রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


মধ্যযুগের চিকিৎসাবিজ্ঞানের রাজপুত্র ইবনে সিনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইবনে সিনা, পশ্চিমা বিশ্বের কাছে আবিসিনা নামে যিনি পরিচিত। তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্য প্রায়ই তাঁকে গ্রিক চিকিৎসাবিদ গ্যালনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। ইবনে সিনাকে বলা হয়ে থাকে ইসলামের গ্যালেন।

দর্শনশাস্ত্র ও চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮০ সালে ইউনেসকোর সব সদস্যরাষ্ট্র মিলে ইবনে সিনার জন্মের হাজার বছর পূর্তি উদযাপন করে।

ইবনে সিনা আফশানায় জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানকালের উজবেকিস্তানে অবস্থিত। একুশ বছর বয়সে তিনি পারস্যে পাড়ি জমান এবং জীবনের বাকিটা সময় পারস্যের বিভিন্ন শহরে কাটান। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বিখ্যাত দার্শনিক ও চিকিৎসক।

তিনি বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায় বা বিষয়েই কলম ধরেছেন। তবে তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল দর্শন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান। আধুনিককালের ইতিহাসবিদদের মতে, চিকিৎসকের চেয়ে দার্শনিক পরিচয়টিই ইবনে সিনার জন্য যথোপযুক্ত। আবার বাকিদের মতে তিনি হলেন মধ্যযুগের চিকিৎসাবিজ্ঞানের রাজপুত্র। ইবনে সিনার কাজ বা লেখালেখির বেশির ভাগই চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর।

এ বিষয়ে তিনি প্রায় ৪৩টি বই লিখেছেন। এ ছাড়া দর্শনশাস্ত্রের ওপর ২৪টি, পদার্থবিদ্যার ওপর ২৬টি, ধর্মতত্ত্বের ওপর ৩১টি, মনোবিজ্ঞানের ওপর ২৩টি, গণিতের ওপর ১৫টি, যুক্তিবিদ্যার ওপর ২২টি এবং পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাবিষয়ক পাঁচটি বই লিখেছেন।

শুধু এগুলোই নয়, তিনি সন্ন্যাস, প্রেম ও সংগীতের ওপরও বই রচনা করেছেন। ইবনে সিনা বেশ কিছু গল্পও লিখেছেন। তাঁর রচিত ‘আল কানুন ফিত-তিব’ বা ‘চিকিৎসাশাস্ত্রের নিয়ম-কানুন’ গ্রন্থটি বিবেচনা করা হয় ইবনে সিনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে।

ইংরেজিতে এই বইটি ক্যানন নামে সমোধিক পরিচিত। আরবি ভাষায় এবং আজ পর্যন্ত রচিত চিকিৎসাশাস্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় বই বলে মনে করা হয় ক্যাননকে। কারণ ইবনে সিনা আদিকাল থেকে শুরু করে তাঁর সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত সব সভ্যতার লব্ধ চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্ব প্রকার জ্ঞান এসে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

১২ শতকের দিকে ক্যাননের বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ আরো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পর্যালোচনামূলক বিভিন্ন বই লেখা হতে থাকে। এর মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংক্ষিপ্ত রূপ বলা যেতে পারে সিরিয়ার ইবনে আল নাফিসের লেখা ‘দ্য কনসাইস বুক অব মেডিসিন’। আন-নাফিস ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

ক্যানন মূলত পাঁচটি খণ্ড বা বিষয়ের সম্মিলন। প্রথম খণ্ডটি চিকিৎসাশাস্ত্রের সাধারণ নিয়মনীতি বিষয়ক, দ্বিতীয়টি ঔষধবিজ্ঞান বিষয়ক, তৃতীয়টি শরীরের বিভিন্ন অংশের নির্দিষ্ট রোগবিষয়ক, চতুর্থটি যেসব রোগ শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তার বিষয়ে এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন আঘাতবিষয়ক; যেমন—ফ্র্যাকচার বা অস্থির সরে যাওয়া বিষয়ক, পঞ্চম খণ্ডটি সব রোগের চিকিৎসা বা সমাধানবিষয়ক।

চতুর্থ খণ্ডটিতে রয়েছে দুটি অধ্যায়—প্রথমটি হলো ‘ফ্র্যাকচার বা অস্থির ফাটলের সম্মিলিত ব্যাখ্যা’ আর অন্যটি ‘প্রতিটি অস্থির ফাটল বা ফ্রাকচারের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা।’

প্রথম অধ্যায়ে অস্থির ফাটল সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা। যেমন: ফাটলের কারণ, ধরন, রূপ, চিকিৎসার নিয়ম এবং ফাটলের চিকিৎসার জটিলতার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অন্য অধ্যায়টিতে, শরীরের প্রতিটি হাড়ে সৃষ্ট ফাটলের বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

ইবনে সিনার রচিত বই ‘ক্যানন’-এর বিন্যাস, ব্যাপকতা এবং ব্যাখ্যার পদ্ধতিগুলো ছিল আধুনিক চিকিৎসা পাঠ্যপুস্তকের বিন্যাসের মতোই শ্রেণিবিভাগ, রোগের কারণ, মহামারি রোগ, উপসর্গ ও লক্ষণ এবং চিকিৎসা ও আরোগ্য সম্ভাবনা পূর্বাভাস সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করেছেন তিনি। আর এ কারণেই এই বইটি মুসলিম এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে সমানভাবে জনপ্রিয়।

১২ শতকের দিকে ‘জেরার্ড অব ক্রেমোনো’ নামক ল্যাটিন অনুবাদের মাধ্যমে বইটি ইউরোপীয়দের কাছে পরিচিতি পায়। ১৭ শতক পর্যন্ত ল্যুভেন এবং মন্টপেলিয়ারের মেডিক্যাল স্কুলগুলোতে এই বইটি পড়ানো হতো। ইউনেসকো প্রকাশিত এক জার্নালের তথ্যমতে, ১৯০৯ সাল পর্যন্ত ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বই পড়ানো হতো।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ