মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ ।। ১০ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৮ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
হাতপাখায় ভোট দিলে দেশের বিজয় হবে: শায়খে চরমোনাই নির্বাচনের আগে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল এবার লবণ ছাড়াই সংরক্ষণ করা যাবে পশুর চামড়া  যুদ্ধবিরতিকে ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছে ইরান, চলছে উদযাপন ২৮ জুন সংস্কার ও পিআর পদ্ধতির দাবিতে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে: ইসলামী আন্দোলন প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৬১০, আহত প্রায় ৫০০০ নড়াইলে গ্রাম আদালতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতির পর পরমাণু নিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল ইরান মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলার প্রতিবাদে জাতিসঙ্ঘকে কাতারের চিঠি

পরীক্ষার খাতায় লেখার কৌশল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দরজায় কড়া নাড়ছে কওমি মাদরাসার বিভিন্ন জামাতের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। এবার কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাবর্ষের সময় কম হলেও কমেনি পরীক্ষার সিলেবাসের পরিমাণ। তাই অল্প সময়ে দীর্ঘ এ নেসাব থেকে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কলাকৌশল বিষয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করেছে পরীক্ষা বিষয়ক শিক্ষাপরামর্শ ‘পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি ও সেরা ফলাফলের কৌশল’। আজ থাকছে পর্ব- ৫

লিখছেন দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসার উস্তাযুল হাদিস, দারুল উলুম দেওবন্দের ফাজেল ‘মাসুম আবদুল্লাহ’


(গত পর্বের পর)

লেখায় বিরামচিহ্ন ব্যবহার করুন
লেখায় বিরামচিহ্ন ব্যবহার লেখার মানকে উন্নত করে। মর্ম অনুধাবন সহজ করে। বরং বিরামচিহ্ন কথাকে সুস্পষ্ট ও সুন্দর করে। বিরামচিহ্ন ব্যবহার না করা বা বিরামচিহ্ন ব্যাবহারে ভুল করা লেখাকে অস্পষ্ট ও জটিল করে দেয়। ক্ষেত্র বিশেষ মর্ম বদলে দেয়। বরং বক্তব্যের বিকৃতি ঘটায়। তাই বিরামচিহ্ন ব্যবহার করা এবং সঠিক বিরামচিহ্ন ব্যবহার করা অতি জরুরি।

বিশেষত পরীক্ষার খাতায়। কারণ একজন পরীক্ষার্থীর ভালো ফলাফলের মূল পুঁজি তার উত্তরপত্র। উত্তরপত্রের শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর মানই তার শ্রেষ্ঠ ফলাফলের ভিত্তি প্রস্তর ও বুনিয়াদ।

বিরামচিহ্ন : পরিচয় ও প্রয়োগনীতি
একটি বাক্যের অর্থ ঠিক মত বোঝানোর জন্য বাক্যের মধ্যে এক বা একাধিক জায়গায় কম বেশি থামার দরকার হয়। তা ছাড়া বাক্যের শেষে তো থামতেই হয়। এ থামার সাধারণ নাম বিরাম বা ছেদ। আর লিখিত বাক্যে তা বোঝাবার জন্যে যেসব চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাই ছেদ বা বিরামচিহ্ন। বিরামচিহ্ন গদ্যে হলে ‘ছেদ’ আর পদ্যে বা কবিতার পঙক্তিতে হলে ‘যতি’ চিহ্ন বলে।

বাক্যে থামা বা ছেদ দীর্ঘ হলে তাকে পূর্ণচ্ছেদ বলে। আর এ থামা বা বিরাম স্বল্পদৈর্ঘ হলে তাকে উপচ্ছেদ বা পাদচ্ছেদ বলে। পূর্ণচ্ছেদ সাধারণত বাক্যের শেষে হয়। আর উপচ্চেদ বা পাদচ্ছেদ বাক্যের মাঝে ও অভ্যন্তরে হয়। এ হিসেবে বিরামচিহ্ন দুভাগে বিভক্ত—

ক. বাক্যের প্রান্ত ও সমাপ্তিতে বসা চিহ্ন। যেমন— দাঁড়ি, দুই দাঁড়ি, প্রশ্নচিহ্ন ও বিস্ময়-হর্ষ-বিষাদচিহ্ন।
খ. বাক্যের মাঝে বা অভ্যন্তরে আসা চিহ্ন। যেমন—কমা, সেমিকোলন, কোলন, ড্যাশ, হাইফেন, উর্ধ্বকমা, উদ্ধৃতিচিহ্ন, বিলুপ্তি ও বিকল্পচিহ্ন ইত্যাদি।

নিচের ছকে সংক্ষেপে বিরামচিহ্নের আকৃতি নাম ও প্রয়োগক্ষেত্র উদাহরণসহ দেখানো হলো—

No description available.

No description available.

No description available.

No description available.

উল্লেখ্য—বিরামচিহ্ন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন—
১. বাংলা সাহিত্য প্রশিক্ষণ -মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন।
২. অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ। অথবা বাংলা ব্যাকরণের যেকোনো বই।

উত্তরপত্রে উত্তরবহির্ভূত কিছু লিখবেন না
উত্তরপত্রে উত্তরের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কিছু লিখবেন না। যেমন—সময় সল্পতার জন্য লিখতে পারলাম না। দয়া করে পাশ নম্বর দিয়ে দেবেন। প্রশ্ন বুঝিনি তাই লিখতে পারলাম না। কেউ প্রশ্ন বুঝিয়ে দিতে পারেনি। প্রশ্ন থেকে যা বুঝেছি তাই লিখলাম—ইত্যাদি এসব অনর্থক ও হাবিজাবি কিছু লিখবেন না। এসব লিখে কোনো লাভ নেই। একদমই বেফায়দা।

বরং এতে পরীক্ষকের দয়া তো পাওয়া যায় না। উল্টো কোনো কোনো পরীক্ষক এসব লেখা পড়ে চটে যান। ফলে পাওয়া নম্বরও কমে যায়। কেউ তো রীতি মতো নম্বরও কেটে দেন। তাই এ জাতীয় কিছু লেখা উচিৎ নয়।

অবশ্য, উত্তরপত্রে শুরুতে বিসমিল্লাহ বা হামদ ও সালাত লেখা যায়। উত্তর লেখা শেষে দরুদ শরীফ বা কোনো ইতিসূচক দোয়া-বাক্যাংশ ইত্যাদিও লেখা যেতে পারে।

কাটাকাটি ছাড়া সুন্দর-স্বচ্ছ ও সুস্পষ্টভাবে উত্তর লিখুন
যা কিছু আল্লাহ তায়ালা তৌফিক দেন সুন্দর করে লিখবেন। প্রতিটি শব্দের মাঝে নির্দিষ্ট ফাঁক রেখে লিখবেন। প্রতিটি অক্ষর ও প্রতিটি শব্দ এক রকম লিখার চেষ্টা করবেন। দু’লাইনের মাঝে পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে লিখবেন।

উত্তরপত্র যেনো হিজিবিজি না হয় খেয়াল রাখবে। প্রয়োজনে কাজগ বেশি লাগুক তবু মার্জিতভাবে পর্যাপ্ত জায়গা ব্যবহার করে লিখুন। স্বচ্ছতা বজায় রেখে গুছিয়ে সুন্দরভাবে লিখুন। লেখায় কাটাকাটি করবেন না। একান্ত কাটাকাটির প্রয়োজন হলে মাঝ বরাবর একটি মাত্র দাগ দিয়ে কেটে দেবেন। বিৎঘুটেভাবে কাটবেন না।

উত্তর মনে না আসলে কী করবেন?
যতটুকু পারবেন উত্তর গুছিয়ে লিখবেন। যতটুকু মনে পড়ে সুন্দর করে লিখবেন। উত্তর মনে না আসলে অনুমান করে জায়গা ছেড়ে সামনের উত্তর লিখবেন। ফাঁকা না রেখেও পারা উত্তরগুলো ধারাবাহিকভাবে লিখে যেতে পারেন। তাপর না পারা বা আংশিক পারা উত্তরগুলো লিখুন। এভাবে পারা, আংশিক পারা বা না পারা উত্তরগুলো সুন্দর করে ভেবে-চিন্তে লিখে শেষ করুন।
না পারা বা মনে না আসা উত্তর নিয়ে চিন্তা করুন।

মনে করার চেষ্টা করুন এবং মনে করে করে লিখতে থাকুন। এসময় দুরুদ শরীফ পড়তে পারেন। দুরুদ শরীফের বরকতে উত্তর মনে আসতে পারে। কানে কলম রাখলেও নাকি উত্তর মনে আসে। এর কোনো ভিত্তি আছে কিনা আমার তাহকিক নেই। অভিজ্ঞতার বিষয়। বিশ্বাস করা না করা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমল করে দেখুন। উপকারে আসতেও পারে।

উত্তর লেখা শেষ হলে করণীয়
উত্তর লেখা হলে প্রশ্নপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখবে—কোনো প্রশ্নের উত্তর ছুটে যায়নি তো? এরপর পুরো খাতাটি তিন থেকে চারবার চেক করবে। ভুল পেলে ঠিক করে নেবে। উত্তর লেখার সময়Ñই পৃষ্ঠার নম্বর যুক্ত করবে। এ ক্ষেত্রে অনেকে ভুল করে। অনেকে লেখা শেষ হলে পৃষ্ঠা নম্বর বসায়। এ তরিকা গলদ ও ভুল। বরং লেখার সময় পৃষ্ঠার নম্বর বসিয়ে লেখা শুরু করবে। এতে অনেক ঝামেলা ও ভোগান্তি থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। এ ধরণের সামান্য ভুলও অনেকসময় বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই লুস সংযুক্তি ও পৃষ্ঠার নম্বর বসানোর ক্ষেত্রে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

পরীক্ষার হলে সকল প্রকার অসদোপায় বর্জনীয়
পরীক্ষার হলে কোনো ধরনের কথাবার্তা বা দেখাদেখি-বলাবলি করবে না। কোনো প্রকারের অসদোপায় ও কর্মকাণ্ড নিজেকে কোনোভাবেই জড়াবে না। এভাবে কখনো কেউ আপাদত পার পেয়ে গেলেও জীবনের কোনো বাঁকে এসে এমন কোনো অধঃপতনেরও শিকার হতে পারে—যার থেকে উত্তরণের কোনো পথ থাকে না। তাই সর্বদা অন্যায় পথ পরিহার করাই বাঞ্ছনীয়।

মিথ্যা ও অন্যায়ের পথ প্রাথমিক পর্যায়ে মিষ্টি মনে হতে পারে। আপাদত সফল মনে হলেও তার ফল ও পরিণতি খুবই তেতো। শুধু পরীক্ষা কেনো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমানতদারী ও দিয়ানতদারী, সত্য ও ন্যায়, সঠিক ও শুদ্ধ পথ অবলম্বন করা যে-কারো জীবনে সফলতা বয়ে আনে। জীবনের পরিণতি ও পরিণামকে করে সুখকর ও গৌরবময়।

পরীক্ষার হল থেকে বের হবার পর করণীয়-বর্জনীয়
পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে ওযু-এস্তেঞ্জা, গোসল-নাস্তা ইত্যাদি জরুরত সেরে বিশ্রাম করবে। সময় নষ্ট করবে না। অযথা কথা-বার্তা, আলাপ-আলোচনা, কিতাব দেখা-দেখি করবে না। হইহুলোড় ও আনন্দ-উল্লাস করেবে না। কি দিয়েছ? কি বাদ পড়েছে? এসব নিয়ে মাতামাতি করা একদম অনুচিৎ। বরং নিরেট বোকামি।

পরীক্ষা ভালো হলে আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করবে। আনন্দ উল্লাস করবে না। আর পরীক্ষা মন মতো না হলে বা খারাপ হলে সবর করবে। অস্থির ও ধৈর্যহারা হবে না। মন খারাপ করবে না। বরং আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। তিনি যেনো অপমান থেকে বাঁচান। আর তিনিই পারেন কোনো ওসিলা ছাড়া কাউকে সম্মানিত করতে। আবার সম্মানীকে অপদস্ত করতে। বান্দার মন আল্লাহ তায়ালার হাতে।

তিনি যে দিকে চান—সে দিকেই তাকে ঘুরিয়ে থাকেন। পরীক্ষকের মনকেও তিনি ঘুরাতে পারেন। ভালো উত্তর পেয়েও তার মনোতুষ্টি অর্জন নাও হতে পারে। আবার সাধারণ কোনো বাক্য বা উত্তরেও তার মনোতুষ্টি অর্জন করা যেতে পারে। তাই সুখে দুঃখে আল্লাহকেই স্মরণ করবে। তাঁর দিকেই মুতাওয়াজ্জুহ হবে।

সব কিছুর ফয়সালা তাঁর কাছ থেকেই হয়। সব কিছুর ফয়সলা তো আসমান থেকেই হয়। যমিনে তো কেবল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই সকল আশা পূরণ বা বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্যে আল্লাহ তায়ালার দরবারে রোনাযারি করবে, দোয়া ও কান্নাকাটি করবে।

পরীক্ষায় নির্দিষ্ট ফলাফল অর্জনের আমল
কেউ যদি ১ম হতে চায় বা বোর্ডে স্টারমার্ক-স্টেন পেতে চায় অথবা এজাতীয় ফলাফলের নির্দিষ্ট কোনো টার্গেট ও আশা থাকে তাহলে তার করণীয় হলো—ভালো পরীক্ষা দেয়ার পাশাপাশি আগে পরে দুরুদ শরীফ পড়ে ‘সুরায়ে মুজাদালা’ তেলাওয়াত করার আমল করা। মকসুদ হাসেল হওয়ার আগ পর্যন্ত এ আমল চালিয়ে যাবে। দিনে রাতের যে কোনো সময় তেলাওয়াত করা যাবে। ধারাবাহিক আমল করতে হবে। আশা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমল বন্ধ করা যাবে না।

যদি কোনো দিন আমল ছুটে যায়। আমলের তাসির নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আপ্রাণ চেষ্টা করবে যাতে আমলের ধারাবাহিকতা বাকি থাকে। আমলটি পরীক্ষিত।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দুনিয়া-আখেরাতের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন। আমাদের অযোগ্যতাকে যোগ্যতায় রূপান্তরিত করুন! গুনাহগুলোকে নেক দ্বারা বদলে দিন এবং জীবনে-মরণে শতভাগ কামিয়াবী দান করুন। আমীন! (চলবে)

এ আয়োজনের বাকি পর্বের লেখাগুলো আমাদের  ‘শিক্ষাঙ্গন’ ক্যাটাগড়িতে পাবেন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ