মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৫ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
ভারতের পুনে দুর্গে নামাজ আদায় করা নিয়ে দেশভর তোলপাড় ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: শায়খে চরমোনাই কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ' নামের পত্রিকা : স্বাধীনতার ৩৩ বছর আগের এক ঐতিহাসিক দলিল ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিল হওয়ার খবরটি ভুল : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নাতির কাছে কায়দা শিখছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর জামায়াত সেক্রেটারি পরওয়ারের বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ: এনসিপি ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস এ৩৩০ সম্পন্ন হলো আবু ত্বহা ও সাবিকুন নাহারের তালাক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নওগাঁ জেলা শাখা পুনর্গঠন মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, মৃত্যুদণ্ডের ফয়সালা আদালতের

বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো মুমিনদের কর্তব্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী।।

প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ফের ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়েছে। সিলেটের কোনো মানুষ অতীতে এমন ভয়াবহ বন্যার কথা স্মরণ করতে পারছেন না। এবারের বন্যায় প্রধান প্রধান সড়ক আর নদীপথ সবই একাকার। সুনামগঞ্জ শহর পুরোটা ও সিলেট শহরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভয়াবহ বন্যার ফলে চার জেলাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। শহরের রাস্তাগুলোতে মাঝারি আকারের নৌকা চলছে। গ্রাম এলাকার বেশিরভাগ মানুষ পর্যাপ্ত নৌকার অভাবে বন্যার পানিতে গৃহবন্দী হয়ে আছেন। শিশু-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলেই এখন পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন।

অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বন্যার অবস্থাও একই রকম। বন্যার পানিতে বাড়িঘর ও জমির ফসল ডুবে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে আছে। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

বন্যাকবলিত এসব অঞ্চলে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করছে। পানিবাহিত নানা রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর ভাঙনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বন্যাদুর্গত মানুষের জীবন সংকটাপন্ন। এই মুহূর্তে প্রয়োজন তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও আশপাশে যারা থাকে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তাই দেশের বিত্তবান ব্যক্তিদেরও বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা একান্ত কর্তব্য।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবতার মুক্তির জন্য সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন। পৃথিবীর যেখানেই মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, অসহায় মানবতার আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে, সেখানেই সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে গেছে ইসলামপ্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা। অসহায়, ক্ষুধার্তদের হক আদায়ের ব্যাপারে ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি পেট পুরে খায়, আর পাশেই প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায় সে প্রকৃত মুমিন নয়।’

অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন কর, তাহলে আসমানের অধিবাসীও তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’ অন্য হাদিসে এসেছে- 'সমগ্র সৃষ্টিজীবই আল্লাহর পরিবারের মতো, আর সর্বোত্তম হলো ওই ব্যক্তি যে তার পরিবারের প্রতি সদাচরণ করে।’

ইসলাম বা মুসলমানরা শুধু থিওরি বা দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করে না। বরং তারা নিজেরাই আর্তমানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসলামের ইতিহাস তার প্রমাণ বহন করে যুগে যুগে ইসলাম ও মুসলমানরা প্রমাণ করেছে, ইসলাম মানবতার ধর্ম। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তিনি কীভাবে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। হিজরতের পরবর্তী সময়ে মক্কার আনসাররা কীভাবে মুহাজির ভাইদের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন। শুধু এতটুকুই নয়, নিজেরা ক্ষুধার্ত, অসহায়, দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও খাবার ও থাকার মূল অংশ অপর ভাইয়ের জন্য দিয়ে দিয়েছেন। নিজেরা মুমূর্ষু, প্রচণ্ড পিপাসার্ত হওয়ার পরও নিজের খাদ্য ও পানীয় অপর ভাইয়ের জন্য বিলিয়ে দেওয়ার যে নজির স্থাপন করেছেন, তার নমুনা ইতিহাসের পাতায় বিরল।

আমরাও রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ করে বন্যাদুর্গত ভাই-বোনদের সেবায় আত্মনিয়োগ করি। সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করি। যারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে পারি, তারা যেন এগিয়ে আসি। আর পাশাপাশি তারা যেন কোনোভাবেই মানসিকভাবে অসহায়বোধ না করে সে জন্য অন্য সবাই তাদের মানসিকভাবে সহায়তা করি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে বন্যাদুর্গত ভাই-বোনদের সেবায় এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

-এএ


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ