বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

কোম্পানীগঞ্জে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ইমামকে রাজকীয় বিদায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা
সিলেট গোয়াইনঘাট>

মসজিদের ইমাম নিয়োগ, মসজিদ কমিটি বা নেতৃত্ব নিয়ে চারিদিকে যখন বিরোধ এবং হানাহানির খবর, তখন ইমামের বিদায়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রহমতনগর গ্রামের (কালীবাড়ী) জামে মাসজিদের মুসল্লিরা। মসজিদ কমিটি, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, আলেম-উলামাসহ সর্বস্তরের মুসল্লিদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিরল সম্মানের সাথে বিদায় নিলেন ইমাম ও খতিব হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী।

মসজদি কমিটি এবং গ্রামের মানুষেরা ইমামকে বিদায় দিতে না চাইলেও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে তিনি বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু বিদায় বেদনার হলেও এলাকাবাসী তা বহু কষ্টে মেনে নিয়ে তাঁর সম্মানে গতকাল সোমবার মসজিদ প্রাঙ্গণে আয়োজন করেন এক ‘বিদায়ী সংবর্ধনার’। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্বে থাকা ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী-কে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায়ী ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

এ সময় মসজিদ কমিটির দায়িত্বশীলসহ, এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বি এবং প্রবীণ আলেমরা তাদের বক্তব্যে ইমামের নানা স্মৃতিচারণ করে কাঁদলেন। বিদায়ী অনুষ্ঠানে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে মসজিদ প্রাঙ্গণ ছিল ভরপুর। কিশোর, আলেম, ছাত্র-শিক্ষকসহ গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এসময় ইমামের হাতে প্রায় নগদ অর্ধ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয়।

এছাড়াও অনেক মুসল্লিরা নানা উপহার সামগ্রী ইমামের হাতে তুলে দেন। এসময় প্রিয় ইমামকে জড়িয়ে গ্রামবাসিরা দোয়া চাইলেন, কাঁদলেন এবং বিদায়ী ইমামও কাঁদলেন। মসজিদ কমিটির দায়িত্বশীলরা বলেন- ইমাম মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী একজন সাদা মনের মানুষ। একই কর্মস্থলে এত বছর তিনি ইমামতি করছেন অথচ কারো সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়নি। এজন্য চাকরি বদল করারও দরকার হয়নি।

তিনি স্বেচ্ছায় ইমামতি ও খতিবের পদ ছাড়তে চাইলেও গ্রামবাসী তাকে এতদিন ছাড়েননি। ইমাম সাহেব আমাদের সবার সঙ্গে মিলে মিশে ছিলেন। গ্রামবাসী তার পরামর্শ নিয়ে কাজকর্ম করতেন। তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবকের মতো। তাই তাকে বিদায় বেলায় এভাবে সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী ২০০৭ সাল থেকে এই গ্রামের মসজিদে ইমামতি ও খতিবের দায়িত্ব পালন শুরু
করেন। পাশাপাশি এলাকার কলাবাড়ী মাদরাসায় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গোলকপুর গ্রামে।

বিদায়ী ইমাম মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন কলাবাড়ী মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি কলাবাড়ী জামে মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। দিনে দিনে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যাগুলো বাড়ছে। তাই আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। এলাকাবাসী বিদায়-মুহূর্তে আমার প্রতি যে সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

একজন মসজিদের ইমামকে বিদায়কালে বড় অংকের অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে এতো সম্মান মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমি মনে করি এ সম্মান শুধু আমাকে দেওয়া হয়নি, বরং গোটা ইমাম সমাজকে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত অর্থেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষ আলেমপ্রিয় ও দ্বীন-দরদী। এলাকার মুরব্বিয়ান, যুবসমাজে ও মা- বোনসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিক ভালোবাসার স্মৃতি আজীন আমার স্মরণ থাকবে। আশা করি দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় চলার পথের ভুলত্রুটিগুলো সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ