শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ ।। ৬ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৪ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :

ভোটের হিসাবে ইসলামি দলগুলোর অবস্থান কোথায়?


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশের রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। কে কোন আসনে নির্বাচন করবেন, কার সঙ্গে কার জোট হবে সেই জল্পনাও জোরেশোরে চলছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ইসলামি দলগুলোও। অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবার ইসলামি দলগুলো ভোটের রাজনীতিতে ভালো করবে-এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। 

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেই নির্বাচনে কোন দল কার সঙ্গে জোট করবে সেটা এখনো আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ সব ইসলামি দল মিলে একটি বৃহৎ জোটের কথা অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত সেই জোট আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না-সেটা এখনো চূড়ান্ত করে কেউই বলতে পারছেন না। 

অতীতের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্যান্য ইসলামি দলগুলো কখনো ভোটের হিসাবে বিশেষ কোনো ফ্যাক্টর হতে পারেনি। জামায়াতের প্রার্থীরা একক শক্তিতে সংসদে গেলেও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর নেতারা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির কাঁধে সওয়ার হওয়া ছাড়া কখনো সংসদে যেতে পারেননি। 

নির্দিষ্ট কিছু আসনে জামায়াত ছাড়া অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর একক শক্তিতে সংসদে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের হিসাব-নিকাশ এবার অনেকটা পাল্টে যাবে। এবারের ভোটে ইসলামপন্থীরা একটি ফ্যাক্টর হতে পারেন। বিশেষ করে তাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য হলে সেটা নিশ্চিত। তাছাড়া এককভাবে ইসলামি দলগুলো সংসদে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে না পারলেও তারা ভোটের মাঠে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এজন্য তাদের সমর্থন অনেক দলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকে। 

বিগত দিনের নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর অবস্থান

পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর ভোট গড়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যেই ছিল। দলটির ভোট চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কিছু এলাকায় কেন্দ্রীভূত। এর বাইরে তারা কেবল সিরাজগঞ্জের একটি, পিরোজপুরের একটি ও কুমিল্লার একটি আসনে ভোট বাড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসার মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছে।

১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ৬ শতাংশ ভোট পেলেও জামায়াত কোনো আসন পায়নি। স্বাধীনতার পর দলটি দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে ভোট পায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আসন পায় ১০টি।

ভোটের মাঠে জামায়াত অনেকটা চমক দেখায় ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ে বলা হয়েছে, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে অঘোষিতভাবে ৩৫ আসনে সমর্থন দেয় বিএনপি। আর বিএনপিকে শতাধিক আসনে ভোট দেয় দলটি। সেই নির্বাচনে বিএনপি আসন পায় ১৪০টি, জামায়াত পায় ১৮টি। আর আওয়ামী লীগ পায় ৮৮ আসন। ওই নির্বাচনে জামায়াতের বাক্সে পড়ে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট। দলটির নির্বাচনী ইতিহাসে গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পায় সেবার।

১৯৯৬ সালে যে দুইবার ভোট হয়, তার মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মতো বর্জন করে জামায়াতও। ওই বছরের ১২ জুন সব দল একক শক্তিতে যে নির্বাচন করে, তাতে জামায়াতের ভোট কমে হয় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। আসন পায় তিনটি।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট গঠন হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি একাই পায় ১৯৩টি আসন। জামায়াত পায় ১৭টি।  ইসলামী ঐক্যজোট পায় দুটি আসন পায়। পরে উপনির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট আরও দুটি আসন পায়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত ভোট পায় ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি, তবে আসন পায় দুটি। জামায়াত ছাড়া বাকি ইসলামি দলগুলোর ভোটের পরিমাণ এক শতাংশেরও কম। 

২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় পর আর দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারেনি জামায়াত।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর হাতপাখা প্রতীকে নিবন্ধিত হয়। সে বছর ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ ৩৮টি নিবন্ধিত দল অংশ নেয়। একটি দল অংশ নেয়নি। হাতপাখা ১৬৭টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪টি ভোট পায়, যা ভোটের হারের মাত্র দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশের বেশি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি ইসলামী আন্দোলন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১২টি দল অংশ নেয়। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বাকিগুলোয় ভোট পড়েছিল ৪০ শতাংশ। বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এ নির্বাচনে ২৯৭ আসনে প্রার্থী দিয়ে হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ ভোট পেয়েছিল; যা প্রদত্ত ভোটের ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ নির্বাচনে বিএনপিসহ অংশ নিয়েছিল ৩৯টি দল।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বেশির ভাগ ইসলামি দল বর্জন করে। ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলন অংশ নিলেও তাদের ভোটের পরিমাণ ছিল খুবই কম। 

জাতীয় নির্বাচনে কখনো ভালো ফলাফল করতে না পারলেও আওয়ামী লীগের আমলে বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রীতিমতো চমক দেখায় ইসলামী আন্দোল ন। ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ঢাকা উত্তরে ১৮ হাজার এবং দক্ষিণে ১৫ হাজার ভোট পায় দলটি। ২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৃতীয় হয় ইসলামী আন্দোলন।

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল তারা। ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৬ হাজার ২৫৮ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৬ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয় দলটি। রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছিল ইসলামী আন্দোলন।

২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বিতীয় ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৃতীয় হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দ্বিতীয় হওয়া দলটির প্রার্থী ভোট পান ৪৯ হাজার ৮৯২।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ