শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


বড়দের জন্য তাবলিগ, ছোটদের জন্য নুরানী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা ইসমাইল বেলায়েত হুসাইন।।

জীবনের নানা কারণে সঠিক সময়ে অনেকেই দ্বীনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেন না। বুঝেন না দীন-ইসলামের মহান বাণী। মনের খেয়াল-খুশি মতো জীবন পরিচালনা করেন। এমনসব মানুষকে দ্বীনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম দাওয়াত ও তাবলিগ। কেননা তারা ছোটবেলায় নুরানীতে গিয়ে দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারেননি। আল্লাহর রঙে শৈশবকে রাঙাতে পারেননি।

‘কালেমা, নামাজ, রোজা, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, সহি নিয়ত ও দাওয়াতে তাবলিগ’- এ ছয়টি উসূল বা মূলনীতিকে সামনে রেখে তাবলিগ জামাত বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গ্রাম-গঞ্জ, শহরে-বন্দর, পাড়া-মহল্লায় সারা বছর ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। ইসলাম প্রচারের কাজে তারা একদিকে নিজেকে পরিশুদ্ধ ও উন্নত করার জন্য, অন্যদিকে যারা বেখেয়াল তাদের ধর্মের প্রতি আহ্বান করতে মেহনত করে।

একদিন, তিনদিন, সাতদিন, চল্লিশ দিন কিংবা সারা জীবনের জন্য, যার যেমন ইচ্ছা তাবলিগ জামাতে শামিল হয়ে আল্লাহর পথে বেরিয়ে পড়েন আল্লাহপ্রেমীগণ। কাফেলা বেঁধে মসজিদ থেকে মসজিদে সফর করেন। লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবিনয়ে আল্লাহর পথে উদাত্ত আহ্বান জানান। নামাজ কায়েমের কথা বলেন, আল্লাহর প্রেমের কথা বলেন এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলেন।

শুধু উপমহাদেশেই নয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ প্রায় প্রত্যেক মহাদেশেই তাবলিগের দীনি দাওয়াতের কার্যক্রম মুসলমানদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করে চলছে। বিশ্বব্যাপী তাবলিগ জামাতের দীনি কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও বিশ্ববরেণ্য অনেক আলেম-উলামা, ইসলামী ধর্মবেত্তা বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হয়ে ইসলামের চিরশাশ্বত মর্মবাণী বয়ান করছেন এবং আল্লাহর পথে পরিচালিত হয়ে মানুষকে আদর্শ সমাজ গঠনের আহ্বান জানাচ্ছেন।

দাওয়াত ও তাবলিগের লক্ষ্য হচ্ছে ‘ঈমানি আন্দোলন’। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ প্রদত্ত জীবন, সম্পদ এবং সময় আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে জীবনের সঠিক শিক্ষা অর্জন করা। স্রষ্টাভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করে দেওয়ার জন্য মেহনত করা। মানুষকে আল্লাহর প্রেমে জুড়ে দেয়া। মানুষ যখন আল্লাহর প্রেমে জুড়ে যায়, তখন তার ইমান মজবুত হয়। আর মজবুত ইমানদার ব্যক্তি কখনো অন্যের অধিকার নষ্ট করতে পারে না, খাদ্যে ভেজাল দিতে পারে না, সমাজে দুর্নীতি করতে পারে না।

আল্লাহর ভালবাসা তাকে মোমের মতো গলিয়ে দেয়া। নিজের অস্তিত্বের সর্বস্ব ভুলে লুটিয়ে পড়ে সিজদায়। দম্ভ আর অহমিকা মুছে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে হৃদয়ে। ভালো ও মন্দের মধ্যে প্রভেদ করতে শেখে। নফসের গোলামির শৃংখল ছিন্ন করে এক আল্লাহর দাসত্বকে মেনে নেয় আর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শ অনুসরণে জীবন গঠন করে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। যেভাবে আদর্শ নাগরিক ও সচেতন মানুষ গড়ার লক্ষ্যে শিশুদের নিয়ে কাজ করছে নুরানী তালিমুল কোরআন বোর্ড।

তাবলিগের অন্যতম একটি অধ্যায় হলো বয়স্ক মানুষের মাঝে দীনি মেজাজ তৈরি করা। আর নুরানীর অন্যতম একটি লক্ষ হলো শিশুদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। বড়দের মাঝে তাবলিগ আর ছোটদের মাঝে নুরানীর শিক্ষাকে যদি ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে আমার বিশ্বাস একটি সফল সমাজ গঠন সম্ভব।

লেখক: পরিচালক, নুরানী তালিমুল কোরআন বোর্ড বাংলাদেশ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ