শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ ।। ২০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫


রোজার আধুনিক মাসায়েল (দ্বিতীয় পর্ব)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সাদেকুর রহমান

৪. রোজা ভঙ্গকারি বস্তু গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে দেহের ভেতর প্রবেশ করা। আর গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিত হল صورة فطر অথবা معنى فطرপাওয়া যাওয়া। صورة فطر এর ব্যাখ্যায় হানাফি মাজহাবে ২টি অভিমত রয়েছে ১. الابتلاع অর্থাৎ গলাধঃকরণ করা। এটা ইমাম মারগিনানী র. এবং তার অনুসারীদের মত। ২. الادخال بصنع الصا ئم অর্থাৎ রোজাদার নিজে রোজা ভঙ্গকারি বস্তু প্রবেশ করানো।

এটি ইমাম কাযীখান র. এবং তার অনুসারীদের অভিমত।এই উভয় ব্যাখ্যার জন্য দুটি শর্ত। ১. প্রবেশকারি বস্তুটি সম্পূর্ণভাবে ভেতরে প্রবেশ করা।
সুতরাং কেউ মলদ্বার দিয়ে কাঠের শলা ইত্যাদি সম্পূর্ণ প্রবেশ না করিয়ে আংশিক প্রবেশ করালে তার রোজা ভঙ্গ হবেনা।২. প্রবেশেকারী বস্তুটি দেহের ভেতরে প্রবেশের পর সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করা।

সুতরাং কেউ গোস্তের টুকরা সুতা দ্বারা বেধে গিলে ফেলার সাথে সাথে পুনরায় তা টেনে বের করে ফেললে আর তার কোনো অংশ ভেতরে না থাকলে রোজা ভঙ্গ হবেনা। আর معنى فطر এর অর্থ হল ,দেহের উপকারী বস্তু দেহের ভেতর প্রবেশ করা।

ইমাম আবু হানিফা র. এর সাথে ইমাম আবু ইউসুফ র. এবং মুহাম্মদ র. এর দ্বিমত পোষণ। ইমাম আবু ইউসুফ র. এবং ইমাম মুহাম্মদ র. এর মতে বস্তু প্রবেশ সৃষ্টিগত রাস্তা দিয়ে হতে হবে।

সুতরাং মাথার ক্ষত এবং পেটের ক্ষত ইত্যাদি কৃত্রিম রাস্তা দিয়ে রোজা ভঙ্গকারী বস্তু প্রবেশ করলে এই প্রবেশ গ্রহনযোগ্য হবেনা ও রোজা ভঙ্গ হবেনা। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা র.এর মতে সৃষ্টিগত এবং কৃত্রিম উভয় রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করলেই প্রবেশ গ্রহনযোগ্য হবে এবং রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৫. রোজা ভঙ্গের পরিপন্থী এবং প্রতিবন্ধক কোনো বস্তু না পাওয়া যাওয়া।
রোজা ভঙ্গের পরিপন্থী বা পরিপন্থী নয় এমন বস্তুর সংখ্যা ৮ টি ১. النسيان অর্থাৎ রোজার কথা স্মরণ থাকাবস্হায় রোজা ভঙ্গকারী বস্তু দেহের ভিতরে প্রবেশ করানো
২. الخطأ অর্থাৎ রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছা ও অসতর্কতাবশত রোজা ভঙ্গকারি বস্তু দেহের ভেতরে প্রবেশ করানো। ১ম অবস্থায় রোজা ভঙ্গ হবেনা। এবং দ্বিতীয় অবস্থায় রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। কাফফারা নয়।

৩. الغلبة ব্যাপকতা লাভ করা অর্থাৎ রোজা ভঙ্গকারি বস্তু এমন ব্যাপকতা লাভ করা ,যার থেকে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। যেমন মশা-মাছি ,ধুলা-বালি,ধোঁয়া-কোয়াশা, বাস্পসহ সকল ধরনের উরন্ত গুঁড়ি, যেগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও নাক -মুখ দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে থাকে।

এর হুকম হল, গলাবা তথা ব্যাপক থাকা অবস্থায় কোনো কিছু দেহের ভেতরে অনিচ্ছাকৃত ভাবে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবেনা। সুতরাং মশা-মাছি ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে নাক-মুখ দিয়ে গলার ভেতর প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই ইচ্ছকৃতভাবে বিড়ি- সিগারেট ও আগড় বাতি ইত্যাদির ধোঁয়া ভেতরে টেনে নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৪.الاكراه অর্থাৎ প্রাণনাশ বা অঙ্গহানির ভয় দেখিয়ে রোজাদার কে রোজা ভাঙ্গতে বাধ্য করা। ইকরা” অবস্থায় রোজা ভঙ্গকারী কোনো কারন পাওয়া গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। শুধু কাজা ওয়াজিব হবে, কাফফরা নয়।

৫. النوم নিদ্রা ।এর হুকুম হল,নিদ্রাবস্হায় রোজা ভঙ্গকারী কোনো বস্তু দেহের ভেতর প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে ।একটি প্রশ্ন ও তার জওয়াব।এখানে একটি প্রশ্ন হয় ,নিদ্রা যখন রোজা ভঙ্গের প্রতিবন্ধক নয় তাহলে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙ্গবেনা কেন? উওর ,স্বপ্নদোষ غلبة এর অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ স্বপ্নদোষ মানুষের ইখতিয়ারভূক্ত নয়, তাই এতে রোজা ভঙ্গ হবেনা।

৬.الجنون অর্থাৎ বিবেক লোপ পাওয়া ও মস্তিষ্ক বিকৃত ঘটা অথবা কোনো ব্যাধির কারনে বিবেক-বুদ্ধিতে এমন ত্রুটি দেখা দেওয়া যা বুদ্ধি -বিবেচনা সম্মত কথা বা কাজ করতে অন্তরায় সৃষ্টি করে।এঅবস্থায় রোজা ভঙ্গকারি বস্ত পাওয়া গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৮. الجهل بالتحريم অর্থাৎ রোজা ভঙ্গকারী বস্তু সম্পর্কে না জানা। এটা ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসকারীর জন্য ওজর নয়। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী রোজাদার রোজা ভঙ্গকারী বস্তু সম্পর্কে না জানা থাকা অবস্থায় রোজা ভঙ্গকারী বস্তু দেহের ভেতরে প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অবশ্য তা দারুল হরব তথা অমুসলিম রাষ্ট্রে ওজর হিসেবে গণ্য হবে।

তবে যে অমুসলিম রাষ্ট্রে অধিক সংখ্যক আলেম- উলামা এবং মুসলমান বসবাস করে এবং ব্যপক হারে দ্বিনি জ্ঞান চর্চা হয়, অনায়াসে দ্বিনী মাসালা জানা যায়, যেমন ভারত, সেখানে না জানা ওজর হিসেবে গণ্য হবেনা।

তাই সেখানে অবস্থানকারী কোনো রোজাদার রোজা ভঙ্গকারী বস্তু সম্পর্কে না জানার কারনে তা গ্রহন করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। শুধু কাজা ওয়াজিব হবে , কাফফরা নয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ