শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


ইজতেমার প্রভাব গোটা বিশ্বময়: মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দীর্ঘ দুই বছর পর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ জমায়েত ঐতিহাসিক বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমা উপলক্ষে আওয়ার ইসলাম কর্তৃক প্রকাশিত হচ্ছে ‘ইজতেমা প্রতিদিন’। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ।। জামিল আহমদ ।। 

দাওয়াত ও তাবলিগের সাথে আমরা বোধশক্তি হওয়ার পর থেকেই উৎপ্রোতভাবে জড়িত আছি। এটা আমাদের দীনের অন্যতম একটা কাজ। আর দাওয়াত দীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অতএব দাওয়াতী কাজে জড়িত থাকা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করে যুক্ত থাকি।

আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার দরবারে লাখো কোটি শোকরিয়া আদায় করি। এই মেহনত যখন থেকেই শুরু হয়েছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত এর প্রভাব আমাদের কাছে দিনের আলোর মতো পরিস্কার। লাখো লাখো বিধর্মীর মুসলমান হয়ে দীনের পথে ফিরে আসা এর প্রভাব। অনেক অনেক বেনামাজীর নামাজী হওয়া এই মেহনতের প্রভাব। অনেক আর্দশচ্যুত মানুষ আর্দশে ফিরে আসার এই মেহনতের প্রভাব। অনেক নামের মুসলমনরাও এই মেহনতের বরকতে দীনের পথে ফিরে আবার দীনের কাজে ফিরেছেন।

এই মেহনত যত বেশি শক্তিশালী হবে দুনিয়াতে তত বেশি ইসলামের প্রচার প্রসার বৃদ্ধি পাবে। ইসলামের সৌন্দের্য্য সবার কাছেই পৌছবে। এর দ্বারা আরো অনেকেই মুসলমান হবেন। দীনের পথে ফিরে আসবেন। আমি একজন মুসলমান আলেম হিসেবে তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমাকে অত্যান্ত ইতিবাচকভাবেই বিশ্লেষণ করি। এই ইজতেমার প্রভাব গোটা দুনিয়াতে রয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমা আসলেই ভিন্ন এক অনুভূতি কাজ করে। দেশের সবারই কাজেই এই ইজতেমা একটা ভিন্ন আমেজ তৈরী করে। আর আমাদের ধর্মের প্রতি অনুরাগের কারণেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লাখো লাখো মানুষ ইজতেমায় আসেন। বৈশ্বিক মহামারী মরণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিগত দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর কারণেই এবারের ইজতেমায় মুসল্লীদের উপস্থিতি আগের যেকোন সময়ের চেয়েও বেশি হবে। ইনশাআল্লাহ। এই ইজতেমায় দেশে-বিদেশে মেহমানদের আলোচনা শুনে আমাদের ঈমানী খোরাক দিতে সক্ষম হবে। এবারের ইজতেমা থাকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জামায়াত বের হবে বলে আমি বিশ্বা করি। আর বেশি জামাত বের হলে দাওয়াতের কাজ আরো বেশি বেগবান হবে।

পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমি বলব, যেভাবে দাওয়াত দিলে শ্রোতা অন্তরে কথাগুলো যেন রেখাপাত করে সেভাবেই দাওয়াত দেওয়া। মার্জিত ভাষায়, সুমধর সুওে ভাব-ভঙ্গিমা যেন শ্রোতাকে আকৃষ্ট করার একটা চেষ্টা থাকে। এবং দাওয়াতের কাজ শুরুর আগে দায়ী যেন আল্লাহতায়ালার নিকট ফরিয়াদ করে যে, আল্লাহ আমার তো কোন যোগ্যতা নাই। আমার ভাষার তো কোন যাদু নাই। মাওলা তুমি তোমার বান্দার অন্তরে দীনের দরদ তৈরী করে দাও। এবং আমি যেভাবে বুঝালে সে বুঝবে সেভাবে বুঝানোর তাওফিক দান করো।

একজান দায়ীর যেসব গুণাবলী থাকা জরুরী তার মধ্যে অন্যতম হলো- ইখলাস। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য থাকা। জান এবং মালের কোরবানী পেশ করার মানুষিকতা থাকা। সময়ের কোরবানী দেওয়া। দাওয়াতের ক্ষেত্রে দীনের দরদের মনোভাব থাকা। রাগ, ক্ষোভ পরিত্যাগ করে ধৈর্য্যে পারাকাষ্টা প্রদর্শন করা। সবরে তা’আম্মুলের গুণবালী যা আম্বিয়ায়ে কেরামগণের বৈশিষ্ট্য, সাহাবায়েকেরামের বৈশিষ্ট্য ছিল, আমাদের বুযুর্গানে দীনের বৈশিষ্ট্য ছিল। সেই সবরে তা’আম্মুলের সাথে ধৈর্য্যেকে সাথে নিয়ে ইখলাসের সাথে দরদী মনোভাব নিয়ে দায়ী মেহনত করলে অবশ্যই এ মেহনত বিফলে যাবে না। আল্লাহতায়ালা সফলতা দান করবেন। ইনশাআল্লাহ।

তাবলিগের জোর মিল মহব্বত ফিরিয়ে আনতে আমাদের সকলেরই আন্তরিক হওয়া দরকার। মৌলিক জায়গাতে কোন আপোষ করার সুযোগ নাই। মৌলিকতা বজায় রাখতে হবে। ঈমান আকিদার জায়গাগুলোতে ছাড় দিয়ে মিল মহব্বত ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বা দৃষ্টিভঙ্গিকে আমি পরিপূর্ণরূপে প্রত্যাখান করি।

মিল মহব্বত আমাদের একটা সৌন্দর্য্য। এবং দীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরী জিনিষ। কিন্তু মিল মহব্বত ফিরিয়ে আনার আন্তরিকতা যেমন জরুরী তেমনি মিল মহব্বত ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের ঈমান ও আকিদার মৌলিকতা অক্ষত রাখাও জরুরী। মৌলিকতা ঠিক রেখে মিল মহব্বত ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ ত্যাগ এবং ছাড় দিতে আমাদের সকলের আন্তরিক হওয়া উচিত।

লেখক: মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলাবাগ, মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

-এটি


সম্পর্কিত খবর