রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


নারী ওয়ায়েজদের মাহফিল, পোস্টার ভাইরাল, কী বলছেন আলেমরা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ ।।

সম্প্রতি স্যোশাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, চট্রগ্রামের বাকলিয়ার সিলভার প্যালেস কমিউনিটি হলে আগামী ১৪ ডিসেম্বর নারীদের নিয়ে একটি তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ মাহফিলের সভাপতি থেকে শুরু করে বক্তা কিংবা উপস্থাপক সবাই নারী।

সাধারণত কুরআন হাদিসের আলোচনার মাহফিলগুলোতে এ দৃশ্য বিরল। স্বভাবতই এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম। অনেকে ট্রল করছেন আবার অনেকে তীব্র কটাক্ষবাণ। আবার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেও ব্যখ্যা  করছেন অনেকে।

জানা গেছে, হল রুমে সম্পূর্ণ রূপে পর্দা রক্ষা করেই দীর্ঘদিন ধরে এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় সমালোচনায় পড়েছে মাহফিলের আয়োজক কমিটি।

মুহাম্মাদ আসাদুর রহমান নামের একজনের ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি শেয়ার করে লেখা হয়, ‘ওয়াজের মাহফিলে মহিলা, কিয়ামত অতি নিকটে। নাউযুবিল্লাহ।’

আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আজব কারবার! ওয়াজ মাহফিলে মহিলা। আয়োজকরা কতই না বুদ্ধিমান, মাহফিল কি স্বার্থক..?’

No photo description available.

এদিকে এ আয়োজন নিয়ে ইতিবাচক ভাবনাও শেয়ার করছেন অনেক নেটিজেনরা। তারা বলছেন, যদি এ মাহফিলের শ্রোতা শুধু নারী এবং পর্দার ভেতরেই এ আয়োজন সম্পন্ন হয় তবে কোন অসুবিধার কিছু নেই।

সাঈদ উজ্জল নামে একজন এই পোস্টার সম্বলিত একটি পোস্টে প্রশ্ন করেছেন ‘কেন? নারীরা কি ইসলাম নিয়ে আলোচনা করতে পারবে না? ইসলাম কি শুধু পুরুষের জন্য নাজিল হইছে?’

তরুণ লেখক ও শিক্ষক হাসান আল মাহমুদ পোস্টারটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নিউজফিডে এ পোষ্টারটি ভেসে বেড়াচ্ছে। কেউ বলছেন যথার্থ, কেউ করছেন বাজে মন্তব্য। আমি বলতে চাই, যদি এর শ্রোতা শুধু ওরাই হয় এবং আওয়াজও ওই গন্ডির ভেতরেই থাকে, তাহলে এমন আয়োজন সাধুবাদযোগ্য। আমি মনে করি, এ ধরণের আয়োজন আরও হোক। দ্বীনি বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক পুরুষে পুরুষে, নারীতে নারীতে।’

কী বলছেন আলেমরা?

এ ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ওয়াজ মাহফিলগুলোতে নারীদের উপস্থিত কতটা কাম্য, মাহফিলে নারীদের পর্দাসহ বা পর্দাহীন উপস্থিতি কতটা যৌক্তিক? চলছে যুক্তিতর্কও।

এ বিষয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদের ইফতা বিভাগের প্রধান মুফতি হিফজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘরোয়া পরিবেশে পর্দা সহিত মাহফিলের আয়োজন করলে, এতে নাজায়েজ কিছু দেখছি না।’

পোস্টার করে প্রচারণা চালানোও ইতিবাচক বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ এ আলেমেদীন। ‘এই মাহফিলে শুধু নারীরা ওয়াজ করবেন এবং নারীদের অংশগ্রহণের জন্য পোস্টার করে প্রচার করা হয়েছে, তাতে কোন ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না।’

সাংবাদিক ও মুহাদ্দিস মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীও এ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘চট্রগ্রামের মাহফিলের ভাইরাল পোস্টারটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেখানে শরিয়তসম্মত উপায়ে মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মাহফিলের আয়োজক কমিটি আমাদের নিজেদের মানুষ। তাদের তত্বাবধায়নে শরিয়তবিরোধী কোন কাজ হবে না বলে আমার বিশ্বাস রয়েছে।’

অন্য কোথাও এ ধরণের আয়োজন করলে কোন সমস্যা আছে কিনা, জানতে চাইলে বিশিষ্ট এ আলেম সাংবাদিক বলেন, ‘শরিয়তের শর্ত মেনে কেউ যদি এ ধরণের আয়োজন করে তবে কোন সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না।’

‘যারা সমালোচনা করছেন তারা কেন যে সমালোচনা করছেন তা আমার বুঝে আসছে না। একজন নারী যদি আলেমা হতে পারেন, হাদিসের দরস দিতে পারেন তবে ধর্মীয় আলোচনা কেন করতে পারবেন না? এটা তো শরিয়তবিরোধী কোন কাজ নয়।’ যোগ করেন মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।

আরএম/

 

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ