রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


শোকে কাতর ২০২২: যে আলেমদের হারালাম আমরা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মহাকালের অমোঘ নিয়মে বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে ২০২২ সালের। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি কেউ কেউ নতুন বছরের পরিকল্পনাও সাজাতে বসে গেছেন। আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশার ভেলায় চড়ে সবাই ২০২২ সালকে বিদায় জানানো প্রস্তুতির মাঝে মনে উঁকি দিচ্ছে নতুন ২০২৩ কে নিয়ে নানা স্বপ্ন।

অনেক স্বপ্ন, অর্জনের পাশাপাশি ২০২২ আমাদের দিয়েছে কিছু হারানোর ক্ষত। এ বছর বেশ কয়েকজন আলেম পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। যাদের মাধ্যমে মানুষ পেয়েছে সত্য সুন্দরের শিক্ষা। আলোকিত হয়েছে আত্মভোলা মানুষ। আসুন জেনে নেই তাদের সম্পর্কে।

খতিব মাওলানা সালাহউদ্দিন রহ.
২০২২ সালের শুরুতেই ইন্তেকাল করেন বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে মাওলানা সালাহউদ্দিনকে নিয়োগ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে কয়েক বছর তিনি নামাজ পড়াতে পারননি জাতীয় মসজিদে।

মাওলানা মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের হাজরাদী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ঢাকা আলিয়া মাদরাসার ৪৪তম অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি রাজধানীর মহাখালীর গাউসুল আজম মসজিদের খতিবের দায়িত্বও পালন করেছেন।

মাওলানা মুস্তাফিজ রহ.
১৯ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন ময়মনসিংহের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ময়মনসিংহের জামিয়া ইসলামিয়ার সাবেক মুহাদ্দিস, ময়মনসিংহ গাঙ্গিনাপার মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং সোহাগীর জামিয়া দারুস সালাম মাদরাসার সাবেক মুহতামিম ছিলেন।

আবদুল বারী ধর্মপুরী রহ.
৬ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন মৌলভীবাজার জেলার আলেমদের শীর্ষ মুরুব্বি, জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল বারী ধর্মপুরী। মৃত্যুর সময় তিনি মৃত্যুকালে তিনি ৮ মেয়ে ও ৩ ছেলে রেখে গেছেন।

মুফতী আবদুল হালিম বোখারী রহ.
দেশের শীর্ষ আলেম ও চট্টগ্রামের আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বোখারী ইন্তেকাল করেন ২১ জুন (মঙ্গলবার)। চট্টগ্রাম শহরের সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।

শ্বাস কষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব ছিলেন।

এছাড়াও তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ সুপারভাইজারি কমিটির সভাপতি, ইসলামি সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি এবং জামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক ছিলেন।

২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদানের নিমিত্তে আল হাইআতুল উলয়া গঠিত হলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

মুফতি আবদুল হালিম বোখারী ছিলেন দেশের একজন প্রথিতযশা আলেমে দ্বীন ছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষার উভয় ধারায় তিনি সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেন। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায়ও তিনি ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন। ইলমে হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রের উপর তিনি গভীর জ্ঞান রাখতেন এবং যুগ সমস্যার উপযোগী সমাধান দিতে পারতেন। তিনি দেশের আলেমদের উল্লেখযোগ্য অংশের দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আল্লামা মুফতি আব্দুল হালিম বুখারী ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার রাজঘাটা (তৎকালীন সাতকানিয়ার অন্তর্গত) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল গণী বুখারী। তার পরদাদা সৈয়দ আহমদ বুখারী উজবেকিস্তানের বোখারার বাসিন্দা ছিলেন।

শায়েখ হাফিযুল্লাহ রহ.
৯ জুলাই ইন্তেকাল করেন নরসিংদীর জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া মির্জানগর মাদরাসার মুহতামিম, শত শত হাফেজে কুরআন গড়ার কারিগর শায়েখ হাফিযুল্লাহ।

মাওলানা ফজলুর রহমান রহ.
২৭ জুলাই ইন্তেকাল করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ইমাম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বদিকোনা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ফজলুর রহমান। তিনি ছিলেন খেলাফত মজলিস কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক সভাপতি। এছাড়াও তিনি পাড়ুয়া ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার সভাপতি ছিলেন।

মাওলানা মো. ফখরুদ্দীন রহ.
২৪ আগস্ট ইন্তেকাল করেন মানিকগঞ্জের বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন মাওলানা মো. ফখরুদ্দীন। তিনি তার জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় ঘিওর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব ছিলেন। এ ছাড়া কুস্তা জামেয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা, হিজুলিয়া হিলফুল ফুজুল মাদ্রাসা ও ঘিওর উম্মে সালমা মহিলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

মাওলানা সামছুল হক কাদিরপুরী রহ.
২৬ আগস্ট ইন্তেকাল করেন নোয়াখালী পন্ডিতপুর দারুল উলূম ছিদ্দিকিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার অন্তর্গত দারুল উলুম আল-হোসাইনিয়া ওলামা বাজার মাদরাসার সাবেক শিক্ষক, মাওলানা সামছুল হক কাদিরপুরী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর। ব্যক্তিজীবনে ৬ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক ছিলেন মাওলানা কাদিরপুরী।

মুফতী ইবরাহীম খান রহ.
৬ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন চট্টগ্রাম মেখল হামিউচ্ছুন্নাহ মাদরাসার প্রধান মুফতী, মুফতিয়ে আজম ফয়জুল্লাহ রহ.-এর একান্ত শিষ্য মুফতী ইবরাহীম খান। তিনি ছিলেন একজন প্রবীণ আলেম। যিনি মাসলাকে মেখলের অন্যতম ধারক বাহক ছিলেন। সুন্নাহভিত্তিক জীবন যাপন করা এবং বিদআতের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদা তৎপর। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মাওলানা তাজুল ইসলাম রহ.
১১ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন টেকনাফের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইমদাদিয়া লেঙ্গুরবিল বড় মাদ্রাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা তাজুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর । তিনি ২ ছেলে, ৬ মেয়ে রেখে গেছেন । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টেকনাফের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইমদাদিয়া লেঙ্গুরবিল বড় মাদ্রাসাসহ প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ মাদ্রাসার খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন ৷

মাওলানা নোমান হাবিবী রহ.
১১ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইউনুসিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস, খ্যতিমান ওয়ায়েজ ও আরবি ভাষাবিদ মাওলানা নোমান হাবিবী। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছে ৫২ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে দুই মেয়ে রেখে যান।

মুফতি সাদেকুর রহমান রহ.
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদরাসার প্রধান মুফতি মাওলানা সাদেকুর রহমান ইন্তেকাল করেন ১২ নভেম্বর।

তিনি ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সাদিকুল ইসলাম তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। শান্ত সুবোধ সাদিকুল ইসলাম ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেন। তার বাবার নাম কারী আব্দুল আলী।

মুফতি সাদেকুর রহমানের শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় স্কুল থেকে। তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া ইউনুছিয়া, মিফতাহুল উলুম, ঢাকার লালবাগ এবং উম্মুল মাদারিস খ্যাত ‘মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’ তে পড়াশোনা করেন।

ইসলামী ফিকাহ ওপর গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য তৎকালীন পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচি ভর্তি হন। সেখানে এ বিষয়ে পিএইচডি করেন।পরবর্তীতে দেশের মাটিতে ফিরে যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় ইফতা বিভাগ চালু কারেন।

মুফতি নুরুল আমিন রহ.
কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব ও রাজধানীর জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার (ফরিদাবাদ মাদরাসা) শাইখুল হাদিস, মাওলানা মুফতি নূরুল আমীন ইন্তেকাল করেন ১২ নভেম্বর (শনিবার)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

হাজী সাহেব হুজুর রহ.
২২ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ১২.২০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার গেন্ডারিয়াস্থ আসগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার সদরে শুরা ও শায়খুল হাদিস মাওলানা হাজী হাবীবুর রহমান। মাদরাসায় তিনি হাজী সাহেব হুজুর বলে খ্যাত ছিলেন। লালবাগ মাদরাসায় তার শিক্ষকতার বয়স অর্ধ শতাব্দী।

আত্মীয়তার সম্পর্কে তিনি ছিলেন হযরত হাফিজ্জী হুজুর রহ-এর নাতনি-জামাই। তার তিন সন্তান এবং এক মেয়ে।

মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন রহ.
মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন ইন্তেকাল করেন ২৮ নভেম্বর। তিনি ছিলেন তাবলীগ জামাতের কাকরাইল শুরার প্রবীণ মুরুব্বী । রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ