শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ইসি গঠনে নতুন সার্চ কমিটি: যেভাবে দেখছে ইসলামী দলগুলো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার প্রথমবারের মতো আইনের আলোকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সার্চ কমিটির কাজে সার্বিক সহায়তা করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারের খোঁজে আজ সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত ও নাম চাওয়া হবে। এছাড়াও বিশিষ্টজন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে তিনটি বৈঠক করবে সার্চ কমিটি।

নতুন গঠিত সার্চ কমিটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত থাকলেও সবাই চায় নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে তারা ভূমিকা রাখবেন।

আপিল বিভাগের বিচারপতি ও কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, এটা কমিটির জন্য চ্যালেঞ্জ। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য লোকের তালিকাই দেবেন।

আরো পড়ুন: ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়তে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের বৈঠকের খবর কতটা সঠিক?

সার্চ কমিটির বিষয়ে আওয়ামী লীগ বলেছে, এ কমিটি অত্যন্ত নিরপেক্ষ। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা বলেছিলাম— আওয়ামী বাকশালী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ মুজিবকোট পরা লোকেরাই সরকারের সার্চ কমিটিতে থাকবেন। সেই সার্চ কমিটি হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে মুজিবকোট পরা লোকদের বের করে আনবে। নবগঠিত এই সার্চ কমিটি সেই অনুমানেরই নিরেট বাস্তবতা। এটাকে সার্চ কমিটি না বলে বরং ‘আওয়ামী খাস কমিটি’ বলাটাই যুক্তিযুক্ত মনে করি।

এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ‘সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, বিগত বছরগুলোর মতো আমলীগ তাদের নিজস্ব প্রভাব ও বলয়ের লোকজনকে দিয়েই সার্চ কমিটি গঠন করেছে’।

‘সার্চ কমিটি গঠন করা হয় মূলত আওয়ামী লীগের অনুগত লোকদের খুঁজে বের করার জন্য। গত দুই নির্বাচনে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি, এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না’ বলে মন্তব্য মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের।

তিনি বলেছেন, এই সার্চ কমিটিকে আমরা বৈধ মনে করি না।

আরো পড়ুন: ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ: কী ভাবছেন ইসলামি রাজনীতিবিদেরা

‘সার্চ কমিটি গঠনের জন্য দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম  প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করা হবে, সেই কাউন্সিল নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে প্রস্তাব দেবে অথবা তারা নির্বাচন কমিশন গঠন-এর একটি আইনি কাঠামো তৈরি করবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম হবে। কিন্তু সার্চ কমিটি গঠনে জনমত ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছুই হয়নি। নতুন এই সার্চ কমিটির মাধ্যমে বিতর্ক থেকেই গেল এবং এ নিয়ে সংকট সামনে আরো বাড়বে’ বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব।

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেছেন, ‘যেসব লোকের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের ব্যক্তি পরিচয় সম্পর্কে পূর্ব থেকেই সবার জানা রয়েছে। এতে নতুন করে মন্তব্য করার কিছু নেই’।

‘আমি এর আগেও প্রায় জায়গায় বলেছি সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা দেখাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত যেভাবেই সার্চ কমিটি গঠন করা হোক না কেন; সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন গঠন এবং জনগণের কল্যাণে কিছু হবে ন ‘ বলে মন্তব্য করেছেন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির।

আরো পড়ুন: আলেমদের চোখে সংলাপ

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়া সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে এই রাজনীতিবিদ আরো বলেন, ‘বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও একসময় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। এবং এই প্রক্রিয়াতেই ক্ষমতায় এসে পরবর্তীতে তারা সংবিধান থেকে এই আইন বাতিল করেছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার ক্ষমতায় আছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে তাদের সদিচ্ছা না থাকলে তা সম্ভব হবে না’।

‘বাংলাদেশে কোন পক্ষেই কখনো সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হতে পারেনি। বর্তমানে যারা সার্চ কমিটিতে রয়েছেন তাদের অতীত সম্পর্কে সবারই জানা।তবে সার্চ কমিটিকে বিতর্ক মুক্ত রাখতে প্রত্যেক দলের একজন করে সার্চ কমিটিতে রাখা যেত’ বলেন মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ।

فانتظروا اني معكم من المنتظرين

পবিত্র কুরআনের এই আয়াতকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘সবকিছুর পরেও আমরা অপেক্ষা করতে চাই, এই সার্চ কমিটি আমাদের কি ফলাফল েউপহার দেয় তা দেখার জন্য’।

আরো পড়ুন: ইউপি নির্বাচনে আলেমপ্রার্থীর জয়ের ধারাবাহিকতা: কীভাবে দেখছেন ইসলামি রাজনীতিবিদেরা

প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটির অনুমোদন দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায় বঙ্গভবন। গতকাল শনিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে (সভাপতি) গঠন করা সার্চ কমিটির বাকি ৫ সদস্য হলেন- প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্টের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (পদাধিকার বলে), সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান (পদাধিকার বলে) এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক- সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ায় তার নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

আরো পড়ুন: নির্বাচনী সহিংসতা রোধে যে পরামর্শ ইসলামি রাজনীতিবিদদের

বিতর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন বলেন, ‘আমার সারাজীবনের আদর্শ কি নষ্ট হয়ে গেছে? আওয়ামী লীগ থেকে যদি এমপি হতাম, মন্ত্রী হতাম, তা হলে কি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতাম? কখনই না। আমি আমার আদর্শে আছি; ন্যায়নীতির আদর্শে আছি। কোনো অবস্থাতেই এ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হব না।’

এদিকে সার্চ কমিটির কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে।

অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য ২ জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এ ১০ জনের মধ্য থেকে সিইসিসহ পাঁচজনকে দিয়ে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।

আরো পড়ুন: স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে কতটা আগ্রহী ইসলামী দলগুলো?

এটি / এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ