বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫ ।। ৪ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২২ জিলহজ ১৪৪৬


‘চুপসে’ যাওয়া নিবন্ধিত ৫টি ইসলামি দলের হালচাল 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশে ইসলামি দলের সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামি দলের (জামায়াত বাদে) সংখ্যা ১১টি। এই দলগুলোর মধ্যে ছয়টি রাজনৈতিক মাঠে বেশ সক্রিয় থাকলেও আলোচনায় নেই পাঁচটি দল। এই দলগুলোর কোনো কোনোটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গেও ছিল। এজন্য ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দলগুলো অনেকটা চুপসে গেছে। 

তাদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। কোনো কোনো দলের নেতারা আওয়ামী লীগের মতো গা ঢাকা দিয়ে আছেন। 

নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় চুপসে যাওয়া পাঁচটি ইসলামি রাজনৈতিক দল মূলত এদেশের মূলধারার ইসলামি দল হিসেবে আগেও গণ্য হয়নি। দলগুলোর সম্পৃক্ততা সাধারণত মাজার ও দরবারকেন্দ্রিক। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হলেও এককভাবে এসব দলের তেমন কোনো তৎপরতা কখনোই ছিল না। সারাদেশে সংগঠনও নেই। যদিও এসব দলের কেউ কেউ জোট-মহাজোটের হয়ে এমপি হয়েছেন বিভিন্ন সময়। 

এখানে চুপসে যাওয়া সেই পাঁচটি ইসলামি দলের হালচাল তুলে ধরা হলো- 

বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন

মাজারপন্থী দলগুলোর মধ্যে আলোচিত সংগঠন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। ২০০৫ সালে বিএনপি থেকে বেরিয়ে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং দুটি সংসদীয় আসনও লাভ করে। এই দলের মহাসচিব এম এ আওয়াল ২০১৭ সালে ইসলামী দলগুলোর একটি জোট গঠনের চেষ্টা করেন। এর ফলে ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মহাসচিবের পদ থেকে এম এ আওয়ালকে অপসারণ করেন। এম এ আওয়ালের স্থলে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীকে মনোনীত করেন।

এই দলের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসনের একাধিকবারের সংসদ সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দল থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে মহাজোট তাকে মনোনয়ন দেয়নি। এছাড়া তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল ২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

আওয়ামী লীগের পতনের পর তরীকত ফেডারেশনও চুপসে যায়। দলের নেতারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

জাকের পার্টি

জাকের পার্টি ফরিদপুরের আটরশি দরবারকেন্দ্রিক দল। দলটির বর্তমান প্রধান নেতা হলেন মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী। দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তার ছেলে ড. সায়েম আমীর ফয়সল। আর মহাসচিব শামীম হায়দার। 

জাকের পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৯ সালে আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে ১৯৮৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাকের সংগঠন নামে যাত্রা শুরু হয়। আটরশির তৎকালীন পীর হাসমত উল্লাহ ১৪ অক্টোবর ১৯৮৯ সালে রহমতের সময় জাকের পার্টির ফলক উন্মোচন করেন।

দলটির নির্বাচনী প্রতীক গোলাপ ফুল। এর বেশ কিছু অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রয়েছে। জাকের পার্টি ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে। তবে কোনো নির্বাচনেই উল্লেখযোগ্য ভোট পায়নি। 

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল। এটি ১৯৯০ সালের ২১ ডিসেম্বর সুন্নি সুফিবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ করে থাকে। দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী এবং মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর। এই দলের নির্বাচনী প্রতীক চেয়ার। যুব সংগঠন ইসলামিক যুবফ্রন্ট বাংলাদেশ, সহযোগী ছাত্র সংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রসেনা। দলটি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে দলটি স্থানীয় নির্বাচনসহ সবকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ভাগ হয়েই মূলত বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নামে নিবন্ধিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাও ২১ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বাংলাদেশে সুন্নী মতাদর্শভিত্তিক ইসলামি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই এই সংগঠনের লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান এম.এ মতিন। প্রতিষ্ঠাকালীন (প্রথম) চেয়ারম্যান ছিলেন মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ আব্দুল জলিল। বর্তমান মহাসচিব স. উ. ম. আবদুস সামাদ।
 
দলীয় নির্বাচনী প্রতীক মোমবাতি। দলটি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক ছিল। বর্তমানে দলটি কোনো জোটে নেই।

আলোচিত টেলিভিশন উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী এই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট তিনি নৃশংসভাবে খুন হলে এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।  

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি

ইসলামি দল হিসেবে সবশেষ নিবন্ধন পাওয়া সুপ্রিম পার্টির প্রধান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। ২০১৯ এর ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) গঠন হয়। আর এটি নিবন্ধন পায় ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট। এটি মূলত চট্টগ্রাম মাইজভান্ডার দরবারের বিরোধের জেরে গঠিত হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারী ২০২৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও উল্লেখযোগ্য কোনো ভোট পাননি। 

নিবন্ধন পাওয়ার পর সুপ্রিম পার্টির নেতৃত্বে ‘লিবারেল ইসলামিক জোট’ নামে একটি জোট গঠিত হয়।’ নির্বাচন কমিশনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা রাজধানীর মিরপুর-১ এর শাহ আলীবাগের এক ভবন। প্রধান ফটকে সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও স্থানীয়দের কাছে এটি খানকা শরিফ নামেই পরিচিত। জোটটিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ছাড়া বাকি দলগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, আশিক্কীনে আউলিয়া পরিষদ, বাংলাদেশ জনদল, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ