|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||
সূর্য—মানব সভ্যতার আদিকাল থেকেই শ্রদ্ধা, বিস্ময় আর জ্ঞানের প্রতীক। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সূর্য শুধু আলো বা তাপের উৎস নয়, এটি একটি বিশাল পারমাণবিক চুল্লি—যেখানে প্রতিমুহূর্তে ঘটে যাচ্ছে মহাজাগতিক বিস্ময়। তারই একটি চমকপ্রদ দিক হলো সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পেছনের দীর্ঘ ও জটিল যাত্রা।
সূর্যের গভীরে আলো জন্মের রহস্য
সূর্যের কেন্দ্রে তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অতি উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে হেলিয়ামে রূপান্তরিত হয়। এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় ফোটন নামে ক্ষুদ্র শক্তিকণা—সূর্যের আলো।
কিন্তু এই আলো বা ফোটন সরাসরি সূর্যের কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। সূর্যের অত্যন্ত ঘন স্তরের কারণে প্রতিটি ফোটন বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, দিক পরিবর্তন করে, এবং এগোয় খুব ধীর গতিতে।
১০ লক্ষ বছরের ভেতরের যাত্রা!
গবেষণা বলছে, একটি ফোটন সূর্যের কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে পৌঁছাতে সময় নেয় গড়ে ১০ লক্ষ বছর! এটা শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, সূর্যের ঘনত্ব ও তাপমাত্রার কারণে এই যাত্রা সত্যিই এত দীর্ঘ।
মাত্র ৮ মিনিটে পৃথিবীতে পৌঁছানো!
পৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর, সেই আলো আর থেমে থাকে না। এটি আলোকবেগে (প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিমি) ছুটে মাত্র ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ডে সূর্য থেকে পৃথিবীতে এসে পড়ে।
সূর্য: জীবনের উৎস ও বিজ্ঞানের বিস্ময়
আজ আমাদের গায়ে পড়া একটি সূর্যকণা—হয়তো ১০ লক্ষ বছর আগে সূর্যের গহীনে সৃষ্টি হয়েছিল! এটি কেবল সময়ের একটি মাইলফলক নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের সাথেও জড়িয়ে থাকা এক মহাজাগতিক গল্প।
সূর্যের আলো শুধু আলো নয়, এটি সময়ের গল্প, শক্তির জ্বালা, এবং জীবনের স্রোত। পরেরবার যখন সূর্যের আলোয় ভিজবেন, একবার ভেবে দেখবেন—আজকের এই আলো হয়তো জন্ম নিয়েছিল ডাইনোসরের যুগেও আগে! সূর্য—একটি বিশাল মহাজাগতিক বিস্ময়, যার আলোয় আজও পৃথিবী জেগে থাকে।
এসএকে/