শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে মালদ্বীপে মুসল্লিদের ঢল আ.লীগ নিষিদ্ধের কথা বললে সরকার পশ্চিমাদের দোহাই দেয় : সারজিস নারী সংস্কার কমিশন বাতিল না করলে আন্দোলনের দাবানল জ্বলবে: হেফাজত আটপাড়ায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত কর্মস্থলে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধির সুপারিশ মজলিসে আমেলার বৈঠকে জমিয়ত, রাত পোহালেই কাউন্সিল কাল ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের গণমিছিল, প্রস্তুতি সম্পন্ন ‘রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার না হলে আবারও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দেবে’ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) সেবা ফাউন্ডেশনের কিতাব বিতরণ "পাশ্চাত্যের শক্তি নয় আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে এদেশের কোরআনপ্রেমী জনতা”

‘পাঁচ কল্লি টুপি, মুসাফাহা, মাওলানা’ শব্দ নিয়ে বিষোদগারের বাস্তবতা কতটুকু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

টুপি ইসলামী আদি সভ্যতার একটি প্রধান অনুষঙ্গ। পৃথিবী জুড়ে পরিধেয় টুপির ধরনে বৈচিত্র্য থাকলেও প্রাচীনকাল থেকে মুসলমানদের মধ্যে টুপি পরিধান করার চর্চা অতি ব্যাপক।

টুপির ধরন ও বৈচিত্রের মধ্যেই বাংলাদেশে অনেকের মাথায়ই শোভা পেতে দেখা যায় পাঁচ কলি টুপি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাঁচ কলি টুপি পরিধান,দুই হাতে মুসাফাহা, মাওলানা ও হুজুর শব্দের ব্যবহারকে শিয়াদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন মুযাফফর বিন মুহসিন নামে আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের এক মাওলানা। ভরা মজলিসে অনেকের সামনে পাঁচ কল্লি টুপি ছেড়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তার এমন কর্মকাণ্ড ও বিষোদগারে হতবাক দেশের আমজনতা। একে উদ্ভট কান্ড বলেও অভিহিত করেছেন অনেকে।

‘সৌদি সরকারের পশ্চিমা তোষামোদী থেকে উম্মাহের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে এ ধরনের বক্তব্য’

এ বিষয়ে গবেষক আলেম ও ইসলামী আলোচক মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, সৌদি সরকারের অন্ধ অনুকরণ, খ্রিস্টান ও ইহুদীদের খুশি করার মানসিকতা থেকেই এমন বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন গুটিকয়েক চিহ্নিত লোকজন।

তিনি বলেছেন, ‘কিছুদিন আগেও মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিল, শিয়ারা সৌদি বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, মূলত সৌদি আরব যে পশ্চিমাদের সরাসরি তোষামোদ শুরু করেছে, এ বিষয়টি লুকানোর জন্য এবং উম্মাহ ও মুসলিম বিশ্বের স্কলারদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে সৌদি বাদশার দোসররা’।

মুজাফফর বিন মহসিন-এর বক্তব্যকে হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, বুখারী শরীফের হাদিসে স্পষ্ট এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেছেন,

علمني النبي صلى الله عليه وسلم التشهد وكفي بين كفيه

 

‘এখানে স্পষ্ট কাফফাইহি শব্দ এসেছে, এ থেকে বুঝে আসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম দুই হাতে মুসাফাহা করেছেন। একে শিয়াদের বানানো মুসাফা বলা নবীজির শানের খেলাফ ও বুখারী শরীফের বিরোধিতা ছাড়া আর কিছু নয়’ বলেন মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী।

‘হাদিসের রেওয়ায়েত সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, আমার বাবা নিজেই আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. এর সাথে দুই হাতে মুসাফা করেছেন। ইমাম বুখারীও এক্ষেত্রে ‘বিকিলতা ইয়াদাইহি’ শব্দ ব্যবহার করেছেন উল্লেখ করে এই ইসলামি চিন্তাবিদ বলেন, মুযাফফর বিন মুহসিন দুই হাতের মুসাফাকে কিভাবে শিয়াদের মুসাফাহা বলে তা বোধগম্য নয়।

তিনি আরো যোগ করেন, ‘আসলে সৌদি আরবের ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম থেকে ওলামায়ে উম্মতের দৃষ্টিভঙ্গি এড়াতে বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এমন বক্তব্যদানকারীরা’।

‘কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তাআলা বান্দার ক্ষেত্রেও মাওলানা শব্দটি ব্যবহার করেছেন’

মাওলানা শব্দ নিয়ে মুজাফফর বিন মহসিন-এর বিষোদগার বিষয়ে তিনি বলেছেন, শিয়ারা আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সম্পর্কে মাওলানা শব্দের ব্যবহার করেছে বিষয়টি ঠিক আছে, কিন্তু কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তাআলা বান্দার ক্ষেত্রেও মাওলানা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তাহলে কি কোরআনেও শিয়া মতবাদ প্রচার করা করা হয়েছে? প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি বলেন, মুযাফফর বিন মুহসিনদের এসব কথা প্রমাণ করে তাদের পড়াশোনা এবং মুতালার অজ্ঞতার কথা।

‘বক্তব্যের পুরোটাই  বাড়াবাড়ি এবং গোঁড়ামি’

পাঁচ কলি টুপি, মাওলানা, হুজুর শব্দকে শিয়াদের সাথে মিলিয়ে সাম্প্রতিক যে বক্তব্য দিয়েছেন মুজাফফর বিন মহসিন এর পুরোটাই বাড়াবাড়ি এবং গোঁড়ামি এবং একে দ্বীনের তাহরিফ বলে আখ্যায়িত করেছেন জামিয়া ইউসুফ বানুরীর মুহতামিম ও  মাহমুদ নগর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আতাউল করিম মাকসুদ

মুসাফাহা বিষয়ে তিনি বুখারী শরীফের হাদিস উদ্ধৃত করে বলেছেন, এখানে আহলে হাদিসেরা বলে থাকে মুসাফা করার সময় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর একহাত রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের হাতের ভেতর ছিলো। তিনি বলেন, যখন দুজন মুসলমান একসাথে মুসাফা করবে তখন একজনের একহাত বাইরেই থাকবে।

‘টুপির ধরন ও বৈচিত্রে ইসলাম উদার’

মাওলানা আতাউল করিম মাকসুদ বলেছেন , টুপি পড়ার বিষয়টি কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তবে টুপি কেমন হবে এ বিষয়ে ইসলাম একেবারে উদার। কুরআন, হাদীসে এ বিষয়ে বিশেষ কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা অথবা সংকীর্ণতাও নেই টুপি পরার ক্ষেত্রে।

একে পাকপান্জাতনের সাথে মিলানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঁচ কলির কারণে যদি এই ধরনের টুপিকে পাকপান্জাতনের সাথে মিলানো হয় তাহলে কি পৃথিবীর সব পাঁচ সংখ্যা পাকপানজাতনের বৃত্তে আবদ্ধ? প্রশ্ন করেন এই ইসলামী চিন্তাবিদ।

‘একে পাক পান্জাতনের সাথে কেন মিলানো হচ্ছে’? প্রশ্ন করে তিনি বলেন, একে তো নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ, এগুলোর সাথে মিলানো যেতে পারে।

‘হাদিসে বলা হয়েছে মুমিনের সম্পর্কে ভালো ধারণা কর। একে তো ভালো কিছুর সাথেও মেলানো যেত কিন্তু তা না করে পাকপানজাতনের সাথে মিলনের উদ্দেশ্য কি? আওয়র ইসলামকে বলেন মুফতি আতাউল করিম মাকসুদ।

‘সাহাবীদের সম্বোধন করে রাসূল সা. মাওলানা শব্দ ব্যবহার করেছেন’

মাওলানা শব্দকে শিয়াদের সাথে মেলানোর বিষয়ে এই ইসলামী চিন্তাবিদ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম তার সাহাবীদের সম্বোধন করে বলেছেন،

انت اخونا مولانا

‘ইবনে তাইমিয়া রহ., আমাদের আকাবির ওলামায়ে কেরামও এই শব্দ ব্যবহার করেছেন. একে কোনভাবেই শিয়াদের সাথে মিলানো যুক্তিক নয়’ বলেন তিনি।

মাহফিলে ভরা মজলিসে টুপি ছেড়ার বিষয়টির নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, টুপির কোন নির্দিষ্ট ধরন নেই তাই, এ ধরনের কর্মকাণ্ড রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালামের সুন্নতের সাথে তামাশা এবং অবমাননা।

কেএল


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ