সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ।। ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫


রকেট ও টর্পেডো আবিষ্কারে মুসলমানদের অবদান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চীনারা যবক্ষার থেকে বারুদ আবিষ্কার করেছিল এবং আতশবাজিতে বারুদ ব্যবহার করত। কিন্তু আরবরাই প্রথম সামরিক প্রয়োজনে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সাহায্যে বারুদ পরিশোধন করে। মির ফাতেহউল্লাহ খানকে দাবি করা হয় বন্দুক ও বারুদের আবিষ্কারক।

রকেট ও টর্পেডো আবিষ্কারে মুসলমানদের অবদানস্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার বইয়ের তথ্যমতে, ‘অ্যারাব সিভিলাইজেশন’ নামক গ্রন্থে ড. লিবন লিখেছেন, গোলা-বারুদ হলো আরবদের একটি শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার। বারুদ আবিষ্কারের আগে তারা বন্দুক ব্যবহার করছিল।

১৩৪০ সালে ফ্রাঞ্জডল আল-বাশুর অবরোধ করলে আরবরা এ শহর প্রতিরক্ষায় বন্দুক ব্যবহার করে। ‘হিস্টরি অব দ্য মুরিশ এম্পায়ার ইন স্পেন’-এর লেখক স্কট আরবদের বন্দুক ব্যবহারের সত্যতা সমর্থন করেছেন। আরবরা প্রাথমিক যুগে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং খলিফা খালিদ ইবনে ইয়াজিদও পটাশিয়াম নাইট্রেটের কথা জানতেন। তবে বিভিন্ন নামে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হতো। ধাতুর কাজকর্মে একটি ফ্লাক্স হিসেবে এবং নাইট্রিট এসিড ও একোয়া বিক্রিয়া তৈরিতে তা কাজে লাগানো হতো।

জাবির ইবনে হাইয়ান, আবু বকর আল-রাজি ও অন্যান্য আরব রসায়নবিদের রচনাবলিতে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের রেসিপি খুঁজে পাওয়া গেছে। আরবরাই প্রথম সল্টপিটারকে পরিশোধন করে অস্ত্র তৈরির মানে উন্নীত করে। ১০২৯ সালে ইবনে রখতাওয়ারের ‘আল-মুদ্দাদিমা’য় অস্ত্র উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সল্টপিটার পরিশোধন করার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ১৯৭০ সালে সিরীয় সামরিক প্রকৌশলী ও রসায়নবিদ হাসান আল রাহ তাঁর ‘আল-কুরুসিয়া ওয়া আল-মানাসিব আল-হারবিয়া’ (The Book of Military Horsemanship and ingenious war devices) বিস্ফোরক বারুদ ও বারুদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রথম পটাশিয়াম নাইট্রেট পরিশোধন করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন।

এছাড়া তিনি পটাশিয়াম নাইট্রেট থেকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সল্ট অপসারণে পটাশিয়াম কার্বোনেট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। ১২৭০-৮০ সালের মধ্যে তিনি বইটি লিখেছিলেন। বইটিতে ১০৭ প্রকারের বারুদ তৈরির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। রকেট তৈরির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ২২টি রেসিপিতে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুযায়ী বারুদ তৈরির জন্য প্রয়োজন ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ১০ শতাংশ সালফার এবং ১৫ শতাংশ কার্বন। হাসান আল-রাম্মাহর রেসিপিতে ছিল ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ৯.০৬ শতাংশ সালফার এবং ১৫.৯৪ শতাংশ কার্বন।

১২৬০ সালে মিসরীয় সেনারা তাতার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আইন জালুতের যুদ্ধে ইতিহাসে প্রথম কামান থেকে গোলা ছোড়ে। স্পেনের আল-আন্দালুসে মুসলমানরা খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একইভাবে কামান ব্যবহার করে। অগ্নি-উদগিরণকারী মুসলিম অস্ত্রগুলো ক্রুসেডারদের ভীত করে তোলে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে আরবরা রকেট ও টর্পেডো দুটিই আবিষ্কার করে। রকেটকে বলা হতো ‘তায়ার বুরাক’ বা ‘স্বয়ংক্রিয় ও জ্বলন্ত ডিম’।

আরবদের উদ্ভাবিত টর্পেডো ছিল সামনে বর্শা সজ্জিত নাশপাতির আকৃতিবিশিষ্ট একটি স্বয়ংক্রিয় বোমা। বোমাটি শক্ত জাহাজ ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গিয়ে বিস্ফোরিত হতো।

এসব মারণাস্ত্র ব্যবহারের ফল হয়েছিল বিস্ময়কর। কিন্তু মুসলমানদের দুর্ভাগ্য। এ প্রযুক্তি স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং মুসলমানদের সঙ্গে শেষ লড়াইয়ে ক্রুসেডাররা কামান ব্যবহার করে। স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছ থেকে এ প্রযুক্তি পশ্চিম ইউরোপে গিয়ে পৌঁছে।

১৩৪২-৪৫ সালে ডারবি ও সলিসবেরির আর্লগণ আল-জাজিরা অবরোধে অংশগ্রহণ করেন এবং তারা গোলাবারুদ ও কামান তৈরির রহস্য ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। তার মাত্র দু-এক বছর পর ১৩৪৬ সালে পশ্চিম ইউরোপে কিসির যুদ্ধে ফরাসিদের বিরুদ্ধে ইংরেজরা কামান ব্যবহার করে।

এভাবে আস্তে আস্তে মুসলমানদের সামরিক প্রযুক্তির রহস্যগুলো হস্তান্তর হয়ে যায়।

তথ্যঋণ : স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার

-এসআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ