রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক মাহে রামাদান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মাওলানা মূসা আল-কাযীম।।
শিক্ষক, তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া>

পবিত্র মাহে রামাযান মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অফুরন্ত নিয়ামতের মাস৷ রহমত,মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির পয়গায় নিয়ে প্রত্যেক বছর হাজির হয় এ মাস৷ এ মাস পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস৷ এ মাসে রয়েছে এমন এক রজনী যা হাজার মাসের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম৷ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ মাসে মুমিনদের উপর সিয়াম সাধনা ফরজ করে দিয়েছেন৷ যাতে মুমিনদের তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জন হয়৷

যেমনটা ইরশাদ হচ্ছে হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে৷ যেমনিভাবে তোমাদের পুর্ববর্তিদের উপর ফরজ করা হয়েছে৷ যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো৷ সূরাঃ বাকারা, আয়াতঃ১৮৩

ইসলামী শরীয়াহ মানবজীবনের একটি পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান৷ মহান আল্লাহ তায়ালা ইসলামী বিধানে কতিপয় বিষয় সকল মুমিনের উপর অপরিহার্য করে দিয়েছেন৷ যেমনঃ ফরজ-ওয়াজিব নামায,ফরজ রোযা৷ আবার কতিপয় বিষয় শুধুমাত্র সামার্থবান যারা তাদের উপর অপরিহার্য করেছেন৷ যেমনঃ হজ্ব,যাকাত৷ আবার কতিপয় বিষয় মুমিনের স্বেচ্ছাধীন রেখেছেন৷ যেমনঃ নফল,মুস্তাহাব ইত্যাদি৷ মানভেদে প্রত্যেকটার বিধানও ভিন্ন ভিন্ন৷

ফরয বিধানগুলো এমন, যে ক্ষেত্রে কোন স্বেচ্ছাচারিতা,কোন ধরনের মনগড়া অজুহাত কিংবা কোন রকম শৈথিল্যের সুযোগ নেই৷ তবে হ্যাঁ শুধুমাত্র ইসলামী শরীয়াহ যে ওযর গ্রহণযোগ্য বলে সমর্থন করেছে সেটাই ধর্তব্য৷ তার কারন শরীয়াহ মানুষের উপর তার সাধ্যাতীত কোন বিষয় কখনো চাপিয়ে দেয়নি৷ যার ফলে শরীয়াতে ওযর,ভুল ইত্যাদী বিষয়গুলোকে বেশ মূল্যায়ণ করা হয়েছে৷

ফরয বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাহে রামাযানের ফরয রোযা৷ যা প্রত্যেক মুমিনের উপর ফরয করা হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রেও শরীয়াত দুটি ওযর গ্রহণযোগ্য বলে সমর্থন করেছে৷ আর তা হলো অসুস্হতা ও সফরের হালত৷ আর যারা রোযা রাখতে চিরতরে অক্ষম তাদের জন্য ফিদইয়ার বিধান৷

যেমনটা ইরশাদ হচ্ছেঃ অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্হ অথবা সফরে থাকবে তারা অন্য সময়ে এই দিনগুলোর রোযা কাযা করে নিবে সূরাঃবাকারা আয়াতঃ ১৮৪ (অংশ বিশেষ)।

শ্রমিকের কষ্টসাধ্য শ্রমকে ওযর ধরে মাহে রামাযানে রোযা ভেঙ্গে সুবিধামত অন্য সময়ে রোযা রাখার কোন সুযোগ ইসলামী শরীয়াতে কুরআন-হাদীস ইজমা-কিয়াস কিংবা বিজ্ঞ কোন ইমাম বা ফকীহ সমর্থন করেননি৷ কারন রোযার ওযরের বিধানতো সুস্পষ্ট কুরআনেই বর্নিত রয়েছে৷

এ ক্ষেত্রে গাযওয়ায়ে তাবূকের কথা স্বরণ করা যেতে পারে৷ কতিপয় সাহাবী গরমের অজুহাতে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেননি৷ আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি এতটা অসন্তষ্ট হয়েছিলেন যে তাদের মসজিদে নববীর খুঁটির সাথে নিজেদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে অনশন করে তাওবা কবূলের এক ঐতিহাসিক ঘটনা সূরায়ে তাওবাতে উল্লেখ রয়েছে আল্লাহ তায়ালা তাদের গরমের অজুহাতের প্রতিউত্তরে জবাব দিয়ে ইরশাদ করেছেন তারা বলল তোমরা গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়োনা৷ বলুন জাহান্নামের আগুন আরো মারাত্মক গরম৷

যদি তারা বুঝত৷ যেখানে গরমের কারনে জিহাদ পরিত্যাগের কোন সুযোগ নেই৷ সেখানে তুলনামূলক জিহাদের চেয়ে অনেকাংশে সহজ রোযা গরম আর শ্রমের অজুহাতে কি করে পরিত্যাগ করা যায়?

মাহে রামাযানে দুস্হ-দরিদ্র,দিনমজুর ও খেঁটে খাওয়া মানুষদেরকে সহযোগীতা করার উপর সামার্থবান মুমিনদেরকে বেশ উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে৷ যাতে অসহায় মানুষগুলো নির্বিঘ্নে সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারে৷ হাদীসে এসেছে নবী সাঃ মাহে রামাযানে অন্য সময়ের তুলনায় দানের হাত বেশি সম্প্রসারিত করে দিতেন৷ তিনি ঝড়ের বেগে মাহে রামাযানে মানুষদেরকে দান করতেন৷

আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনতো হাজারো কষ্ট, ত্যাগ ও প্রতিবন্ধকতার মাঝে বান্দার করে যাওয়া আমলগুলো বেশি পছন্দ করেন৷ পাহাড়ের পাদদেশে রাখালের একাকি নামাযের হাদীসটি তারই প্রমাণ বহণ করে৷ অপরদিকে একজন প্রকৃত শ্রমজীবি মুমিনতো মাহে রামাযানের আগেই স্বল্প সঞ্চয় করে হলেও ফরজ সিয়াম সাধনার পুর্বপ্রস্ততি গ্রহণে সচেষ্ট থাকবে৷

দুনিয়ার ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই ত্যাগ ছাড়া কখনো সাফল্যের চুড়ায় উঠা যায়না৷ ঠিক তদ্রুপ আখিরাতের জীবনেও কোন মুমিন দুনিয়ার বিরহ ও ত্যাগ ছাড়া জান্নাতের চিরন্তন সুখ-সমৃদ্ধির চুড়ায় পৌঁছা আদৌ সম্ভব নয়৷

সকল ইবাদাতের মধ্যে রোযা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম কেননা হাদীসে কুদসীতে এসেছে আল্লাহ বলেন রোযা আমার জন্য আর আমিই তার প্রতি দিব৷

আসুন ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত মাহে রামাযানকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণে অমূল্য সম্পদ মনে করি৷

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ