রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


এশিয়ার বৃহত্তম বটবৃক্ষটি বিলুপ্তির পথে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

3খালিদ হাসান, ঝিনাইদহ থেকে : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুইতলা মল্লিকপুর গ্রামে ৩০০ বছরের পুরাতন এশিয়ার সবচেয়ে বড় বটগাছটি এখন আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে। অযত্ন-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বটগাছের অস্তিত্ব আজ নষ্ট হতে চলেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে চিকন পিচের রাস্তা মল্লিকপুর ছুঁয়েছে। ১২ কিলোমিটার পথ এগুলে সামনে পড়বে সেই এশিয়ার বৃহত্তর বটগাছটি। এটি সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ। ৮ নং মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় বর্তমানে ১১ একর জমি জুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব। এর উচ্চতা আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট। বর্তমানে বটগাছটি ৫২টি গাছে রূপ নিয়েছে।

বিবিসির জরিপে, ১৯৮২ সালে ‘এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম’ খ্যাত বটগাছের অবস্থান ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। কারো কাছে সুইতলার বটগাছ, কারো কাছে সুুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ; আবার কারো কাছে বেথুলীর বটগাছ বলে এটি পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে এর অবস্থান বেথুলী মৌজায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রায় ৩০০ বছর এই গাছের সৃষ্টি সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানাতে পারেনি এলাকাবাসী। এলাকার বয়োবৃদ্ধদের থেকে জানা যায়, একটি কুয়ায় পড়ে ছিল এ গাছের মূল অংশ। তখন জনবসতি ছিল খুব কম। রাস্তার পাশে এই গাছটি ছিল ডালপালা আর পাতায় পরিপূর্ণ। রোদ-বৃষ্টি পড়ত না মাটিতে। মাঘ মাসের শীতের রাতেও গাছের নিচে গরম থাকত। গরমকালে গাছের নিচে ঠান্ডা লাগত। রাস্তায় চলা পথিক গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিত। বাস্তবে এ এলাকায় সুইতলা নামে কোনো স্থানের অস্তিত্ব নেই। তাই বয়োবৃদ্ধদের ধারণা পথচলতি পথিক এখানে শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিত। তখন থেকেই এটি সুইতলা বটগাছ নামে পরিচিতি লাভ করে। আর এ থেকেই নামকরণ হয় সুইতলা বটগাছ।

পথশ্রান্ত লোক বটগাছের নিচে বসে বিশ্রাম করত এবং সময় কাটাত। এজন্য মল্লিকপুরের কিছু লোক দোকান বসিয়ে ব্যবসা শুরু করে। ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট উচ্চতায় ফাঁকা মাঠের মধ্যে দীর্ঘদিনের এই বটগাছটি একের পর এক জুড়ি ছেড়ে আস্তে আস্তে বিরাট আকার ধারণ করে।

বিচ্ছিন্নভাবে ৪ হেক্টর জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বটগাছটি। এখন প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে গাছের ডালপালা। এ বটগাছের নিচে প্রতি শনি- মঙ্গলবার পূজা বসে। এই বটগাছের জন্ম যে কুয়ার পাড়ে, সেই কুয়া কে কবে খনন করেছিলেন তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। মল্লিকপুুর গ্রামের অনেকেই জানান, যে জায়গায় কুয়াটি ছিল, ওই জায়গাটি ২৬ সালের রেকর্ডের পূূর্বে বেথুলী গ্রামের ভূষণ সাহাদের কারো নামে ছিল।

এখন পুরো জায়গাটি সরকারের খাসজমির অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে ২-৩শ’ ‘ব’ নেমে প্রায় ১১ একর জমি দখল করে নিয়েছে। বটগাছটিকে কেন্দ্র করে পাশেই বাংলা ১৩৬০ সনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মল্লিকপুরের বাজার।

এলাকাবাসী জানায়, অযত্ন অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বটগাছের অস্তিত্ব আজ নষ্ট হতে চলেছে। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর বটগাছ হিসেবে অনেক যায়গা থেকে দর্শনার্থী প্রতিনিয়ত এখানে আসেন। এর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ১৯৯০ সালে বটগাছের পাশেই ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়। তবে নানা জটিলতার কারণে আজও সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

ইতিহাসখ্যাত এই বটগাছটি সংরক্ষণ এবং স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে ভিড় করবেন। সরকারের ঘরেও রাজস্ব আসবে বলে আশা করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ