বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ইউপি নির্বাচনে আলেমপ্রার্থীর জয়ের ধারাবাহিকতা: কীভাবে দেখছেন ইসলামি রাজনীতিবিদেরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৮ নভেম্বর। এতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের আলেম ও সাধারণ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ইমাম ,খতিব ও বক্তা মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ আজাদীর বিজয়ের মাধ্যমে শুরু হয় আলেম ও ইসলামী দলের প্রার্থীদের বিজয়ের ধারা। যা অব্যাহত ছিল সর্বশেষ তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনেও।

তৃণমূলে আলেমদের এই বিজয়কে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ইসলামপ্রিয় লোকজন। এর মাধ্যমে সাধারণের সঙ্গে আলেম ও ইসলামপন্থীদের সম্পৃক্ততার দ্বার আরো প্রসারিত হচ্ছে বলে মন্তব্য অনেকের।

ইউপি নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের জয়: কী বলছেন ইসলামি রাজনীতিবিদেরা?

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, জনগণ একে একে সবাইকে বিজয়ী করে এসছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের চাকা কখনো ঘুরেনি, হতাশা আর বঞ্চনাই সবশেষে সঙ্গী হয়েছে। তাই মানুষের রুচিবোধ বদলেছে, চেতনার দ্বার খুলেছে, তারা এখন ইসলামপন্থী ও  আলেমদের বিজয়ী করছেন।

তিনি মনে করেন, ‘এ ক্ষেত্রেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের মতো করে প্রার্থী নির্বাচন করতে পারছেন না; সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের সুযোগ না থাকায়। তবে বিতাড়িত হতে হতে সময় ও পরিস্থিতিই এখন জনগণকে তাদের সেরাটা নির্বাচন করতে শিখিয়েছে’ বলেন তিনি।

মানুষের এই রুচিবোধ ও  মানসিকতার পরিবর্তন একটি আদর্শিক বিজয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে আলেম প্রার্থী ও সাধারণ প্রার্থীর জয়ের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো ইসলামী দলগুলোর প্রার্থীরা কতটা জয়ী হচ্ছেন, কতটা সমর্থন পাচ্ছেন। কারণ ইসলামি দলগুলোতে আলেম প্রার্থীর বাইরে, সাধারণ ইসলামপন্থী প্রার্থীও রয়েছে।

তিনি বলেন,  ইসলামী দলগুলো যেহেতু একটা আদর্শ লালন করে; তাই এখানে মূল বিষয় হল এই আদর্শধারী প্রার্থীরা কতটা মূল্যায়িত হচ্ছেন জনগণের কাছে।

‘ইসলামপন্থীদের জয় সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা,  দুর্নীতি ও অনাচার দূর করতে সহায়ক হবে। এক সময় আলেমরা শুধু জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে কাজ করতেন, বর্তমানে তৃণমূলও ভীত মজবুত করছেন তারা, এটি একটি ভালো দিক’ বলেছেন তিনি।

‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে তৃণমূল থেকেই কাজ করে যেতে হবে’ বলে আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী

আলেম ও ইসলামী প্রার্থীদের বিজয়কে আশাব্যঞ্জক বলেছেন তিনি।

‘তৃণমূলে কাজ করতে না পারলে ইসলামকে যথাযথভাবে জনগণের কাছে পৌঁছানো যাবে না’ বলে মন্তব্য এই ইসলামী রাজনীতিবিদের।

ইসলামপন্থীদের জয়েও শঙ্কা!

আশা-প্রত্যাশা সাথে একটি শঙ্কার দিক নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেছেন, আলেম অথবা ইসলামী দলগুলো থেকে যে জনপ্রতিনিধিরা বিজয়ী হয়েছেন তাদের যারা পরিচালনা করবেন এই পরিচালকদের নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা থেকে যাচ্ছে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা তাদের অধীনস্থদের উপরও প্রভাব বিস্তার করতে চাইবে। তাই সতর্কতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হবে ইসলামি দলের বিজয়ী প্রার্থীদের।

তৃণমূল থেকে ইসলামপন্থীদের থেকে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেলে পরবর্তীতে এটা তাদের জন্য এবং যারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে থেকে ইসলামপন্থীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের জন্য ব্যাপক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

স্বভাবতই যে কেউ বলে বসবেন, সবদিক থেকে এক ধরনের প্রতারিত হয়ে ইসলামপন্থীদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম; কিন্তু তারাও আমাদের বঞ্চিত করেছে। তাই এদিকটাতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিগত কয়েক ইউপি নির্বাচন থেকে আলেম ও ইসলামপন্থীদের জয়ের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে একে মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন কিনা?

এ বিষয়ে মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীর মতামত হল, মানুষের রুচিবোধে পরিবর্তন বলে আসলে কিছু নেই। মানুষ সবসময় ভালো এবং যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চান। কিন্তু কখনো হয়তোবা প্রার্থী পান না, অথবা পেলেও স্বার্থন্বেষীরা স্বার্থকে কাজে লাগিয়ে অযোগ্যদের সামনে নিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার মতামতেও খুব একটা ভিন্নতা পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেছেন, ‘মানুষ সব সময় এমন প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে চান যারা ন্যায়-ইনসাফের সাথে কাজ করবেন। কিন্তু সব সময় তাদের যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচিত করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। এর কারণ হিসেবে একদিকে যেমন রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী ইসলামী দলগুলোর প্রার্থী দিতে না পারা; তেমনি রয়েছে মানুষ ইচ্ছেমত ভোট দিতে না পারা। বর্তমানে তারা প্রার্থী পাচ্ছেন, তাই যতটুকু সুযোগ পাচ্ছেন যোগ্যদের নির্বাচিত করছেন’।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ইসলামপন্থীদের বিজয়ের লিস্ট আরো দীর্ঘ হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরো সংযোগ করেন, ‘মানুষ সময়ে সময়ে বিভিন্ন জনকে নির্বাচিত করে দেখেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন বুলি আওড়ালেও পরবর্তীতে জনগণের ভাগ্যে হতাশা ছাড়া আর কিছু জোটেনি, তাই বলা যায় জনগণের মাঝে এক ধরনের রুচিগত ও মানসিক পরিবর্তন এসেছে’।

‘বিজয়ের পর ইসলামপন্থীরা যেভাবে দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করছে এতে করে মানুষ সুফল পাচ্ছে। এবং আগামীতে এই বিজয়ের ধারা বাড়তেই থাকবে বলে বিশ্বাস ‘ মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার।

এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ