মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫ ।। ৪ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৫ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিএনপি কি ইসলামপন্থীদের আস্থা হারাচ্ছে?  নোয়াখালীতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৩০০ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা গণতন্ত্রকামী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন হবে: তারেক রহমান ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী ৬৫৮ জন, হল সংসদে ১ হাজার ৪২৭ মাইলস্টোনের তিন শিক্ষক জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জুমার নামাজে না গেলে দুই বছরের দণ্ড হতে পারে  রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নির্বাচন জরুরি: মির্জা ফখরুল সৌদি আরবে নতুন হজ কাউন্সেলর কামরুল ইসলাম তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে না থাকার নির্দেশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০০০ বৃক্ষরোপণ

ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য নিয়ে যা বললেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাউসার লাবীব
সাব-এডিটর>

চলমান ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, এদেশের আলেমরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত হিতাকাঙ্খী। কেননা আমরা আলেমরা চাই না যে, 'যিনি আমাদেরকে এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন, তার কবরে এ ভাস্কর্যকে উসিলা করে আজাব হোক।' সম্প্রতি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কিছু অজ্ঞলোক আছে তারা বলছে, 'হুজুরেরা কেন ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে! এটাতো মূর্তি না। এটাতো ভাস্কর্য। ভাস্কর্য ও মূর্তি তো এক না। মূর্তি তো তাকে বলে যার পূজা মানুষ করে। আমাদের এটার পূজা তো কেউ করবে না। আমরা শুধু এটা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য দাঁড় করিয়ে রাখব। আমরা এটার কোন পূজা করবো না। মূর্তি তো বলা হয় হিন্দুরা যেটার পূজা করে। যেটাকে বানানোই হয় প্রতিমা হিসেবে।'

তারা এমন একটি ব্যাখ্যা দিয়ে ভাস্কর্য ও মূর্তি কে আলাদা করতে চায়। তারা এসব বলে এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য তৈরী করতে চায়। এর পাশাপাশি উলামায়ে কেরামের বক্তব্যকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে এবং তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতের আন্দোলন বলে চালিয়ে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় এবং উলামায়ে কেরামকে দেশবিরোধী বলে দাঁড় করাতে চায়।

আমি মিজানুর রহমান সাঈদ বলছি, ভাস্কর্য ও মূর্তির মাঝে কোন পার্থক্য নাই। স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, এ দুটি এক ও অভিন্ন। 'যেকোনোভাবে কোন মানুষের আকৃতিকে কোন কিছুর মাধ্যমে যদি এমনভাবে দাঁড় করানো হয়, যেটার ছায়া পরে। সেটাকে ইসলামে মূর্তি বলে।' চাই মানুষ এর পূজা করুক আর নাই করুক। সেটা মানুষ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য বানাক কিংবা পূজা করার জন্য।

মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, আমরা উলামায়ে কেরামগণ এই ভাস্কর্য বা মূর্তির বিরোধিতা করছি কোন বিদ্বেষের কারণে নয়। কিংবা কারো পক্ষ নিয়ে নয়। আল্লাহর শপথ করে বলছি! আমরা এই কারণে এ ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এটি তৈরি করেন, তাহলে তার শ্রদ্ধেয় পিতা, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে এর জন্য আল্লাহ আজাব দিবেন। যিনি আমাদের এই দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন তার কবরকে আজাবে ফেলতে চাই না। আমরা শুধু তাঁর কবরকে আজাব থেকে বাঁচাতে চাচ্ছি। মূর্তি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে চাচ্ছি। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।

আপনাদের যদি একথা বিশ্বাস না হয়, তাহলে আপনারা আমাদের কোনো হক্কানি ওলামায়ে কেরামের ভাস্কর্য বানিয়ে দেখেন। আপনারা আল্লামা থানভী, আল্লামা মাদানী, হাফেজ্জী হুজুর, আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী, আল্লামা আহমদ শফি কিংবা অন্য কোন বুযুর্গের ভাস্কর্য বানিয়ে দেখেন। এই ভাস্কর্য ভাঙার জন্য সর্বপ্রথম উলামায়ে দেওবন্দকে আপনারা মাঠে দেখতে পাবেন। আমরাই এ ভাস্কর্যকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করুন, তিনি আপনার পিতা বলে কিংবা আওয়ামী লীগের কেউ বলে তার ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছি না। আমাদের কোন মুরুব্বি কিংবা আকাবিরের ভাস্কর্য হলেও আমরা সেটার বিরোধিতা করবো। এমন কি আরো কঠোরভাবে বিরোধিতা করবো।

মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ আরও বলেন, দেখুন বর্তমান সময়ে মানুষ যেমন ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি বানায় এর চেয়েও সুন্দর ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি বানাতে পারত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সময়ের মানুষজন। প্রায় প্রত্যেক ঘরে মূর্তি ছিল। তারা মূর্তি বানাতে ছিল বেশ দক্ষ। যদি ভাস্কর্য বানালে কোন সমস্যা না থাকতো, যদি ভাস্কর্য মূর্তির মাঝে পার্থক্য থাকতো, তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলতেন যে, তোমরা কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সঙ্গে আমার একটি ভাস্কর্য বানিয়ে রেখে দাও যেটা কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ দেখে দেখে মন জুড়াতে পারে। আমার স্মৃতি যেন অব্যাহত থাকে। অটুট থাকে যেন আমার স্মৃতিচিহ্ন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটা করেননি। কেন করেননি? যদি এর মধ্যে কোন সমস্যা না থাকতো তাহলে কেন তিনি নিজের ভাস্কর্য বানালেন না? অথচ বর্তমান সময়ের ভাস্কর্য শিল্পীদের চেয়ে তাদের মান ছিল কয়েক হাজার গুণ বেশি। এরপরও কেন হয়নি আমার বিশ্ব নবীর ভাস্কর্য? না হওয়ার কারণ হলো, আমার নবীর আগমন হয়েছিল পৃথিবীতে মূর্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। কাবা ঘরের পাশে যে সব মূর্তি ছিল সেগুলোকে তিনি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, সত্য এসেছে মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। আমি এসেছি সত্য নিয়ে, মিথ্যার আভা আমি পৃথিবীতে থাকতে দেব না। সুতরাং বিশ্ব নবীর আগমন হয়েছিল ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি প্রতিস্থাপনের জন্য নয় নিশ্চিহ্ন করার জন্য। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ আন্দোলনকে কোন রাজনৈতিক ইস্যু মনে করবেন না। আপনাদের দলের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো কোন আন্দোলন মনে করবেন না। এটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় একটি আন্দোলন। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক শুধু ইসলামের ও ইমানের।

তিনি আরো বলেন, এই দেশ মুসলমানের দেশ। লাখো আউলিয়ার দেশ। শাহজালালের দেশ। শাহপরানের দেশ। শামসুল হক ফরিদপুরী দেশ। শাহ মাখদুমের দেশ। আহমদ শফীর দেশ। এদেশ মূর্তির দেশ হতে পারেনা। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এটা কখনো মেনে নেবে না।

আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, উলামায়ে কেরামের বক্তব্যকে বিকৃত করে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান তারা সাবধান হয়ে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন মহান নেতা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি। তার নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণেই আমাদের ছেলেমেয়েরা স্বাধীন দেশে বাস করতে পারছে। আমরা স্বাধীন দেশে নিশ্বাস নিতে পারছি। আমরা তার কোনো অবদানকে কোনভাবেই ছোট করিনি, করবোও না। যারা আমাদের বক্তব্যকে বিকৃত করছে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করছে। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করছে।

সবশেষে তিনি বলেন, আমরা উলামায়ে কেরামগণ মন উজাড় করে বলে দিতে চাই, যদি দেশের জন্য প্রয়োজন হয় নিজের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিব। যদি প্রয়োজন হয় যুদ্ধ জিহাদ করব। এমনকি ওলামায়ে কেরাম সেই জিহাদের প্রথম কাতারে থাকবেন। কিন্তু দেশপ্রেমের কথা বলে আমরা মূর্তির পক্ষপাতিত্ব করতে পারবো না।

-এএ


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ