বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ছুটিতে কী করবেন শিক্ষার্থীরা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে চলছে বার্ষিক পরীক্ষা। মার্চের মাঝামাঝি ও শেষ থেকে শুরু হয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শেষ হবে এ পরীক্ষা। এরপর রমজান, ঈদুল ফিতর মিলিয়ে প্রায় ২ মাসের লম্বা ছুটি পাবেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ এই ছুটিতে নিজের সময়গুলোকে কিভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন একজন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ আলেম শিক্ষাবিদ মাওলানা যাইনুল আবিদীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একজন কওমি শিক্ষার্থীকে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, সে জাতির ভবিষ্যত রাহবার। সেদিক বিচেনায় তাকে তার সময়গুলো মূল্যায়ন করতে হবে।

তিনি বলেছেন, বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা যেই লম্বা ছুটি পান তাকে ছুটি না বলে দীর্ঘ দিনের প্রতিষ্ঠানিক পড়াশোনার বাইরে গিয়ে একধরণের পাঠ বিরতি ও উন্মুক্তভাবে চিন্তাভাবনা করার প্লাটফর্ম বলা যেতে পারে।

মাওলানা যাইনুল আবিদীনের ভাষায়, তিনটি টিপস অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের এই লম্বা পাঠ বিরতিকে কাজে লাগাতে পারেন-

১. শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দিন মাদরাসায় যেভাবে আমল আখলাকের সাথে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তা যেন ছুটিতে পুরোপুরিভাবে নিজের পরিবার ও সমাজের মাঝে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। যেন তার প্রতি সমাজের মানুষের সুধারণা ও আগ্রহ তৈরি হয়।

২. আগামীতে জাতির নেতৃত্বশীলদের একজন হিসেবে প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে জনসম্পৃক্ততা তৈরিতে ছুটির সময়কে কাজে লাগাতে পারেন কওমি শিক্ষার্থীরা। এতে ভবিষ্যতে মানুষের মাঝে নেতৃত্ব দিতে সুবিধা পাবেন আগামী দিনের রাহবারেরা।

৩. নিজের ব্যাপারে একজন কওমি শিক্ষার্থীর সুস্পষ্ট ধারণা থাকা। এজন্য প্রায় ২ মাসের এই লম্বা পাঠ বিরতিতে আকাবির ও মনীষীদের জীবনী অধ্যয়ন করা। এবং নিজেকে যোগ্য করে তুলতে বর্তমান বিশ্ব, রাজনীতি, পরিবেশ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অর্জনের চেষ্টা করা। এজন্য পাঠ বিরতিতে সিলেবাসের বাইরে নিজেকে প্রস্তুত করতে বিস্তৃত অধ্যয়নের চেষ্টা করতে পারেন শিক্ষার্থীরা বলেছেন মাওলানা যাইনুল আবিদীন।

এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়ার শিক্ষাসচিব মুফতি আশরাফুজ্জামান বার্ষিক পরীক্ষা শেষে লম্বা ছুটিতে শিক্ষার্থীদের সময় কাটানোর বিষয়ে বলেছেন, বর্তমান সময়ে মাদরাসার বাইরের পরিবেশে যেসব অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই এসব থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। মাদরাসার পরিবেশে যেভাবে মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকতেন একজন শিক্ষার্থী ছুটিতেও এসব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।

আরো পড়ুন: প্রশ্নফাঁসরোধে অভিনব পদ্ধতি: সুষ্ঠুভাবে চলছে বেফাক পরীক্ষা

তিনি প্রতিবেদককে বলেছেন, দেশের নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষার্থী মাদরাসায় ইলমে দ্বীন হাসিল করেন, এর বাইরে বিশাল একটি অংশ ইলমে দ্বীন ও সঠিক ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে রয়েছেন। তবে তারা দ্বীন ও দ্বীনের রাহবার আলেম সমাজকে মন থেকে ভালোবাসেন, বন্ধের সময়ে কওমি শিক্ষার্থীরা তাদের কুরআন সহী-শুদ্ধ করতে ও তাদের মাঝে সঠিক ইসলামী মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা নিজের এলাকার মসজিদে প্রতিদিন নিয়ম করে এক দেড় ঘন্টা সময় নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে কাজ করতে পারেন বলেছেন জামিয়া রাহমানিয়ার শিক্ষাসচিব মুফতি আশরাফুজ্জামান।

এদিকে জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার শিক্ষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা তাহমিদুল মাওলা প্রতিবেদককে বলেছেন, লম্বা এই ছুটিতে সময়কে কাজে লাগালে ব্যাপক লাভ হতে পারে, অন্যথায় অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনাও থেকে যায় শিক্ষার্থীদের জীবনে।

তিনি বলেছেন, সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারায় অনেক সময় কোন কোন শিক্ষার্থী ইলমে দ্বীনের লাইন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই নিজের ছাত্রত্ব নষ্ট করে দেয় এমন কিছুতে যুক্ত না হতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ। তাই নিজেকে বাহিরের পরিবেশ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ছুটিতে কোন একজন মুরব্বীর তত্ত্বাবধায়নে থাকার পরামর্শ দিলেন তিনি। হতে পারে সেই মুরব্বী নিজের পরিবারের কেউ অথবা শিক্ষকদের মধ্য থেকে কেউ।

এছাড়া পরিবার ও সমাজে আমল ও আখলাকের মাধ্যমে নিজেকে আদর্শ মানব ও ছাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা। একজন কওমী শিক্ষার্থী হিসেবে কখনোই নিজের সাথে যায় না এমন কোন অশালীন আচরণ না করা।

মাওলানা তাহমিদুল মাওলানা শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার এই ছুটিতে পড়াশোনা জারি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। পড়াশোনা জারি রাখতে ৩টি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন তিনি-

১. বিগত বছরে কোন সাবজেক্টে কমতি থেকে গেলে তা পূরণের চেষ্ট করা।

২.আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনা করা।

৩. নিজের শিক্ষা জীবনকে সমৃদ্ধ করতে ও আমাদের উপমহাদেশের আকাবিরদের চিন্তা-চেতনাকে বুঝতে এই সময়ে আকাবিরদের জীবনী অধ্যয়ন করা। এছাড়া শিক্ষা জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে মাওলানা আবদুল মালেক হাফি. রচিত তালিবানে ইলমের পথ ও পাথেয় এবং আবু তাহের মিসবাহের জীবন পথের পাথেয় অধ্যয়ন করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার শিক্ষক মাওলানা তাহমিদুল মাওলা।

আরো পড়ুন: তরুণ আলেমদের চোখে আল্লামা ফরিদপুরি ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপ

সাম্প্রদায়িক বর্বরতাকে আলেমরা তীব্রভাবে ঘৃণা করেন

 

এএ


সম্পর্কিত খবর