রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


মুনকার নাকিরের প্রশ্নের জবাব যখন ‘হা হা লা আদরি’ হবে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু সাঈদ: মানব জীবনের এক অবধারিত সত্য মৃত্যু। আমরা সবাই তা বিশ্বাস করি। কুরআনুল কারীমেও নিপুণভাবে এ অমোঘ সত্য চিত্রিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। (সূরা আলে ইমরান আয়াত: ১৮৫)

মৃত্যু এমন এক বাস্তবতা, যা পারস্পরিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন ছিন্ন করে। এক সময় আমি ঘরে থাকতে না চাইলেও যে আমাকে জোর করে ঘরে নিয়ে যেত, সে আপনজন‌ই মৃত্যুর পর আমাকে ঘর থেকে বের করে দিবে। আঙ্গিনায় খাটের উপর শুইয়ে রাখবে। মায়াকান্নায় সবারই চক্ষু সিক্ত হবে। কিন্তু আগের মত কেউ আমায় সঙ্গ দিবেনা।

মৃত্যু যখন আমার অবধারিত হয়ে যাবে, তাড়াতাড়ি কাফন দাফনের ব্যবস্থা হবে। জানাজা পড়িয়ে আমায় কবরে রাখা হবে। স্বজনরা সবাই মুঠো মুঠো মাটি আমার এই দেহের উপর রাখবে। আস্তে আস্তে তাদের থেকে আমি আড়াল হয়ে যাব। কাছে থেকেও যেন অনেক দূরে চলে যাবো। আমি যখন বাস্তবেই তাদের থেকে দূরে সরে যাব, হয়তো কবরের সামনে দাঁড়িয়ে তারা দোয়া করবে। আমি সে দোয়া কেবল শুনতে পাবো। কিন্তু তাদের কিছুই বলতে পারব না।

আমি যখন ওপারের বাসিন্দা হব, অনেক কিছুর প্রয়োজন হবে। আমি হয়তো আটকে যাব নিজের কোন অপরাধে। একটু স‌ওয়াবের প্রয়োজন হবে। সামান্য দান সদকায় মুক্তি মিলবে। স্বজনদের বললে তারা স্বানন্দে দিবে। কিন্তু আমি কিছুই চাইতে পারবো না তাদের কাছে। আমার তখন প্রয়োজন থাকবে। কিন্তু তাদেরকে বোঝানোর সামর্থ্য থাকবে না। তারা আমায় মনে রাখবে।

একদিন। দুইদিন। এক সপ্তাহ। এক মাস। হয়তো বছর খানেক। মুনাজাতে আমার জন্য দোয়াও করবে। এরপর আমায় ভুলে যাবে। এটাই দুনিয়ার বাস্তবতা। নয়তো জীবনযাত্রা তো স্বাভাবিক হবে না। বেঁচে থাকা তো মসৃণ হবে না। অবশ্য কবরের পাশ দিয়ে কখনো যাওয়ার সময় তাদের মনে দয়া হবে। দাঁড়িয়ে সালাম দিবে। আমি সালামের উত্তর‌ও নেব।

তারা যিয়ারত করবে। আমি সেটাও শুনতে পাবো। তখনো হয়তো আমার কোনো প্রয়োজন থাকবে। তাদের কাছে বলতে পারবোনা। মানে আমার কোন প্রয়োজনে দুনিয়ার স্বজন থেকে সহযোগিতা নিতে পারব না। তাদের যদি মায়া হয়, ঈসালে সওয়াব করে, সে সহযোগীতাই কেবল প্রাপ্ত হবো। এজন্য দুনিয়া থেকেই আমার সব নিয়ে যেতে হবে। ওপারের জীবনকে সাজিয়ে নিতে হবে।

কবর জগতে আমার সাথে কেউ থাকবেনা। কোন বন্ধু আমায় সঙ্গ দেবে না। কেউ এসে গল্পে জুড়বে না। জানতে চাইবে না আমার কী প্রয়োজন। হাঁ, আমি যদি পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করে যেতে পারি, অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগী সঙ্গে নিতে পারি, তবে তারা আমায় সঙ্গ দেবে। এ পৃথিবীতে তাদের কোনো অবয়ব নেই। সেই পৃথিবীতে তাদের কায়া ও ছায়া হবে।

নেক সুরতের ইনসান হয়ে আমার পাশে থাকবে। আমার নিঃসঙ্গতার বন্ধু হবে। সার্বক্ষণিক আমায় সঙ্গ দিয়ে নিঃসঙ্গতার অনুভূতি দূর করবে। মুনকার নাকির যখন আমাকে প্রশ্ন করতে আসবে, তারা আমার মাথার দিকে পায়ের দিকে ডান দিকে বাম দিকে সব দিকে অবস্থান করবে। তাদেরকে আমার কাছে আসতে দেবে না। তখন আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা সহজ হবে। মুনকার নাকির কে দেখে আমার ভয় লাগবে না। সাথে যদি আপন জন থাকে, তবে কি আর ভয় থাকে?

কবর তো আমাদের সবার শেষ ঠিকানা। কী ধনী কী গরিব, কী জ্ঞানী কী মূর্খ, কী নেককার কী বদকার, সকলেরই শেষ ঠিকানা হবে ওপারের এ জগত। আমলের উপর নির্ভর করবে আমার সুখ-দুঃখ। আমি যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে যেতে পারি, মুনকার নাকিরের প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারি, তবে কবর হবে আমার জন্য এক টুকরো জান্নাত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে সে কথা জানিয়েছেন।পৃথিবীর চেয়ে সেটা হবে বেশি ভালো। মনের চাহিদা মতো সব পাওয়া যাবে। যদি কপাল মন্দ হয়, আল্লাহ তাআলা নারাজ হন, মুনকার নাকিরের প্রশ্নের জবাবে হা হা লা আদরি বলে ফেলি,তবে কবর‌ই হবে আমার নরক গহবর।

সবধরনের যাতনা আমার সঙ্গী হবে। অন্তহীন যন্ত্রণার দ্বার উম্মোচিত হবে। কেয়ামত পর্যন্ত একের পর এক শাস্তি ভোগ করতে হবে। দুনিয়ার কেউ আমার সে খবর জানবেনা। আয় আল্লাহ! কিভাবে সহ্য করবো কবরের আজাব! আয় আল্লাহ! আমাকে আমাদের সবাইকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়ার তৌফিক দান করে। আমিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ