রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


মুআযাহ বিনতে আবদুল্লাহ: যে নারীর ধৈর্য ও ইবাদতের সুবাসে বিমুগ্ধ ইতিহাসের পাতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।তাসনীম জান্নাত।।

বসরা নগরী ছিল বিদগ্ধ আলিম,ফকীহ, মুহাদ্দিস ও বুযুর্গদের আবাসভূমি। উলুমে ইসলামিয়ার কেন্দ্রস্থল। সেই পবিত্রময় পরিবেশে জন্ম নিয়েছেন অনেক মহান মনীষী। তাদেরই অন্যতম একজন মুআযাহ আল-আদাবিয়া রাহিমাহাল্লাহ।ইলম, আমল, তাকওয়া, পরহেযগারিতায় তিনি ছিলেন অনন্য। ইবাদাত, তাকওয়া, পরহেযগারিতা ও খোদাভিরুতার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে অতুলনীয় মর্যাদা দান করেছিলেন।

তিনি সাহাবায়ে কেরামের সোহবতে বেড়ে উঠেছেন এবং তাদের থেকে ইলম অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তিনি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা’র ছাত্রী ছিলেন। তিনি তাঁর সোহবত লাভ করেছেন এবং তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহান সাহাবী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলি ইবনে আবি তালিব রাদিআল্লাহু আনহু, বসরা নগরীতে বসবাসকারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মহান সাহাবী হযরত হিশাম বিন আমির রাদিআল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণনা করেছেন ।

বসরা নগরীর বড় বড় আলিম,ফকীহ,মুহাদ্দিসগণ তাঁর ছাত্র ছিলেন। বসরার মহান তাবেয়ী হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ স্বয়ং তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

বসরার বড় বড় তাবেয়ীদের একজন মুহাদ্দিস আইয়ূব আস সাখতিয়ানী রাহিমাহুল্লাহ। যিনি ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ’র উস্তায। হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, আইয়ুব হলেন বসরার যুবকদের সর্দার। এই মহান মনীষীও মুআযাহ আল আদাবিয়া রাহিমাহাল্লাহ থেকে হাদীস রেওয়ায়াত করেছেন। বসরার আরেকজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন হাফিজ ইমাম আসিম আল-আহওয়াল রাহিমাহুল্লাহ। তিনিও তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও আবু কিলাবাহ আল-জারমী, ইয়াযিদ আর-রিশক, ইসহাক বিন সুওয়াইদ,ওমর বিন যার রাহিমাহুমুল্লাহসহ আরো অনেকেই তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য রাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে মাঈনও তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীস দলীলযোগ্য।

মুআযাহ আল আদাবিয়া রাহিমাহাল্লাহ’র কুনিয়াত হলো উম্মুস সাহবা। তাঁর স্বামীর নাম সিলাহ ইবনে আইশাম। তাঁর স্বামীর কুনিয়াত আবুস সাহবা। তিনি অনেক বড় বুযুর্গ তাবেয়ী ছিলেন। তিনি ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি শুধু আবিদই ছিলেন না বরং অনেক বড় মুজাহিদও ছিলেন। অনেক জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাকে ও তাঁর পুত্রকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেছেন । (আল্লাহ তাদের কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দিক।)

তাঁর স্বামী ও পুত্রের শাহাদাতের পর মহিলারা সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এলে তিনি বললেন, যদি তোমরা অভিনন্দন জানানোর জন্য এসে থাকো তাহলে তোমাদেরকে সুস্বাগতম আর যদি এছাড়া অন্য কোন কারণে এসে থাকো তাহলে ফিরে যাও। মহিলারা তাঁর র্ধৈয্য ধারণের ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। তাদের চোখে তাঁর সম্মান বহুগুণ বেড়ে যায়।

তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি বিশ বছর জীবিত ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত বিছানায় মাথা রাখেন নি। তিনি সর্বদা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত থাকতেন । তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশা রাখতেন, আল্লাহ পাক আবুস সাহবা ও তাঁর পুত্রের সাথে জান্নাতে তাকে মিলিত করবেন।

তিনি অত্যন্ত ইবাদাতগুজার মহিলা ছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন উপমাতুল্য। তিনি রাত জেগে ইবাদাত করতেন আর বলতেন, আমি এমন চোখের ব্যাপারে আশ্চর্য বোধ করি যে চোখ ঘুমিয়ে থাকে অথচ সে কবরের অন্ধকারে দীর্ঘ নিদ্রার ব্যাপারে অবহিত। তিনি দিনের বেলায় বলতেন, আজই হয়ত আমার শেষ দিন। আজই আমি মারা যেতে পারি, তাই তিনি দিনে আর ঘুমাতেন না। রাত হলে বলতেন, এই রাতই হয়ত আমার শেষ রাত। আমি রাতেই হয়ত মারা যাব তাই তিনি রাতেও ঘুমাতেন না। রাতে ঘুম ধরলে তিনি উঠে দাঁড়াতেন, ঘরের মধ্যে হাটাহাটি করতেন আর বলতেন, হে নফস ! তোমার সামনে তো ঘুমাবার দীর্ঘ সময় আছে। তুমি আগামীতে কবরে ঘুমানোর দীর্ঘ সময় পাবে। সেই নিদ্রা হয় আনন্দের হবে, না হয় পরিতাপের হবে। তিনি প্রত্যহ দিনে এবং রাতে ছয়শ রাকাত সালাত আদায় করতেন।

মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে তিনি একবার হাসছিলেন আরেকবার কাদঁছিলেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি আর নামায, রোযা, যিকির করতে পারব না এটা স্বরণ করে কাঁদছি। আর হাসার কারণ হল, আমি আবু সাহবাকে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় একদল লোকের সাথে দেখছি। তিনি বাড়ির আঙিনায় এসেছেন। তাদের মতো আর কাউকে আমি দুনিয়াতে দেখিনি। এ কথা বলার কিছুক্ষণ পরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন । ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মুআযাহ আল-আদাবিয়া রাহিমাহাল্লাহ ৮৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ