মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৯ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনানী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ খুলনায় হাতপাখার সংসদ সদস্য প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক সার্বিক উন্নয়ন ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই: হাফিজ ফখরুল ইসলাম ফরিদপুরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর প্রচারণার গেট ও ব্যানার ভাঙচুর  জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরেই গণভোট দিতে হবে: এ টি এম মাছুম জামায়াত আমিরের আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন যিনি খালেদা জিয়াসহ ৯ নারী পেলেন বিএনপির মনোনয়ন ২৩৭ আসনে বিএনপির ধানের শীষ পেলেন যারা নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলায় মতিউর রহমান আকন্দ নিন্দা বস্ত্রহীন ঘুমানোর হুকুম কী ?

তারাবির ইন্টারভিউ’র নামে হাফেজদের অভিযোগ-অনুযোগ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

শেষ হতে চলেছে হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাস। কয়েক দিনের অপেক্ষা শেষেই পশ্চিম দিগন্তে হেসে উঠবে কুরআন নাজিলের মাস রমজানের বাঁকা চাঁদ। মহিমান্বিত এ মাসকে ঘিরে মুমিনদের মাঝে এখন থেকেই শুরু হয়েছে অগ্রিম প্রস্তুতি, তোড়জোড়। রমজানে যেসব ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানরা আপন রবের সন্তুষ্টির লাভের প্রত্যাশা করে থাকেন তার অন্যতম সালাতুত তারাবিহ।

রমজানে বাংলাদেশের অল্প কিছু মসজিদ বাদে প্রায় অধিকাংশ মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে খতম তারাবি। এতে ইমামতি করে থাকেন তরুণ, নবীন-প্রবীণ, অভিজ্ঞ হাফেজে কুরআনগণ। ইবাদতের মাসে খতম তারাবি হাফেজদের জন্য কুরআন শরীফ ইয়াদ রাখার অন্যতম উপলক্ষ। আবার গাইরে হাফেজ সাধারণ মানুষেরা এই খতম তারাবির বদৌলতেই পুরো রমজান কুরআনের তেলাওয়াতে নিজেদের কলিজা ভেজানোর সৌভাগ্য পেয়ে থাকেন।

তারাবির ইমামতি নিয়ে হাফেজে কুরআনদের স্মৃতিতে মিশে থাকে অনেক আবেগ অনুভূতির গল্প। কেউ কেউ শুধু রমজানে খতম তারাবি পড়ানোর জন্য ছুটে চলেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। সেখানে কোরআনের  বদৌলতে কুড়িয়ে নেন অনেকের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।

তবে তারাবির ইমামতি ঠিক হওয়ার আগ মুহূর্তে ইর্ন্টারভিউ দিতে গিয়ে অনেক হাফেজে কুরআনের সাথে ভোগান্তি- অস্বস্তিকর  কিছু ঘটে যাওয়ার অভিযোগও উঠে বিভিন্ন জায়গায়।

অনেকের মন্তব্য, ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মসজিদ কমিটির ব্যবস্থাপনা, ইন্টারভিউ নিয়ে জটিলতা- এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাদের।

রাজধানীর ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মেশকাত জামাতের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান। বেশ কয়েক বছর ধরে খতম তারাবির ইমামতি করে আসছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, তারাবির ইমামতির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে তার ভোগান্তির একটি অভিজ্ঞতার কথা।

মসজিদের নাম উল্লেখ না করার শর্তে তিনি বলেন, একবার আমাদের ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য ডাকা হল। ইন্টারভিউ- এর সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল দুপুর ৩ টায়। সময় মত উপস্থিত হলাম প্রায় শতাধিক হাফেজে কুরআন। গিয়ে দেখি ইন্টারভিউ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। ১০ মিনিট, ২০ মিনিট, আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা পর্যন্ত এটা স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু সময় জ্ঞানের কোন হিসেব না করে সবার বিরক্তি চরমে উঠিয়ে ইন্টারভিউ শুরু হয়েছিল মাগরিবের পরে। আমাদের জন্য পানি পানের ব্যবস্থাও ছিল না।এরপর ইন্টারভিউ শেষ হতে হতে রাত এগারোটা। বাসায় পৌঁছানো তখন কষ্টকর হয়ে যায়।

পরবর্তীতে আর কখনো এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে এ ধরনের ভোগান্তির মুখোমুখি কেউ না হোক এটাই চান এই তরুণ হাফেজে কুরআন।

এদিকে সালাহ উদ্দিন সালমান নামে আরেক হাফেজে কুরআন তার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের একটি মসজিদে একবার ইন্টারভিউর সুযোগ পেলাম। সেখানে মোটামুটি সবকিছুই ঠিক ছিল, তবে একসাথে অনেকের ইন্টারভিউ নিয়ে পরবর্তীতে দেখা গেল মসজিদে দায়িত্বশীল একজনের নিকটাত্মীযয়ের ছেলেকে রেখে দেয়া হলো।

তিনি বলেন, ‘এটা অনেক বড় ধরনের সমস্যা। মসজিদ কমিটি হয়তোবা আগে থেকেই নিজস্ব কাউকে ঠিক করে রাখেন। কিন্তু লম্বা সময় লোক দেখানো ইন্টারভিউতে কাটিয়ে দেন। এটা সমস্যা তৈরি করে সেই হাফেজে কুরআনদের জন্য যারা লম্বা সময় নিয়ে এখানে ইন্টারভিউ দিতে বসে ছিলেন’।

এখানে তারাবির জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হবে না-শুরুতেই এভাবে বলে দেওয়া হলে তো এই হাফেজরা অন্য কোথাও চেষ্টা করে দেখতে পেত। কিন্তু নিজস্ব লোক আগে থেকে ঠিক রেখেও অন্যদের ইন্টারভিউ জন্য আটকে রাখা একদম সঠিক মনে হয় না’।

জুবায়ের হাবিব নামে আরেক হাফেজ  জানিয়েছেন, ইন্টারভিউ , তেলাওয়াত সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু বিপত্তি ঘটল অন্য জায়গায়। কমিটির পক্ষ থেকে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়িয়ে দেখাতে বলা হলো, নামাজ পড়ানোর পরে হঠাৎ আমাকে জানিয়ে দেওয়া হল তারাবির জন্য আমাকে রাখা হবে না। কারণ হিসেবে বলা হলো, রুকুতে আমি একটু লম্বা সময় নিয়েছি। মসজিদ কর্তৃপক্ষ ‘না’ করে দেওয়ার পরে এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলিনি; কিন্তু অনেকটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, শুধু রুকুতে কিছুটা দেরি হওয়া কতটা গুরুতর অপরাধ যে এর কারণে পুরো তারাবি থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হল’।

মসজিদ কমিটির বিভিন্ন ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ের বাইরেও অনেক সময় ভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয় হাফেজদের।

মাহাদি হাসান নামে এক হাফেজে কুরআন বলছিলেন, অনেক সময় সবকিছুই ঠিক থাকে, তারাবিও ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু দেখা যায় কোন কোন এলাকায় হয়তোবা এমন তরুণ কোন হাফেজে কুরআন থাকেন যার কোথাও তারাবি ঠিক হয়নি, তখন সে নামাজ পড়তে এসে ‘লোকমা’ দিতে হবে না এমন জায়গাযতেও হঠাৎ লোকমা দিয়ে বসে। অবস্থা জটিল করে তুলে।

এ ধরনের নানা অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ হাফেজে কোরআন।

বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে কুমিল্লা বাতাইছড়ি মারকাযুস সুন্নাহ মাদরাসার পরিচালক মাওলানা নাজমুল হাসান বলেছেন, ‘ইন্টারভিউ নাটক বন্ধ হোক! রমাযান আসন্ন৷ এই সময়টাতে বিভিন্ন মসজিদে তারাবির নামাযের জন্য ইন্টারভিউর মাধ্যমে হাফেজ নিয়োগ দেওয়া হয়৷ ইন্টারভিউর মাধ্যমে হাফেজ নিয়োগ দেওয়া আপত্তির কিছু নয়৷ তবে গোপনে কমিটির আত্মীয়-স্বজনকে সিলেক্ট করে রেখে জাস্ট নাম-কে-ওয়াস্তে ইন্টারভিউ শো করে অন্যান্য হাফেজদের কষ্ট দেওয়া বড়ই বর্বরতার পরিচয়৷

নাতী, ভাগিনা, ভাতিজাকে সিলেক্ট করে রাখলে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে দেন, অন্য হাফেজদের ডেকে এনে ইন্টারভিউ নাটক করার কী দরকার!

ইন্টারভিউর মাধ্যমে হাফেজ নিয়োগ করতে চাইলে করুন, কিন্তু ইন্টারভিউর আড়ালে নাটকীয়তা পরিহার করুন’৷

এ বিষয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি মসজিদ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এমন অভিযোগের কোন সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন প্রায় সবাই।

একটি মসজিদের এক দায়িত্বশীল বলেছেন, ‘অনেক যাচাই-বাছাই করে খতম তারাবির জন্য একজন হাফেজে কুরআন নির্বাচিত করা হয়। এক্ষেত্রে সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিকেই নিযুক্ত করা হয়। কোন ধরনের স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কেউ নিজের আত্মীয়কে সুযোগ দেন না’।

তবে তিনি সব হাফেজে কুরআনের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন এবং কুরআনের মাস রমজানে তারাবির ইমামতির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে কেউ যেন ভোগান্তির শিকার না হয় এবং এমন অভিযোগ না উঠে- এই প্রত্যাশা করেছেন তিনি।


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ