রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


ইসলামি শিক্ষার রূপপ্রকৃতি, ধরন ও পরিধির বিস্তৃতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি নাজমুল ‍হুদা নোমানী।।

ইসলামী শিক্ষাই একমাত্র মনুষ্যত্বকে দান করেছে অন্য সব মাখলুক হতে স্বাতন্ত্রিকতা ও সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকের মর্যাদার মুকুট। মুসলমানের কল্যাণকর সমস্ত কাজের ভিত্তি হল দুই জিনিস

১। ঈমান ২। সহিহ নিয়ত

মূল আলোচনা: ১। কোন শিক্ষাকে ইসলামী শিক্ষা বলার জন্য তিনটি শর্ত: (১) তাওহিদ (২) রিসালাত (৩) আখেরাত

এই তিনটি বিষয় অন্তরে বিশ্বাস করে কল্যাণকর যে কোন বিদ্যা শিক্ষাই হল ইসলামী শিক্ষা।

এভিত্তিতে আরবি ভাষা ও তার সহযোগিবিদ্যা সরফ- নাহু, আদব, বালাগাত, মানতিক, ফলসাফা, ক্বিরাত, হিফয, উসুল, ফিকহ, হাদিস, তাফসির, সহিহ তাসাউফ, ইলমুল কালামসহ আখেরাতে কল্যাণসাধনকারী সকলবিদ্যা উপরোক্ত তিনটি শর্তের সাথে ইসলামী ইলম তথা ইসলামী জ্ঞান৷

তেমনিভাবে ডাক্তারি, ইন্জিনিয়ারিং, ভাষাবিদ্যা, ব্যরিস্টারি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ভুমিবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, সাংবাদিকতা, প্রতিরক্ষাবিদ্যা, জনপ্রশাসন-জনশৃংখলারক্ষাবিদ্যা,পানিবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, পদার্থবিদ্যাসহ দেশ- দশের মানবকল্যাণে উপকারি সকল দুনিয়াবীবিদ্যাও ঐ তিন শর্তে ইসলামী ইলম তথা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান৷

উক্ত তিন শর্তের কোন একটির ব্যত্যায় ঘটলে আখেরাতের ইলম আর ইসলামী ইলম -তথা জ্ঞান হিসেবে পরিগণিত হয়না,বরং তা ধর্মনিরপেক্ষ অনৈসলামী দুনিয়াবী জ্ঞান হয়ে যায়, যেমন মুসতাশরিকিন তথা ওয়ারিয়ান্টালিস্টদের কুরআন- হাদিস- ফিকহ-তাসাউফ- ইলমুল কালামসহ সকল প্রকার ইসলামী ইলমচর্চা।

ঠিক তেমনিভাবে উক্ত তিন শর্তের কোন একটি শর্তে ঘাটতি থাকলে দুনিয়াবী কল্যাণকর ইলমও তখন আর ইসলামী ইলম তথা ইসলামী জ্ঞান হিসেবে বাকি থাকেনা.বরং তা হয়ে যায় ধর্মনিরপেক্ষ অনৈসলামী দুনিয়াবী জ্ঞান-বিজ্ঞান৷

২। ইসলামী শিক্ষার কার্যকারী সুমিষ্ট ফল আখেরাতে পাওয়ার জন্য তিনটি শর্ত: (১) এই বিদ্যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য, এই নিয়তে বিদ্যা শিক্ষা করা ,দুনিয়া হাসিলের লোভে শিক্ষা অর্জন না করা,এবং তা উপার্জনের জন্যই শিক্ষাকে মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করা।

(২) শিক্ষাটি দুনিয়া বা আখেরাতের কল্যাণমুলক হওয়া। (৩) দেশ-দশ তথা মানব ও তামাম মাখলুকের সেবা-খেদমতের নিয়তে বিদ্যা শিক্ষা করা,বিজনেস- ব্যবসার নিয়ত না থাকা এবং শিক্ষাকে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।

এই তিনটি শর্তের একটি শর্তও যদি নষ্ট হয়,তাহলে সে ব্যক্তি দুনিয়াবী কল্যাণকর ইসলামী শিক্ষার বিনিময়ে কোন সওয়াব বা ফল আখেরাতে আল্লাহর কাছে পাবেনা৷

যেমন কসাই ডাক্তার,ব্যবসায়ি,আইনজীবী,জনপ্রতিনিধি,জনশৃংখলারক্ষাকারী,প্রতিরক্ষাবাহিনীসহ দুনিয়াবী কল্যাণকর ইসলামী ইলমকে অপব্যবহারকারী সকল শ্রেণী- পেশার নাগরিকগণ৷

কারণ তার নিয়ত ও উদ্দেশ্য ছিল দুনিয়া উপার্জন,আল্লাহ এবং আখেরাত তার নিয়ত ও উদ্দেশ্য ছিলনা,তাই শিক্ষাকে সে শুধুই দুনিয়া উপার্জনের মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবসায়িক পণ্যরুপে অপব্যহার করেছে৷,আর দুনিয়াতে সে তা পেয়ে গেছে,তাই আখেরাতে তার জন্য আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই৷নাউযুবিল্লাহ

আর উল্লেখিত তিনটি শর্তের একটি শর্তকেও নষ্টকারী আলেম,তালিবে ইলম; আখেরাতের কল্যাণকর ইসলামী ইলম শিক্ষার বিনিময়ে কোন সওয়াব ও পুরষ্কার আল্লাহর কাছে পাবেনা,বরং আখেরাতের ইসলামী ইলমকে দুনিয়া হাসিলের মুখ্য হাতিয়ার রুপে ব্যবসায়িক পণ্যহিসেবে অপব্যবহারকরায় তার ঠিকানা হল সর্বনিকৃষ্ট জাহান্নাম,

এবং তার শাস্তি দুনিয়াবী কল্যাণকর ইসলামী ইলমের অপব্যবহারকারীর শাস্তির তুলনায় হাজারগুণ বেশি৷

যেমন কসাই ওয়ায়েজ বক্তা,পীর, বা ইলমহীন বক্তা- পীর,ইসলামী নেতা,জাতীয়- আন্তর্জাতিক ক্বারী-হাফেয,এবং ঐ ইমাম- খতীব- হাফেয- নুরানী ক্বারী বা মুদাররিস যারা একস্হানে দ্বীনের খেদমত বেশি,প্রয়োজনও বেশি, কিন্তু তুলনামুলক ওযিফা কম(সংসার জীবন চালাতে এরচেয়ে বেশি অর্থের কোন প্রয়োজনও তার নেই, আবার প্রতিষ্ঠানেরও বাস্তবিক সমস্যা রয়েছে)

আর অন্যস্হানে দ্বীনের খেদমত কম, প্রয়োজনও কম,কিন্তু তুলনামুলক ওযিফা- হাদিয়া বেশি, তখন ঐ ইমাম - খতীব- হাফেয-নুরানী ক্বারী বা মুদাররিস শুধুই দুনিয়া হাসিলের উদ্দেশ্যে পুর্বের দ্বীনি খেদমত মসজিদ- মাদরাসা ছেড়ে এই স্হানে চলে আসে,এমনধরনের ওয়ায়েজিন- পীর- ইসলামী নেতা,মাওলানা,মুফতী,মুহাদ্দিস,মুফাসসির,ইমাম- খতীব,হাফেয, ক্বারী,লেখক,মুজাহিদ,মুদাররিসসহ সকল শ্রেণী-পেশার দ্বীনি ব্যক্তিগণ৷

কারণ তার উদ্দেশ্য আখেরাতের কল্যাণকর ইসলামী ইলম দ্বারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা ছিলনা,বরং দুনিয়া হাসিলই ছিল তার মুল উদ্দেশ্য, সে কারণেই সে আখেরাতের ইসলামী ইলমকে শুধুমাত্র দুনিয়া হাসিলের মুখ্য হাতিয়ার রুপে অপব্যবহার করেছে,আর দুনিয়া কামিয়েছে.কিন্তু নাম দিয়েছে দ্বীনের খেদমত৷যেহেতু তার নিয়ত বদ ছিল,আর ঐ বদ নিয়তে সে আখেরাতকে দুনিয়া অর্জনের সিড়ি আকারে ব্যবহার করেছে,আর সে তা পেয়েছে ,তাই আখেরাতে তার জন্য আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই৷ নাউযুবিল্লাহ

টীকা কুরআন-সুন্নাহ হল কল্যাণকর দুনিয়া- কল্যাণকর আখেরাত উভয়বিদ্যা শিক্ষার একমাত্র চাবিকাঠি ও সাগর-মহাসাগর৷

তাই শুধুমাত্র আখেরাতমুখী মাদারাসা শিক্ষাকে ইসলামী শিক্ষা বলা আর দুনিয়ামুখী জেনারেলশিক্ষাকে অনৈসলামী শিক্ষা বলা ঠিক নয়৷ইহা ভুল দর্শন৷

আমাদের মনে রাখতে হবে উল্লেখিত ছয় শর্ত বজায় রেখে আখেরাতমুখী মাদরাসা শিক্ষা যেমন ইসলামী বিদ্যা ও শিক্ষা হতে পারে তেমনিভাবে উল্লেখিত ছয় শর্ত বজায় রেখে দুনিয়াবী শিক্ষাও আখেরাতমুখী ইসলামী শিক্ষা হতে পারে।

আবার উল্লেখিত শর্তসমুহের কোন একটি লংঘন করলে দুনিয়ামুখী জেনারেলশিক্ষাও যেমন ধর্মনিরপেক্ষ অনৈসলামী দুনিয়াবী শিক্ষা হয়ে যায়,এবং আখেরাতে ফলশুন্য হয়ে যায়।

তেমনিভাবে উল্লেখিত কোন একটি শর্ত লংঘন করার দ্বারা আখেরাতমুখী মাদরাসার শিক্ষাও ধর্মনিরপেক্ষ অনৈসলামী দুনিয়াবী শিক্ষা হয়ে যায়,এবং আখেরাতে ফলহীন হয়ে যায়৷

আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহভাবে ইসলামী জ্ঞানকে বুঝে, কামেল দ্বীনের কামেলভাবে দুনিয়া- আখেরাতের সমন্বয় সাধন করার ফিকহ ও ফাহম দান

লেখক: প্রধান মুফতি, মারকাযুল ফিকহ আলইসলামী ঢাকা।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ