বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


আমার জীবনের শুরুর মুহূর্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।

আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি সপ্তাহে দুদিন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে। আজ প্রকাশ হলো ১৩ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মাওলানা  উমর ফারুক ইবরাহীমী।]

পূর্বে তো গেল আমার আট ভাইবোনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। আর আমি হলাম তাঁদের সবার ছোট। পূর্বে যেমনটা বলে এসেছি- আমার জন্ম, ৫ শাওয়াল, ১৩৬২ হিজরি সনে।

হযরত হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রহ. এর ইন্তিকাল আমার জন্মের প্রায় তিন মাস পূর্বে হয়েছিলো। তাই আমি ছাড়া, আমার অন্যান্য সব ভাইবোনের হজরতের যেয়ারত লাভ করার সৌভাগ্য হাসিল হয়েছে। অথবা অন্তত হযরতের মুবারক নযর তাদের উপর পড়েছিলো।

আমি উভয় সৌভাগ্য থেকে মাহরুম রয়ে গেলাম এবং আমার সব ভাইবোনের নাম স্বয়ং হযরত নিজে রেখেছেন। যদিওবা আমার নাম সরাসরি হযরতের পক্ষ থেকে রাখার প্রশ্ন ছিলো না, তথাপি যখন আব্বাজান আমার কোন বড় ভায়ের নামের দরখাস্ত পেশ করতেন, তখন হযরত থানবি রহ.পূর্বের নামের সাথে মিলিয়ে এক সাথে কয়েকটি নাম বলে দিতেন। আর বলতেন, এগুলোর মধ্য থেকে কোন একটা নির্বাচন করা যেতে পারে।

সেরকম কয়েকটি নামের লিস্টে ‘মুহাম্মদ তাকি’ও একটি ছিলো। যেটা আমার পূর্বে অন্য কোন ভায়ের নাম রাখা হয়নি। খুবসম্ভব আব্বাজান আমার নাম সেই লিষ্ট থেকেই নির্বাচন করেছেন।

যেহেতু আব্বাজান হযরত থানবি রহ.এর ইন্তেকালের পর বেশিরভাগ কাজ তাঁর প্রিয় উস্তাজ ও মুরুব্বি হযরত মিয়া সাহেব রহ.(হযরত মাওলানা সায়্যিদ আসগর হুসাইন দেওবন্দি) এর মশওয়ারায় করতেন, খুবসম্ভবত আমার নাম রাখার ক্ষেত্রে আব্বাজান তার মশওয়ারাও নিয়েছেন।

মিয়া সাহেব, সাহেবে কাশফ ও কারামাত বুযুর্গও ছিলেন বটে।

আমার বড় তিনভাই দারুল উলুম দেওবন্দে পড়তেন। আমি তো তখনো কায়দা বাগদাদিও পড়া শুরু করিনি। তাই দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার প্রশ্নইবা কী ছিলো! তবে কখনো কখনো বড় ভাইদের সাথে দারুল উলুম চলে যেতাম।

তাই সে সময়ের দারুল উলুমের ঝাপসা স্মৃতি আমার মনের ক্যানভাসে আজও বদ্ধমূল হয়ে আছে।

‘শিশুকাল এবং মায়ের কোল, বসন্তের পরিবেশের মতোই মনজুড়ানো হয়’।

আমাদের ঘরের পেছনের দিকে অর্থাৎ পশ্চিমাংশে আমাদের দাদা হযরত মাওলানা ইয়াসিন রহ.এর ঘর ছিলো। আমাদের দাদু যিনি হযরত গাঙ্গুহি রহ. এর হাতে বাইয়াত ছিলেন, তিনিও সেই ঘরে থাকতেন।

আমাদের আর তাদের ঘরের মাঝে দিয়ে একটি সুরঙ্গ পথ ছিলো। আমরা সেটাকে নেমদারি বলতাম। দাদার ঘরের আশেপাশে আমাদের বংশের অন্যান্যদের ঘর ছিল। ঘরের পাশ ঘেঁষে একটি সরু পথ গিয়ে মিলেছে চক নামক এলাকায়।

'চকের মাঠ' আমাদের ছোটদের খেলাধুলোর জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো। তখনকার কল্পনায় সেটি আমাদের জন্য ষ্টেডিয়ামের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলো না।

পাড়া,মহল্লার ছেলেপুলেরা সব এখানেই খেলতে আসতো। সেখানে খেলাধুলোর জন্য না টাকাপয়সার প্রয়োজন হতো, না অভিজ্ঞ কোচের কাছে অনুশীলন করতে হতো।

আমাদের বড় ভাইও অনেক সময় আসরের পর সেখানে গিয়ে বিভিন্নরকম দেশীয় খেলা খেলতেন। আজ যদ্দুর মনে পড়ে, তিন-চার বছরের এক ছোট্ট শিশুর বিশালাকারের এই পৃথিবী, ঘর থেকে শুরু হয়ে সেই চকে গিয়ে মিশে যেতো। সেখানে আমি নিজে খেলার চেয়ে অন্যদের খেলা দেখেই বেশি আনন্দ উপভোগ করতাম।

যেমনটা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছিলাম, তিন ভাতিজি এবং এক ভাতিজা বয়সে আমার চেয়ে এক থেকে তিন বছরের বড় ছিলো। তাই আমার নিজেদের বাইরে গিয়ে কোন বন্ধুবান্ধব তালাশের প্রয়োজন হতো না। এই ভাতিজা, ভাতিজিদের সাথেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো।

ছোট্টবেলায় আমার খেলাধুলোর সাথী বলতে তারাই ছিলো। সে যুগে আমাদের ছোটদের খেলাধুলা বলতে ছিলো, কানামাছি ইত্যাদি। এর জন্য আমাদের ঘরই যথেষ্ট ছিলো। বাইরে 'চকের ষ্টেডিয়ামে' যাবার দরকার হতো না।

ডাংগুলি আমাদের সাধ্যের বাইরের খেলা ছিলো। তাছাড়া এমনিতেও আমি কোন খেলায়ই উল্লেখযোগ্য দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি। চলবে ইনশাআল্লাহ...

ভুল সংশোধন।

প্রিয় পাঠক!
আল বালাগ সফর ১৪৩৯ হি. নভেম্বর ২০১৭ ইং. সংখ্যায়, নায়েবে রঈসুল জামিয়া দারুল উলুম করাচি, হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি দা.বা. এর ধারাবাহিক আত্মজীবনী 'ইয়াদে'তে হযরতের জন্মসন ভুলবশত: ১৩৪২হি. লেখা হয়েছিলো।

সঠিক জন্মতারিখ হচ্ছে, ১৩৬২ হি.,১৯৪৩ ইং.সন। পাঠকদের সমীপে সংশোধনের অনুরোধ রইলো। -আলবালাগ কর্তৃপক্ষ।

‘নুকতাবিহীন ৪০০ পৃষ্ঠার সিরাতগ্রন্থ লেখার অনন্য কৃতিত্ব আমার সপ্তম ভাইয়ের’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ