মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
দীনি আলোচকদের নসিহতের উদ্দেশে মাওলানা আবরারুল হক রহ. বলেন, দীনি কাজ যারা করেন; বিশেষকরে তাবলীগ ও ওয়াজ নসীহতের কাজ-তাদের উপর অপরিহার্য হলো, লোকজনের প্রতি খেয়াল রাখা। শ্রোতাদের আগ্রহের প্রতি লক্ষ্য রাখা। অন্যথায়, হিতে বিপরিত হয়ে যাবে। মানুষদের সুসংবাদ শুনিয়ে দীনের প্রতি আনার পরিবর্তে দীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে। যা হবে লোকজনের জন্যে দীন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। আর এই কাজ অত্যন্ত ক্ষতিকর।
একটি ঘটনা বলি, একবার আমি নীনিতাল গিয়েছিলাম। সফরসঙ্গী হিসেবে শীরওয়ানী সাহেবও ছিলেন। সেখানে তার বড়ো প্রভাব ছিলো। দীনি ও দুনিয়াবী উভয় বিষয়ে৷ সুতরাং তিনি মসজিদে ঘোষণা দিলেন, উপস্থিত মুসল্লিগণ! আপনারা নামাজের পর বসে যাবেন। দশ মিনিট দীনি আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, আমি ঘড়ি দেখে আলোচনা শুরু করি৷ এবং ঠিক দশ মিনিট পর আলোচনা শেষ করে দিই৷ বয়ানের মধ্যেও বলেছি, বয়ান দুই ধরনের হয়৷ এক হলো- সময় নির্ধারিত বয়ান। দ্বিতীয় হলো- সময় অনির্ধারিত বয়ান।
সময় নির্ধারিত বয়ানে, বয়ানকারীর জন্যে উচিত নয়- সময় চলে যাওয়ার পরও বয়ান করতে থাকা৷ আর সময় অনির্ধারিত বয়ানে, বয়ানকারী স্বাধীন৷ সময়, চাহিদা ও অবস্থাভেদে চাইলে সে বয়ান দীর্ঘ করতে পারে৷ চাইলে সংক্ষিপ্ত করে শেষ করে দিতে পারে৷
তিনি বলেন, বয়ান শেষ করার পর ঐ মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, আজ প্রথম এই মসজিদে নির্ধারনকৃত সময়ের বয়ান, নির্ধারিত সময়ে শেষ করা হলো৷ আপনার আগে কেউ এমন ছিলো না যে, সময় নির্ধারিত বয়ান, সময় মতো শেষ করেছে৷
এই জন্যে ওয়াজ নসিহতের সময় এই বিষয়গুলো অত্যন্ত খেয়াল রাখা জরুরী৷ কারণ, মুবাল্লিগদের ব্যবহার পিয়নের মতো হওয়া উচিত৷ যাতে দ্বিতীয়বার গেলে লোকেরা খুশি হয়৷ যেমনিভাবে পিয়নকে দ্বিতীয়বার দেখে সবাই খুশি হয়৷ যদিও পিয়ন মানিঅর্ডার না নিয়ে এসে থাকে৷ তারপরও মানুষ খুশি হয় এইভেবে যে, মানিঅর্ডার না নিয়ে আসলেও কমপক্ষে চিঠি তো নিয়ে এসেছে৷
তিনি বলেন, মুবাল্লিগদের ব্যবহার পুলিশের মতো না হওয়া চাই। যে লোকজন দেখেই পালাতে শুরু করবে এইভেবে যে, কার দিকে যেনো আসা শুরু করেছে৷ যেমন পুলিশকে দেখে মানুষরা করে থাকে৷ এই জন্যে নামায পড়ানো, ওয়াজ করা ও তাবলীগের কাজ সমূহে মজমার লোকজনের প্রতি অত্যন্ত খেয়াল রাখা জরুরী। অন্যথায় কোন কাজ তবিয়তের বিপরিত দুই একবার জোর করে আদায় করে নেয়া সম্ভব হলেও, পরবর্তী সময়ে সর্বদার জন্যে কাজ করার সুযোগ শেষ হয়ে যাওয়ার অতীব সম্ভবনা রয়েছে৷
একটি উপমা দিয়ে তিনি বলেন, বয়ান অথবা ওয়াজের উদ্দেশ্যে বলা হলো, অল্প সময়ের জন্যে সকলে বসেন দীনি আলোচনা হবে৷ এখন যদি বক্তা দীর্ঘ সময় বয়ান করে৷ মানুষদের বসিয়ে রাখে৷ তাহলে ভবিষ্যত ফলাফল এই হবে যে, এই ধরনের ঘোষণার পর লোকজন আর ওয়াজ শুনতে বসবে না৷ বরং পরবর্তী এমন ঘোষণার পর লোকজন কোনমতে ফরজ নামাজ আদায় করে, ঘরে গিয়ে সুন্নত পড়বে। সূত্র: মাজালিসে মুহিউস সুন্নাহ
এমডব্লিউ/
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        