শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্তির উপায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাইফুল্লাহ বিন কাসিম।।

মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সৃষ্টি করে তার মাঝে ভালো কাজ ও মন্দ কাজ উভয়টি করার শক্তি ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। যে ভালো কাজ করবে সে দুনিয়াতে আনন্দ ও প্রশান্তিময় জীবন লাভ করবে। আর পরকালে তো তার জন্য রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত ও অনাবিল সুখ- শান্তির স্থান জান্নাত। পক্ষান্তরে যে দুনিয়াতে মন্দ কাজ করবে তার দুনিয়ার জীবন হয়ে যাবে বিষাদময়, দুঃখ ও দুর্দশাগ্রস্ত। মোটকথা দুনিয়া তার জন্য জাহান্নাম হয়ে যায়। আর পরকালে তো রয়েছে তার জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি ও আযাব।

চিন্তা ও পেরেশানি গ্রস্ত হওয়া,পার্থিব জীবনে অর্থের অপ্রতুলতা,সন্তান-সন্ততি অবাধ্য হওয়া,পারিবারিক জীবনে ঝগড়া ফাসাদ লেগেই থাকা। মোটকথা সর্বদা অশান্তি অস্থিরতার সুপ্ত অনলে জ্বলতে থাকা।এর একমাত্র কারণ হলো, মহান আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের নাফরমানি ও অবাধ্যতা।

অতএব এ সকল সমস্যা থেকে পরিত্রান ও মুক্তি পাওয়া, আনন্দ ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন লাভ করার একমাত্র উপায় হল;সকল পাপ ও মন্দ কাজ থেকে ফিরে এসে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে খালেস দিলে তওবা ও ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি মনোনিবেশ করা।

একবার বিশ্ব বরেণ্য তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. এর কাছে এক ব্যক্তি জানালো 'আমার ফসলে খরা লেগেছে, আমাকে কিছু আমল বলে দিন' হাসান বসরী রহ:তাকে বললেন বেশি বেশি ইস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর অপর এক ব্যক্তি এসে শেকায়েত (অভিযোগ) করল 'আমি গরীব,আমাকে রিযিক বৃদ্ধির আমল বলে দিন; হাসান বসরী রহ. তাকেও বলেলন বেশি বেশি ইস্তেগফার করো।

এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান লাভের আমল জানতে চাইলে তিনি বললেন, বেশি বেশি ইস্তেগফার করো। উপস্থিত তার ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল হুজুর! আপনি সকলকে একই পরামর্শ দিলেন তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বললেন। “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলিনি। বরং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এমনটিই শিখিয়েছেন। অতঃপর তিনি সুরা নূহ এর নিম্মোক্ত আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। (ক্ষমাপ্রার্থনা করলে) তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদেরকে তিনি ধনসম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন। তোমাদের জন্যে তিনি বিভিন্ন রকমের বাগান ও অনেক নদ-নদী সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা নূহ-১০-১২)

অপর এক আয়াতে ইরশাদ করেন আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তারই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।(সুরা হুদ-৩)

উল্লেখিত আয়াত সমূহে মহান আল্লাহ তাআলা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সকল প্রকার অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে ইস্তেগফার কে উল্লেখ করেছেন।

এমনিভাবে নবীজি সা: ও হাদীসে পাকে দুঃখ-দুর্দশা, চিন্তা- পেরেশানি, অভাব-অনটন দূর করার পথ ও পন্থা ইস্তেগফারকে উল্লেখ করেছেন। নিজেও উম্মাতকে আমলের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন।

রাসূল সা: ইরশাদ করেন।আল্লাহর শপথ!আমি তো তাঁর কাছে দৈনিক সত্তর বারের অধিক তওবা-ইস্তেগফার করি। (সহীহ বুখারী, ৬৩০৭)
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন।যে ব্যক্তি ইস্তেগফার কে নিজের উপর আবশ্যক করে নেয়, আল্লাহ তাআলা আপন দয়া ও অনুগ্রহে তাকে সকল সংকটময় অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন। তার সকল চিন্তা পেরেশানী দূর করে দিবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।(আবু দাউদ : ১৫১৮, ইবনে মাজাহ : ৩৮১৯, মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৪০, বাইহাকী:৩/৩৫১)

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাউযি রহ. তার কাল জয়ী গ্রন্থ আলওবেলুচ চাইয়িব এর ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেন। ইস্তেগফার জিকিরের অন্তর্ভুক্ত, তার ওসিলায় রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। চিন্তা পেরেশানি ও দুঃখ-দুর্দশা দূর করা হয়।

হাদিস শরীফে ইস্তেগফার বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তবে ইস্তেগফারের সবচেয়ে ছোট এবং মুখে পড়তে সহজ শব্দ হলো আস্তাগফিরুল্লাহ। অর্থ:হে আল্লাহ!আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ।

তাই আসুন! আমরা সর্বদা স্বীয় কৃত কর্মের উপর তাওবা ও ইস্তেগফার করি। রাব্বে কারীমের দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি মনোনিবেশ করি। চিন্তা পেরেশানি মুক্ত সুখী সমৃদ্ধ জীবন লাভ করি।

আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে বিষয়টি বুঝে, বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: গবেষক, মোহাদ্দেস, আল মাদরাসাতুল আজিজিয়া দারুল উলুম আল ইসলামিয়া, দৌলতখান, ভোলা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ