শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


সাম্প্রদায়িক বর্বরতাকে আলেমরা তীব্রভাবে ঘৃণা করেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাম্প্রদায়িকতা। বর্তমান সময়ের আলোচিত এক শব্দ। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সংবাদ মাধ্যম অথবা ফেসবুকের ওয়ালে প্রতিনিয়ত দেখতে হচ্ছে শব্দটি। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে সাম্প্রদায়িকতা শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। দেশে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাংচুরের খবর প্রকাশ পেলে সাম্প্রদায়িকতা বিষয়টি আরো ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। সাম্প্রদায়িকতার ঘৃণ্য এ প্রবাহ নিয়ে আলেম সমাজ ও ইসলামি ব্যক্তিত্বদের স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি জানতে শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক নূরুদ্দীন তাসলিম।


রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়ার মুহতামিম ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক আওয়ার ইসলামকে বলেন, ইসলামের অবস্থান বরাবরই সব ধরণের সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে এবং ইসলামই একমাত্র অসাম্প্রদায়িক ধর্ম।

তিনি বলেছেন,  ব্যক্তি স্বার্থে ইসলামের নাম ব্যবহার করে কোন্দল ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানোকে কখনো ইসলাম ও ইসলামের ধারক-বাহক আলেম সমাজ সমর্থন করেন না।

যে বা যারাই ইসলামকে কলূষিত করতে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে বেড়ায় তারা কখনোই প্রকৃত ইসলামকে ধারণ করে না  উল্লেখ করে বর্তমানে সাম্প্রদায়িক হামলার নামে যেসব ঘটছে তার তীব্র নিন্দা জানান বেফাক মহাসচিব।

বর্তমানে ইসলামের নামে ছড়িয়ে দেওয়া সাম্প্রদায়িকতা রোধে  সভা-সেমিনার, ওয়াজ-মাহফিল ও জুমার বয়ানে  সচেতনতা তৈরি করা দায়িত্বশীল আলেমদের  একান্ত কর্তব্য বলেও মনে করেন বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

এদিকে  বর্তমানে দেশে যেসব সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে তাকে দেশ ও দেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ। তিনি প্রতিবেদককে বলেছেন, দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহ করতেই একটি মহল সাম্প্রদায়িকতার রূপ দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর এইসব হামলার দোষ চাপাতে চায়।

ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আকস্মিক ও গুপ্ত হামলা চালিয়ে কারো জানমালের ক্ষতি ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। দেশের আইন হাতে তুলে নিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো কখনো ইসলামী কর্মকাণ্ড নয় বলেছেন এই ইসলামী রাজনীতিবীদ।

তিনি বলছেন, অনেক সময় মধ্যপ্রচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সাম্প্রদায়িকতার নামে যেসব হামলার ঘটনা ঘটে  খোঁজ নিলে দেখা যায় মূলত ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই ইসলাম বিরোধী শক্তি এসব কারসাজি ঘটিয়ে থাকে। তাই দেশের তরুণ সমাজকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিলেন এই রাজনীতিবীদ।

এছাড়া আবেগের বাইরে গিয়ে ইসলাম ও মুসলামদের বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে বিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল আলেমদের  পরামর্শে পথচলার উপদেশ দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ।

এদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আওয়ার ইসলামকে বলেছেন,  ইসলাম সম্প্রীতি সৌহার্দ্য ও শৃঙ্খলার ধর্ম। ইসলামে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অশান্তি সৃষ্টির কোন জায়গা নেই।

তিনি বলেছেন, যেখানে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম কোন মুসলমানকে অপর মুসলমানের সাথে  মুচকি হেসে কথা বলাকে সদকার সওয়াবের অর্ন্তভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন এবং অপর মুসলমানকে পানি পান করানো ও কোন অপরিচিতকে পথের সন্ধান দেওয়াকেও সওয়াবের কাজ  বলেছেন- সেখানে এমন ধর্মে সাম্প্রদায়িকতার সমর্থনের বিষয়টি কখনো কল্পনাও করা যায় না বলছেন তিনি।

তবে আমাদের দেশে বিভিন্ন  সময়ে সাম্প্রদায়িকতার নামে যেসব ঘটে তা কখনো প্রকৃত ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না বলছেন মাওলানা আফেন্দী।

মাওলানা আফেন্দীর ভাষায়, বহিরাগত বিভিন্ন রাষ্ট্রের ইন্ধনে প্রকৃত ইসলামকে ধারণ করেন না এমন অনেকেই বিভিন্ন সময়ে ইসলামের  ভাব-গাম্ভীর্যতাকে আঘাত করতে সাম্প্রদায়িকতার মতো গর্হিত কাজ করে থাকেন।

যারা এসব ঘটিয়ে থাকেন তাদের অবশ্যই ইসলামের প্রকৃত বার্তা অনুধাবন করে সব ধরণের সাম্প্রদায়িকতা থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।

এদিকে শায়খ  জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ইসলাম সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানব কল্যাণকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় ইসলামে। তাই ইসলামে ধর্মের  দিক বিবেচনায় কারো ওপর  সাম্প্রদায়িক বিভাজন, জুলুম-অত্যাচার ও অন্যায় আচরণের কোন সুযোগ নেই।

তিনি বলছেন, মানবজাতির হইকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্য মুসলমান ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মানুষদেরকে দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া মুসলমানদের অপরিহার্য কর্তব্য। তবে মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম কখনো বাড়াবাড়ি নির্দেশ  দেয় না। বরং মানবতার ধর্ম ইসলাম সবাইকে নিজস্ব ধর্ম পালনে স্বাধীনতা দিয়েছে। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর কেউ সাম্প্রদায়িকতার দোষ চাপিয়ে দিতে চাইলে তা কখনো গ্রহণযোগ্য নয় বলছিলেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ।

মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদের ভাষায়, কোথাও কখনো কোন মুসলমান যদি ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে কোন ধরণের জ্বালাও-পোড়াও ও সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটায় তাহলে  এর দায় একান্তই ব্যক্তি বিশেষের। কোন ব্যক্তির কাজের কারণে  ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ কখনো দায়ী হতে পারে না। এছাড়া হীন ও ব্যক্তি স্বার্থে কেউ ইসলামকে ব্যবহার করলে ইসলাম কখনো তা সমর্থন করে না বলেছেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ।

তিনি আরো বলেছেন, ইসলামের ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকা শাসক ওমর রা. সব সম্প্রদায়কে তাদের শতভাগ অধিকার ভোগের সুযোগ দিয়েছিলেন, এ কারণে সে যুগে অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন।

এছাড়া আন্দালুসে ইসলামী খেলাফতের ৮শ’ বছরে ইসলামী বিধান মত মানবাধিকার ও সকল সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল, যে কারণে তৎকালীন সময়ে পার্শ্ববর্তী খৃস্টান শাসকরাও মুসলিমদের প্রসাশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন।

মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ আরো বললেন, অসাম্প্রদায়িকতাই মূলত ইসলামের অন্যতম আকর্ষণ ও চরিত্র, যা  সংরক্ষিত হয়ে আছে  ইসলামের সোনালী ইতিহাসের পরতে পরতে। তাই যারা বুঝে না বুঝে ইসলামের নামে সাম্প্রদায়িক ছড়িয়ে ‍দিচ্ছে তাদের সঠিক বুঝ কামনা করেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর