শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ ।। ৭ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৫ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের আরও এক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত ইরানকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা দেবে রাশিয়া: পুতিন খেলাফত মজলিসের রংপুর বিভাগীয় তরবিয়তি সভা উত্তরসূরিদের নাম ঘোষণা করলেন খামেনি ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের ড্রোন হামলা, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে বিস্ময় সৃষ্টি আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় ইসলামি শক্তির ঐক্য অপরিহার্য: ইবনে শাইখুল হাদিস পৃথিবীর শান্তি ও মানবতা ধ্বংস করছে ইসরায়েল, পতন অনিবার্য: হেফাজত  যে মাওলানার কাছে ভরাডুবি হয়েছিল সেই ফজলুর রহমানের হল না ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঢামেক শিক্ষার্থীদের, আন্দোলন চলবে

মামলুক যুগে মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।। আবু সাঈদ।।

মামলুক যুগে মাদরাসার পাঠ্যক্রম কেবল উলুমে শরিয়াহ কেন্দ্রিক ছিল। তার সহযোগী হিসেবে নাহব, সরফ, লোগাহ ইত্যাদিও পড়ানো হতো। যেমন কেউ যদি তাফসির বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে চায়, তাকে অবশ্যই আরবি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। নাহব সরফ বুঝতে হবে। অন্যান্য বিষয়েও পারঙ্গম হতে হবে। এসব উলূম ছাড়া তাফসীর বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য তাফসীরের সহযোগী হিসেবে এসব বিষয় ছাত্রদের পড়ানো হতো। উলুমে শরিয়ার অন্যান্য বিষয়গুলোর জন্য‌ও এসব সহযোগী ইলমের সমান প্রয়োজন পড়তো। সেজন্য উলুমে শরিয়ার পাশাপাশি এ বিষয়গুলোও ছাত্রদের শেখানো হতো।

তখন উলুমে শরিয়ার বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনার‌ ব্যবস্থা ছিল। সুলতান বারকুক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় সাতটি বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনার সুযোগ ছিল। সেখানে চার মাযহাবের ফিকহের উপর চারটি দরস হতো। তাফসীর, কেরাত ও হাদিসের উপর তিনটি দরস হত। এভাবে সাতটি বিষয়ে ছাত্ররা উচ্চতর পড়াশোনার সুযোগ পেতো।

মসজিদে মুয়াইয়িদ শায়খে‌ও উচ্চতর পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল। এই মসজিদ তখন একাধারে মসজিদ-মাদরাসা ও খানকার প্রতিনিধিত্ব করতো। এখানেও চার মাযহাবের উপর পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল। তাফসীর ও ইলমে কেরাতেরও সুযোগ ছিল। হাদিসের পড়াশোনায় একটু ভিন্নতা ছিল। দুই রকম দরস হতো। একটি দরসে হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও মর্মবাণী উদঘাটন করা হতো। এর জন্য একজন নির্দিষ্ট উসতাদ থাকতো। এতে কেবল দশ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করতে পারতো। অপর দরসে রেওয়ায়েতে হাদিস, সনদ ও রিজালের আলোচনা হতো। হাদিস মুখস্ত করানো হতো। এখানেও কেবল মাত্র দশজন ছাত্রের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতো।

পরবর্তীতে উলুম শরিয়ার পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছিলো। শাম ও মিশরের কিছু মাদরাসায় ধর্মীয় বিষয়াবলীর পাশাপাশি গণিত ভূগোল দর্শন জ্যোতির্বিজ্ঞান চিকিৎসা বিজ্ঞান ও মধ্যযুগীয় রসায়নের উচ্চতর পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছিলো। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করতে হতো।

সুলতান নাসির মুহাম্মদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায়ে নাসিরিয়্যার মাসিক খরচ ছিল আশি হাজার দিরহামের চেয়েও বেশি।

উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক কালকাসান্দি সুবহুল আ’শা ফি সানা’আতিল ইনশা গ্রন্থে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করেছেন।

তিনি লিখেছেন, সপ্তম অষ্টম ও নবম শতাব্দীর মাদরাসাগুলোতে প্রায় ৫০ টি বিষয়ের পাঠদান হতো। তখন ছাত্ররা ধর্মীয় বিষয়াদির পাশাপাশি ভাষাতত্ত্ব ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মৌলিক জ্ঞান‌ও অর্জন করে নিতো। দামেস্কেই উচ্চতর পড়াশোনার অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ছিলো। কোরআন বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য সাতটি প্রতিষ্ঠান ছিলো। এর মধ্যে দারুল কুরআন আল জাযারিয়্যাহ ছিলো অন্যতম। এটা তৎকালের শ্রেষ্ঠ কোরআন বিশেষজ্ঞ শায়খ শামসুদ্দিন ইবনুল জাযারী রাহমাতুল্লাহি প্রতিষ্ঠা করেন। আজও এ প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে।

হাদীস শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য সতেরোটি প্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল দারুল হাদিস আন নুরিয়্যাহ। সুলতান নুরুদ্দীন মাহমুদ তা প্রতিষ্ঠা করেন। বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ ইমাম ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি এ প্রতিষ্ঠানে দরস দিতেন। দারুল হাদিসিল আশরাফিয়াও অনেক প্রসিদ্ধ ছিল। সেখানে বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ ইমাম মহিউদ্দিন নববী ও ইমাম তাজ উদ্দীন সুবকী রহমতুল্লাহি আলাইহ দরস প্রদান করতেন।

চার মাযহাবের উপর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য‌ও আলাদা প্রতিষ্ঠান ছিল। দশম শতাব্দীর শুরুর দিকে ফিকহে শাফেয়ীর উপর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য তেষট্টিটি মাদ্রাসা ছিল। এর মধ্যে আল আদেলিয়্যাহ আল-কুবরা, আল বাদিরায়িয়্যাহ, আশ শামিয়্যাহ আল বিরানিয়্যাহ ও আশ শামিয়্যাহ আল জাওনিয়্যাহ ছিল অন্যতম।

হানাফী ফিকহের ওপর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বায়ান্নটি মাদরাসা ছিল। এর মধ্যে আল মাদরাসাতুন নুরিয়্যাহ, আল মাদরাসাতুল জাওহারিয়্যাহ, আল মাদরাসাতুল খাতুনিয়্যাহ ছিল অন্যতম।

হাম্বলী ফিকহের উপর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য মোট এগারটি মাদরাসা ছিল। তন্মধ্যে আল মাদরাসাতুল জুযিয়্যাহ, আল মাদরাসাতুস সাদরিয়্যাহ, আল মাদরাসাতুল উমারিয়্যাহ ছিল অন্যতম। মালেকী মাযহাবের উপর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য মাদরাসা ছিল মোট চারটি। এভাবে সুপরিকল্পিতভাবে মামলুক যুগে মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হতো।


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ