শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


রোজার আধুনিক মাসায়েল (প্রথম পর্ব)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সাদকুর রহমান।।

রোজারআধুনিক মাসায়েল সমুহ সহেজ বুঝার জন্যে ভূমিকা স্বরুপ কিছু কথা পেশ করাকে অতিবও জরুরি মনে করছি। তাই আমি মারকাযুল বুহুস আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচলক, ও প্রধান মুফতি এবং জামি”য়া ইসলামিয়া দারুল উলূম ঢাকা (মসজিদুল আকবর) এর প্রিন্সিপাল, শাইখুল হাদিস ও প্রধান মুফতি আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন এর তথ্যাবধানে রচিত “ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা ‘এর রোজা অধ্যায়ে লিখিত ভূমিকাটি বারংবার অধ্যয়ন করে পাশাপাশি ফাতাওয়ার অন্যান্য গ্রহনযোগ্য কিতাব সমূহ মুরা”জাআ করে তারই লেখিত ভূমিকাকে কিছুটা সংযোজন -বিয়োজন করে পাঠকের সমিপে পেশ করছি।

যদি তা সঠিক হয় তবে তা আল্লার পরম করুনা ও দয়া বৈকিছু নয়। আর কিছু ত্রুটি -বিচ্ছুতি হলে তা আমারই দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ মাএ। এতে কোনো ত্রুটি- বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে আমাকে জানানোর জন্য আহলে ইলমের প্রতি বিনীত আবেদন রইল।

ফুকাহায়ে কেরাম একমত পোষণ করেন, পাঁচটি বস্তু একসাথে পাওয়া গেলেই রোজা ভঙ্গ হবে‌।
১. মানবদেহের অভন্তরে রোজা ভঙ্গকারী গ্রহণযোগ্য বস্তু প্রবেশ করা
২.রোজা ভঙ্গকারি বস্তু মানবদেহের ভেতরের গ্রহনযোগ্য খালিস্হানে প্রবেশ করা।
৩.রোজা ভঙ্গকারি বস্তু গ্রহনযোগ্য রাস্তা বা ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা।
৪.রোজা ভঙ্গকারি বস্তু গ্রহনযোগ্য পদ্ধতিতে দেহের ভেতরে প্রবেশ করা।
৫.রোজা ভঙ্গের পরিপন্থী বস্তু না থাকা।

প্রত্যেকটির বিস্তারিত আলোচনা।
১.মানব দেহের অভ্যন্তরে রোজা ভঙ্গকারি গ্রহনযোগ্য বস্তু প্রবেশ করা অর্থাৎ দেহবিশিষ্ট বস্তু যেমন কোনো খাদ্য বা পানীয় ইত্যাদি প্রবেশ করা। সুতরাং বাতাস, ঠান্ডা,গরম ইত‍্যাদি প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবেনা।

২. রোজা ভঙ্গকারি বস্তু মানবদেহের ভিতরের গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে প্রবেশ করা।

বর্তমান যুগের ডাক্তারদের গবেষণার আলোকে সমকালীন মুফতিয়ানে কেরামের মতামত অনুযায়ী গ্রহনযোগ্য খালিস্থান তিনটি ১. খাদ্যনালী ২. পাকস্থলী ৩.নাড়িভুড়ী।
সুতরাং নারী -পুরুষের মূত্রথলি, নারীর বাচ্চাদানি, দেমাগ,তথা মাথার অভ্যন্তরের খালি স্হান ও কর্ণকুহরের গহবরের খালিস্থান ইত‍্যাদিতে রোজা ভঙ্গকারি বস্তু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবেনা।

৩. রোজা ভঙ্গকারি বস্তু দেহের ভেতরে গ্রহণযোগ্য রাস্তা বা ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা।

সকল ফুকাহায়ে কেরাম একমত, গ্রহণযোগ্য রাস্তা বা ছিদ ৩টি ১.মুখ ২.নাক.৩.মলদ্বার। তবে ক্ষেত্রবিশেষ এর সাথে আরো একটি যোগ হবে, আর তা হলো “পেটের ক্ষত’ যদি তা পাকস্থলী কিংবা নাড়িভুঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছে। বর্তমান যুগের ডাক্তারদের গবেষণার আলোকে সমকালীন মুফতিয়ানে কেরামের মতে কান,যৌনীদ্বার , মূত্রনালি , মাথার ক্ষত ও মাথার লোম কূপ দিয়ে রোজা ভঙ্গকারি বস্তু প্রবেশ করলে,রোজা ভঙ্গ হবেনা।

কারণ পূর্ব যুগের ডাক্তারদের ধারণা ছিল, পাকস্থলীর সাথে বাচ্চাদানির সংযোগ রয়েছে, তাই তৎকালীন ফুকহায়ে কেরাম এর বক্তব্য ছিল, যৌনিদ্বার দিয়ে কোন বস্তু প্রবেশ করলে, রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারন তা বাচ্চাদানি হয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছে যায়। এমনিভাবে তাদের ধারণা ছিল, পাকস্থলীর সাথে মূত্রথলির সরাসরি সংযোগ আছে,তারই ভিত্তিতে ফুকাহাদের বক্তব্য ছিল রোজা ভঙ্গকারি বস্তু মূত্রনালীতে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারন তা মূত্রথলি হয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছে যায়।

এমনিভাবে তাদের ধারণা ছিল, দেমাগ তথা মস্তিষ্ক থেকে খাদ্যনালীতে পৌঁছার এবং কান থেকে খাদ্যনালীতে পৌঁছার রাস্তা রয়েছে।

তাই ফুকাহাদের বক্তব্য ছিল, মাথার ক্ষত’কিংবা কানে রোজা ভঙ্গকারি বস্তু প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।কারন তা মস্তিষ্ক কিংবা কানের ছিদ্র দিয়ে খাদ্যনালীতে হয়ে পাকস্থলীতে চলে যায় যায়।

কিন্তু বর্তমান ডাক্তারদের মতামত হল পাকস্থলীর সাথে বাচ্চাদানির এবং মূত্রথলির কোনো সংযোগ নেই। এমনিভাবে খাদ্যনালীর সাথে মস্তিষ্কের কোনো সংযোগ নেই, যদি মস্তিষ্কের নিচের হাড় ভাঙ্গা না থাকে। আর ভাঙ্গা না থাকাটাই স্বাভাবিক। এমনিভাবে খাদ্যনালীর সাথে কানের কোনো যোগাযোগ নেই। তাই সমকালীন মুফতিয়ানে কেরাম এর বক্তব্য হল রোজা ভঙ্গকারি বস্তু যৌনিদ্বার, মূত্রনালী, মস্তিষ্কের ও কর্ণকুহরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবেনা।

উল্লেখ্য যে নেত্রনালী থেকে খাদ্যনালী পর্যন্ত সরাসরি সংযোগ থাকা সত্ত্বেও একাধিক হাদীস ও আছার থাকার কারনে রোজা ভঙ্গকারি বস্তু চোখে প্রবেশ করলে ও রোজা ভঙ্গ হবেনা।

তাছাড়া চোখে প্রবেশকারি বস্তু খাদ্যনালিতে হুবহু পৌঁছেনা বরং তার প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি হয়।

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন রহ.দারুল কোরআন মাদ্রাসা চৌধুরী পাড়া, ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ