রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ।। ৮ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের আরও এক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত ইরানকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা দেবে রাশিয়া: পুতিন খেলাফত মজলিসের রংপুর বিভাগীয় তরবিয়তি সভা উত্তরসূরিদের নাম ঘোষণা করলেন খামেনি ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের ড্রোন হামলা, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে বিস্ময় সৃষ্টি আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় ইসলামি শক্তির ঐক্য অপরিহার্য: ইবনে শাইখুল হাদিস পৃথিবীর শান্তি ও মানবতা ধ্বংস করছে ইসরায়েল, পতন অনিবার্য: হেফাজত  যে মাওলানার কাছে ভরাডুবি হয়েছিল সেই ফজলুর রহমানের হল না ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঢামেক শিক্ষার্থীদের, আন্দোলন চলবে

গাছেই ১৬ বছর!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

gasআওয়ার ইসলাম: একটু দূরেই জঙ্গল। গাছের উপর থেকেই তিনি দেখেছেন, হাতি বাচ্চা দিচ্ছে। রাতের বেলায় তলা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চিতা। ওই দূরে বাইসন বাবাজীবন একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। আর অজগর !‌ এই শীতে সে মনে হয় শীতঘুম দিয়েছে। নইলে অন্যসময় সেও তো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়।
এমন কতকিছুই তিনি দেখে আসছেন। আগে ভয় করত। এখন ব্যাপারটা গা সওয়া হয়ে গেছে। জন্তুরাও বোধ হয় বুঝে গেছে, এই নিরীহ লোকটা তাদের কোনও ক্ষতি করবে না। আর তিনিও বুঝে গেছেন, এতদিন যখন কিছু হয়নি, তখন খামোখা ভয় পেয়ে লাভ নেই।

তিনি কোনও ফরেস্ট রেঞ্জার বা বন দপ্তরের কোনও কর্মী নন। গাছের উপরেই তাঁর সংসার।  কারও কাছে তিনি গাছবাবা। কারও কাছে বেতাল বাবা। এইসব নামগুলো এতটাই জনপ্রিয়, তার আড়ালে আসল নামটাই হারিয়ে গেছে। আসল নাম হল জিগার লোহার। বয়স ৪৫।

ডুয়ার্সের কালচিনি ব্লকের রায়মাটাং । একইসঙ্গে পাহাড়, নদী, জঙ্গলের ত্রিবেণীসঙ্গম। একদিকে ছোট্ট বনবস্তি। অন্যদিকে ভারত–‌ভুটান সীমান্ত। একসময় এখানে কে এল ও জঙ্গিদের আনাগোনা ছিল। তাই অস্থায়ীভাবে তৈরি হয়েছিল এস এস বি ক্যাম্প। সেই ক্যাম্প এখন স্থায়ী চেহারা নিয়েছে। সেখান থেকে একশো মিটার গেলেই দেখা মিলবে বিশাল এক বটগাছের। এমন বটগাছ হয়ত অনেক আছে। কিন্তু এই গাছের বিশেষত্ব হল, এই গাছের কোটরেই বাসা বেঁধেছেন একজন মানুষ। নেহাত শখে একদিন বা দুদিনের বাস নয়, এই গাছের উপরেই টানা ১৬ বছর কেটে গেল। অনেকেই রায়মাটাংয়ে বেড়াতে আসেন। নদী, জঙ্গল বা পাহাড়ের পাশাপাশি এই গাছটাও যেন পর্যটকনের মানচিত্রে চলে এসেছে।

হঠাৎ গাছে বাসা বাঁধার ইচ্ছে হল কেন ?‌ আগে কাছেই একটা বাড়িতে থাকতেন। পারিবারিক অশান্তিতে ঘর ছাড়তে হয়। কোথায় থাকবেন ?‌ অনেকদিন বেপাত্তাই ছিলেন। আবার ফিরে এলেন। এবার আর সমতলে নয়। একেবারে বাসা বাঁধলেন গাছের কোটরে। মাটি থেকে প্রায় দেড় তলা উপরে। দিনের বেলায় মাঝে মাঝে নামেন। আশপাশের এলাকায় টুকটাক ভিক্ষে করেন। এখান ওখান যদি খাওয়া জুটে যায়, তাহলে তো ভালই। তারপর আবার উঠে পড়েন গাছের কোটরের নিশ্চিত আশ্রয়ে। কোনও বিপদের ভয় নেই ?‌ জিগার জানালেন, ‘‌সে তো আছেই। আগে ভয় করত। কিন্তু এখন আর তেমন ভয় করে না। অভ্যেস হয়ে গেছে।’‌ বছর খানেক আগের কথা। একটা জরুরি কাজে নিচে নেমেছিলেন। সন্ধে নাগাদ গাছে উঠতে গিয়ে দেখেন, তাঁর বাসায় এক অজগর। অনেক কষ্টে সেই অজগরকে সরিয়ে নিজের বাড়ি দখলমুক্ত করলেন। তারও আগে, তখন তাঁর মাচা ছিল কিছুটা নিচে। এক হাতি মাঝে মাঝেই শুঁড় গলিয়ে দিত। বাধ্য হয়ে, আরও কিছুটা উঁচুতে আশ্রয় নিতে হল।

বছর পাঁচ আগের কথা। তাঁর গাছে থাকার কথা শুনে এগিয়ে এলেন কালচিনির বি ডি ও। ইন্দিরা আবাস যোজনায় তাঁর জন্য একটা বাড়ি করে দিলেন। সেই বাড়িতে মাত্র দুদিন ছিলেন। তারপর ফিরে গেলেন সেই গাছে। পাকা বাড়ি ছেড়ে আবার গাছে কেন ?‌ জিগার বলেন, ‘‌ধুর, এখন আর বাড়ি–‌ঘর পোষাবে না। তার থেকে আমার গাছই ভাল। ওখানে অনেক নিশ্চিন্তে থাকি।’‌ প্রিয় পাঠক, এই শীতে যদি ডুয়ার্সে যান, চাইলে গাছবাবার সঙ্গে দেখা করে আসতে পারেন। নইলে আপনার বেড়ানোটা হয়ত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

সূত্র: আজকাল ইন্ডিয়া


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ