শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


দুনিয়া আমরা যে উদ্দেশ্যে হাসিল করবো: হজরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রা.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের

হজরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,يا حبَّذا المال؛ أصون به عرضي، وأرضي به ربِّي মাল কতোই না উত্তম! যদি আমি তা দ্বারা আমার ইজ্জত-আব্রকে হেফাজত করতে পারি। এবং তা দ্বারা আমার আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করাতে পারি।

লেখক বলেন, হ্যাঁ, এই নেক উদ্দেশ্যে মাল জমা করতে শরীয়ত নিষেধ করেনি। শরীয়ত এমন মাল জমা করতে নিষেধ করেছে, যে মালের হক আদায় করা হয় না। যেমন মালের জাকাত আদায় করা হয় না। সদকাহ আদায় করা হয় না। মেহমানদারী করা হয় না। আত্মীয়তার হক আদায় করা হয় না। অসহায়-দরিদ্রদেরকে সহয়তা করা হয় না। বা দুনিয়া উপার্জনের জন্যে যে মালের সাথে শরীয়তের সীমার বাইরে সম্পর্ক করা হয়েছে। যেমন, হারাম অর্থ উপার্জনের জন্যে মালকে ব্যবহার করা হয়েছে।

লেখক বলেন, অনেক দুনিয়াবিমূখ বুযুর্গদের থেকে সবধরনের মালের নিন্দার কথা বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত অবস্থায় ভিত্তিতে বলা। শরীয়ত সব ধরনের মালকে নিন্দা হিসাবে উল্লেখ করেনি। শরীয়ত যা বলে সেটি হলো, ‘যদি কেউ মাল জমা করে। শুধুই জমা করে। এই মাল জমা করার কারণে সে আল্লাহ তায়ালার বিধি-নিষেধ পালনে ত্রুটি করে, বান্দার হকের ব্যাপারে ত্রুটি করে, বা এই মাল জমা করতে গিয়ে দুনিয়ার দিকে একেবারে ঝুঁকে পড়ে, দুনিয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে এই ধরনের মাল জমা করা নিষেধ এবং দোষণীয়।’
আর শরীয়ত যে ধরনের মাল জমা করতে নিষেধ করেনি, সেটি হলো, ‘যদি কেউ ভালো ও নেকের উদ্দেশ্যে মাল জমা করে। আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় দান করার জন্যে জমা করে। আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যে জমা করে। অভাবীদেরকে সহযোগিতা করার জন্যে জমা করে।

মাল জমা করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালার বিধি-নিষেধ পালনে কোনো প্রকার ত্রুটি না করে। মালের হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করে। সদকাহ-জাকাত আদায় করে। তাহলে নিঃসন্দেহে এই নিয়তে মাল জমা করা নিষেধ নয়। নয় দোষের কিছু। বরং পবিত্র কুরআনুল কারীম ও হাদিস শরিফে এই ধরনের নিয়তে মাল জমা করতে আরো উৎসাহ দিয়েছে।

লেখক বলেন, যদি সাহাবায়ে কেরামগণের জীবনী এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাঁদের ওঠাবসা পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে এখানে যা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই বিষয়টি ফুটে আসবে।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যুদ্ধের জন্যে তাঁরাই মাল দান করেছেন। রোমার কূপ তাঁরাই খনন করেছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনা মুনাওয়ারাতে হিজরত করেন, তখন মালী প্রস্তুতি তাঁরাই করেন। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খাতিরে তাঁরাই নিজেদের অর্থ খরচ করেছেন। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের যে দাওয়াতী কাজ চলছে, এর পিছনেও মুসলমান ব্যবসায়ীদের অর্থই হলো মূল পুঁজি। জিহাদ পরিচালনা, মুজাহিদদের সহযোগিতাসহ আরো যতো ধরনের দীনি কাজ চলছে, এগুলো চলার পিছনে মুসলমান ব্যবসায়ীদের অর্থ-কড়িই কিন্তু মূল চালিকা শক্তি, যা অগ্রগামী ভূমিকা হিসাবে কাজ করে চলছে।

লেখক বলেন, আমার যে বিষয়ে দুঃখ ও আফসোস, সেটি হলো, এমন অনেক মানুষ আছে, যারা মাল জমা করাকে ব্যাপক অর্থে নিন্দা মনে করেন।

যারা মাল জমা করে, তাদেরকে নেক মানুষদের কাতার থেকে বের করে দেন। তাদেরকে পরহেজগার মনে করা তো অনেক দূরের কথা। বরং তারা দলমত নির্বিশেষে মাল জমাকারীকে এক কথায় দুনিয়াদার বলে মন্তব্য করে বসেন। তাদের এমন অবিচার মূলক মন্তব্যের কারণে আমার কষ্ট হয়। দুঃখ লাগে। ব্যথিত হই।

কারণ, অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া যদি কেউ সৎ উদ্দেশ্যে মাল জমা করে, তাহলে তো সে প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। প্রশংসার উপযুক্ত মহৎ মানুষ তিনি। কিন্তু এমন মহান মানুষদের নেক উদ্দেশ্যে মাল জমা করা দেখে যারা নির্বিচারে দুনিয়ারদার বলে মন্তব্য করেন- আমি তাদের এমন অবিচারমূলক অন্যায় মন্তব্যের কারণে দুঃখ প্রকাশ করছি। সেই সাথে হৃদয়ের গভির থেকে আফসোসও ব্যক্ত করছি।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ