শনিবার, ১১ মে ২০২৪ ।। ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৩ জিলকদ ১৪৪৫


চাঁদ দেখা মুস্তাহাব: বর্তমানে অবহেলিত যে সুন্নত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু।।

রমজান মাসের রোজা, হজ ও কোরবানির মতো ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিধান চন্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই ইসলামী আইনজ্ঞদের মত হলো চন্দ্রমাসের হিসাব সংরক্ষণ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ মুসলিম জাতির অন্তত একটি দল সর্বদা চন্দ্রমাসের হিসাব সংরক্ষণ করবে। তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে চাঁদ দেখতেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করতেন। বিশেষত রমজানের চাঁদ দেখার ব্যাপারে একাধিক হাদিসে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এখনো সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজানের আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে জনসাধারণকে চাঁদ দেখতে উৎসাহিত করা হয়। সাধারণ মুসলিমরাও আগ্রহের সঙ্গে চাঁদ দেখে। দুই তিন দশক আগেও বাংলাদেশের শহর ও গ্রাম অঞ্চলে দলবেঁধে রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার প্রচলন ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা বহুলাংশে হ্রাস পাচ্ছে।

চাঁদ দেখতেন মহানবী (সা.) :  আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

চাঁদ দেখার নির্দেশ : রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের চাঁদ দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের জন্য শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রেখো। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৭)

হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) উল্লিখিত হাদিসের অর্থ করেন—‘তোমরা হিসাব সংরক্ষণের চেষ্টা কোরো। এভাবে যে তোমরা চাঁদের উদয়স্থল অনুসন্ধান করবে এবং নিয়মিত সেদিকে তাকাবে (লক্ষ্য রাখবে)। যেন রমজানের চাঁদ তোমরা নিজ চোখে দেখতে পারো এবং তা তোমাদের থেকে ছুটে না যায়। ’ (তুহফাতুল আহওয়াজি : ৩/২৪৯)

চাঁদ দেখা মুস্তাহাব : যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে রমজানের চাঁদ দেখতেন এবং চাঁদের দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তাই ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, সাধারণ মুসলমানের জন্য চাঁদ দেখা মুস্তাহাব। এ ছাড়া চাঁদ দেখার মাধ্যমে আল্লাহর বিধান রজমানের রোজার প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ প্রকাশ পায়, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

নতুন চাঁদ দেখে খুশি হতেন নবীজি (সা.) : নতুন মাসের চাঁদ দেখে মহানবী (সা.) খুশি প্রকাশ করতেন এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) নতুন চাঁদ দেখে বলতেন, ‘কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আমি তাঁর ওপর ঈমান আনলাম—এই বাক্য তিনবার বলতেন। অতঃপর বলতেন, আল্লাহর প্রশংসা যিনি অমুক মাস শেষ করলেন এবং এই মাস এনে দিলেন। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০৯২)

এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় শুধু রমজান নয়, যে কোনো মাসের চাঁদ দেখা মুস্তাহাব।

চাঁদ দেখার পর করণীয় : নতুন চাঁদ দেখার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতেন—উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আহলিলহু আলাইনা বিল-ইয়ুমনি ওয়াল-ঈমান ওয়াস-সালামাতি ওয়াল-ইসলাম; রব্বি ওয়া রব্বুকাল্লাহ। ’ অর্থ : হে আল্লাহ, আমাদের জন্য চাঁদটিকে বরকতময় (নিরাপদ), ঈমান, নিরাপত্তা ও শান্তির বাহন করে উদিত করুন। (হে নতুন চাঁদ) আল্লাহ আমার ও তোমার প্রভু। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১)

আল্লাহ সবাইকে তাঁর রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র: ইসলামী জীবন।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ