লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয় না। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ, অবাধ প্রচারণার স্বাধীনতা এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই।
তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ঘোষিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত সময় যা সচেতন রাজনৈতিক মহলের আগে থেকেই দাবি ছিল। তফসিলে ঘোষিত বিভিন্ন সময়সীমা যথার্থ হলেও একই দিন গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা একটি দুরূহ কাজ। এই ক্ষেত্রে বাজেট, দক্ষ জনবল ও ভোটারদের সচেতনতার সমন্বয় থাকতে হবে।
তারা বলেন, অন্যদিকে নির্বাচনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো প্রস্তুত নয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পেশীশক্তির রাজনীতি ও কালো টাকার প্রভাবে রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। ৫ আগস্ট পরবর্তি লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত যৌথ বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অপশক্তি এখনো ষড়যন্ত্র ও নাশকতায় লিপ্ত।
এনএইচ/