এইচ এম আবু বকর সিদ্দীক।।
অবাক হচ্ছি অনেক মুসলিম তরুণ যুবাদেরকে মা দিবসে উইশ করতে দেখে। প্রাক্টিসিং মুসলিম এমনকি আলেম ওলামাদেরকেও মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখালেখি করতে দেখে। এসব দিবসের ইতিহাস ও এগুলোকে কেন্দ্র করে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য না জেনে এবং ইসলামের সৌহার্দপূর্ণ উচ্চমার্গীয় বিধান গভীর ভাবে না জানার কারণে মুসলিম সমাজেও এসবের প্রচলন ঘটছে। যেসকল দেশে যারা পরিবার প্রথা উপেক্ষিত। বার্ধক্যে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে তাদের জন্য বছরে একদিন মা দিবস, বাবা দিবস অনেক বড় কিছু হলেও আমাদের জন্য নগন্য। এসব দিবসের নামে আমাদের যৌথ ও সহমর্মিতার পারিবারিক ঐতিহ্যগত সমাজেও পশ্চিমা অসার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস বৈ কিছু নয়।
আধুনিক মা দিবসের ইতিহাস:
এর প্রচলন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তাঁর মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবসের প্রচলন করেন ।
১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তাঁর মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তাঁর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে।
অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ক্রমেই দিবসটি ঘিরে বাণিজ্য শুরু হয়। এতে লঙ্ঘিত হয় দিবসটির মূল চেতনা। মর্মাহত হন আনা। দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি।
(সূত্র, প্রথম আলো) 
মা বাবার প্রতি সদাচরণে ইসলামের নির্দেশনা:
ইসলাম দিবস কেন্দ্রিকতাকে অপছন্দ করে। বরং সর্বকালীন ভারসাম্যপূর্ণ নির্দেশনা দেয়। কোনো মুসলিম কেনো দিবসকে কেন্দ্র করে মা বাবাকে ভালোবাসবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, "আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো 'ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে 'উফ' বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল"। (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ২৩)
ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "প্রতিপালকের সন্তুষ্টি তোমার মা বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত। তেমনিভাবে প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি মা বাবার অসন্তোষের মধ্যে নিহিত রয়েছে"। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সর্বকালীন ও সার্বজনিক নির্দেশনা দিয়ে মা বাবাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন।
এছাড়া নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবিরা গুনাহের বর্ননা দিতে গিয়ে আল্লাহর সাথে শিরকের পরেই মা বাবার সাথে অবাধ্যতার কথা বলেছেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে একযোগে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, নবিজী বললেন, "আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহগুলোর সন্ধান দেব? সহাবায়ে কেরাম বললেন, বিলক্ষণ হে আল্লাহর রাসূল! এরপরে নবিজী বললেন, আল্লাহর সাথে শরিক করা। মা বাবার সাথে অবাধ্য আচরণ করা। নবিজী হেলান দিয়ে বসে ছিলেন, সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথাও কিন্তু কবিরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত"। (সহীহ বুখারী)
আমাদের করণীয়:
মা বাবাকে সবসময় ভালোবাসতে হবে। তাদের আদেশ নিষেধ যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী না হয়–মেনে চলা। দিবস কেন্দ্রিকতা থেকে বের হয়ে আসা। কেননা মা দিবস পালন করলে কোনো সওয়াবের প্রতিশ্রুতি নেই বরং হুঁশিয়ারি আছে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যারা যে সম্প্রদায়ের আচার আচরণের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তাদের হাশর একসাথে হবে। (সুনানে আবু দাউদ) অতএব আসুন, এসব উদ্দেশ্য প্রণোদিত উদযাপন থেকে বিরত থেকে ইসলামের সঠিক নির্দেশনা মেনে চলি। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
এনটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        