বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৭ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
১৬ মাসে কোরআনের হাফেজ কক্সবাজারের ওবায়দুল করিম আমরা কোরআন কে জাতীয় সংসদে নিয়ে যেতে চাই: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে শনিবার বিক্ষোভ করবে জামায়াত  প্রশাসনকে দ্রুততার সাথে বস্তুনিষ্ঠ ব্যবস্থা নিতে হবে : ইসলামী আন্দোলন আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ জেলায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  যারা আমাকে অপহরণ করেছে তাদের বাংলাদেশি মনে হয়নি জীবন দিলেও যদি চরিত্র না বদলায় তাহলে ভাগ্যও বদলাবে না: শায়খে চরমোনাই শ্রীমঙ্গলে বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক: এক ঘণ্টায় তিন শিশু আহত ‘দুঃখজনক হলো ইসলামি অঙ্গন থেকে শক্তিশালী মিডিয়া গড়ার উদ্যোক্তা আমরা পাইনি’ ২৪ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি: সারজিস

মুক্তিযুদ্ধ ও জমিয়ত: একটি অভিমত ও আহবান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী
শায়খুল হাদিস ও মানুষ গড়ার কারিগর

ইতিহাস একটি জাতির দর্পণ। ইতিহাসে দেখা যায় জাতির প্রকৃত চেহারা। ইতিহাস তাই সংরক্ষণ যেমন জরুরী, তেমনি এর চর্চা এবং বিকাশও জরুরী ।

সংরক্ষণ ও চর্চার অভাবে ইতিহাসের অনেক কিছুই হারিয়ে যেতে পারে। অথবা অন্য কেউ ইতিহাসকে বিকৃত করে দিতে পারে। ফলে একটি জাতির আসল চিত্র ও চরিত্র ভুলভাবে চিত্রিত হতে পারে। এ জন্য একটি জাতির হারানো ইতিহাস পুণরুদ্ধার একটি জাতিকে নতুন জীবনদানের সমান।

ইতিহাস উদ্ধারের কাজটি সবার দ্বারা হয় না। অনেকেই ইতিহাস লিখেন। কিন্তু ইতিহাস আবিষ্কারের কাজ বিরল সাধনা ও অনুসন্ধিৎসা ছাড়া সম্ভব নয়। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জমিয়ত: জ্যোতির্ময় অধ্যায়’ বইটিতে ইতিহাসের চেপে রাখা এক অধ্যায় আবিষ্কারের কাজ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ফলে ইসলাম ও ইসলামী চেতনার মানুষ এবং আলেম-উলামাকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলে। এদেশে ইসলামী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রাখার প্রধান উপাদান হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অপব্যবহার।

এর মাধ্যমে যুগের পর যুগ ধরে ইসলামী শক্তিকে ঢালাওভাবে অপরাধী বানানোর চেষ্টা চলে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের সকল কৃতিত্ব কুক্ষিগত করে বিশেষ কিছু গোষ্ঠী দেশ ও জাতির উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। ইসলামের বিভিন্ন চিহ্ন ও মুসলিম সংস্কৃতির নানা প্রতীককে রাজাকারের প্রতিক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ইসলামপন্থীদের জাতীয় শত্রু হিসেবে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
কিন্তু সত্য হলো, মুক্তিযুদ্ধের গোড়ায় ভূমিকা রেখেছেন ইসলামী চেতনাধারী মানুষেরা এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। কারণ, ন্যায়, ইনসাফ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার নীতিবোধের জায়গা থেকে গোটা উপমহাদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছিলো জমিয়ত। ভারতের জমিয়ত তো বটেই, পাকিস্তানের জমিয়তও বাংলাদেশের পক্ষে ছিলো সোচ্চার। তিনদেশে একই সাথে দলটি শক্ত ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ত্বরান্বিত করেছিলো। বাংলাদেশের আর কোনো দল এই অবদান দাবি করতে পারবে না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো দলই উপমহাদেশব্যাপী বিস্তৃত ছিলো না। এই সত্যকে প্রমাণ করেছেন নিষ্ঠাবান ঐতিহাসিক ও গবেষক জনাব মুসা আল হাফিজ

যখন যে কেউ মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের অবদানের দাবি করছে এবং বিশেষ কৃতীত্ব আশা করছে, তখন জনাব মুসা আল হাফিজ নিছক দাবি উত্থাপন করছেন না, বরং দলিল পেশ করছেন। সেগুলো এমন নির্ভরযোগ্য দলিল, যার উপর আপত্তি তোলার অবকাশ নেই। আমরা বিস্মিত, এমন সব প্রমাণ কীভাবে এতোদিন সবার অগোচরে ছিলো! এ গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চায় মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে আশা করাই যায়। এ বই সামনে আসার পরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুনভাবে সাজানো আবশ্যক। আমি মনে করি, এ বইয়ে বিদ্যমান প্রমাণসমূহ নিজেই বাতিল করে দেবে এতোকাল ধরে মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে অপরাজনীতি ও অপপ্রচারকে।
এ গ্রন্থ প্রথমত: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং দ্বিতীয়ত: এদেশের আলেম-উলামার জন্য গৌরবের কারণ। ইসলামী চেতনাসম্পন্ন মানুষের জন্য আত্মপরিচয়ের এক স্মারক। এ বইয়ে উপস্থাপিত সত্যকে হাতে নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামপন্থী ও আলেম- উলামাকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আখ্যায়িত করার তৎপরতাকে অসম্ভব করে তুলতে হবে। বিদগ্ধ গবেষক জনাব মুসা আল হাফিজ নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগ থেকেই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নিপীড়িত বাংলার মানুষের জন্য লড়াই করছিলো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে শোষণবিরোধী লড়াইয়ে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছিলো। এমনকি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার দুই দিন আগেই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দলীয় প্রেসরিলিজের মাধ্যমে সারা দেশের নেতা-কর্মীদেরকে স্বাধীনতার জন্য ময়দানে নামার নির্দেশনা দেয়।

এ সত্যকে এতোদিন গুম করে রাখা হয়েছে। আমরা দাবি করছি, এ সত্যকে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দেয়া হোক। পাশাপাশি এটিও উল্লেখ করা হোক যে, ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছে।

এই গ্রন্থে এটাও প্রমাণিত যে, মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করার জন্য জমিয়তুল আনসার নামে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করেছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।

একজন নিরপেক্ষ চিন্তাবিদ হিসেবে ‘মুসা আল হাফিজ’ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতির অতীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা করেছেন। এ বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়েও অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। এরকম নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ আধুনিক রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সব মিলিয়ে বইটি এক ঐতিহাসিক ডকুমেন্টারি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মদানে নিজেদের গৌরবময় ভূমিকার সাথে পরিচিত হতে সকলের জন্য এ বই একান্ত পাঠ্য হওয়া উচিত।

আহবানে: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ