সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ ।। ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৫ মহর্‌রম ১৪৪৭


উমামা ফাতেমার ভূমিকা ও অভিযোগের জবাবে মুখ খুললেন জাহিদ আহসান


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে মুখপাত্র উমামা ফাতেমার একাধিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। তার বিভিন্ন অভিযোগ ও অবস্থানের বিপরীতে এবার মুখ খুলেছেন সংগঠনের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান।

তিনি দাবি করেছেন, উমামা ফাতেমা নিজেই আন্দোলন থেকে অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন ছিলেন, দায়িত্ব পালনে নিয়মিত ছিলেন না এবং একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনুপস্থিত থেকেও পরবর্তীতে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান নিজ ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘গত বছরের ১০ আগস্ট উমামা ফাতেমা দাবী জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে অকার্যকর করে দেয়ার জন্য। কিন্তু, মাসদুয়েক পরেই অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এসে উমামা ফাতেমা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে যান। মধ্যিখানের এই দুই মাসে দেশে বা বিদেশে কোন পরিস্থিতির জন্য নতুন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়, বিলোপ করার প্রয়োজন নাই হয়ে যায় সেটার এক্সপ্লেনেশন উমামা ফাতেমার দেয়া উচিত। নয়তো, মুখপাত্র পদের জন্য আইডিয়াল ত্যাগ করছে বলেই ধরে নিতে হবে। 

যাই হোক, মোটামুটি মাস তিনেক বৈছাআর দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে যতগুলো এক্সিকিউটিভ মিটিংয়ে আমি বসেছি তার অর্ধেকের বেশি মিটিংয়ে উমামা ফাতেমা আসেন নাই। যেগুলোতে আসছেন, তাও দেরি করে। কখনো কখনো মিটিং শুরুর সময় থেকে এক দুইঘণ্টা পরে। এনজিও প্রোগ্রামের  জন্য সাংগঠনিক মিটিংয়ে উপস্থিত হন নাই এমন নজিরও আছে। মিটিংয়ের উপস্থিতি স্ট্যাটিস্টিকস সাবেক মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের কাছে থাকার কথা। যদি মাসুদের কাছে সেগুলো সংরক্ষিত থাকে, তাহলে আমার ধারণার চেয়ে সংখ্যাটা মোটেও কম হবে না। 

মুখপাত্র হিসেবে পেইজ হ্যান্ডেল করা, স্টেটমেন্ট দেয়া উমামা ফাতেমার উপরেই বর্তায়। কথা সত্য। কিন্তু কয়টি বিবৃতি তিনি লিখেছেন কিংবা ন্যুনতম কয়টি বিবৃতি নিয়ে মতামত দিয়েছেন, তা বলতে পারবেন? বহু ক্রুশিয়াল মোমেন্টে তাকে পাওয়া যেতো না। আমি বিবৃতিগুলা লিখতাম। তবু, তার নামেই বহু বিবৃতি গেসে। মিডিয়া সেল তার অধীনে ছিলো। তিনি বলতে পারবেন, মিডিয়া সেলকে ডেকে একদিন বসছেন? ন্যুনতম আলোচনা করছেন? আপনি একটা প্ল্যাটফর্মের প্রতি বিন্দুমাত্র ডেডিকেশন দেখাবেন না, কিন্তু প্ল্যাটফর্ম পুরোটা আপনার হাতের কব্জায় থাকবে এটা আশা করা বোকামি। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা বড় করে কয়েকটা পাবলিক প্রোগ্রামের চিন্তা করি। যেমন, ১৬ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর আমরা চেয়েছি, আমাদের মহান স্বাধীনতার যে দীর্ঘ মেনিফেস্টেশন সেটাকে নানা ভঙ্গিতে, আর্টে, কথায় প্রকাশ করতে। ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে আহত যোদ্ধাদের নিয়ে একটা মিছিল করা হয়। এই প্রোগ্রামের কোনোটাতে উমামা ফাতেমাকে খুঁজে বের করতে পারবেন? এখন এটা বলিয়েন না, উমামাকে জানানোই হয় নাই। সবগুলো সিদ্ধান্ত এক্সিকিউটিভ কমিটির মিটিংয়ে গৃহীত হয়েছে। নানাজন বিভিন্ন প্রোগ্রামের আইডিয়া দিয়েছেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে। হয়ত উনি মিটিংয়ে ছিলেন না কিংবা অন্য কোথাও প্রোগ্রামে ব্যস্ত ছিলেন। অক্টোবর থেকে মার্চ - এই পাঁচ মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়টি প্রোগ্রামে উনাকে দেখা গেছে আর এনজিও-টেবিল টক ইত্যাদিতে কয়টি প্রোগ্রামে দেখা গেছে? হিসাব মিলায়েন। 

উমামা দাবি করছেন, তাকে কাজ করতে দেয়া হয় নাই। এই সর্বৈব মিথ্যা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসে তখন মানুশের ভীড় লেগে থাকতো। আহত, শহীদ পরিবার, নানা ফ্রন্টের যোদ্ধারা - মানুশে গিজগিজ করতো। অফিস সেক্রেটারি হিসেবে আমি মাঝেমধ্যে হিমশিম খাইতাম সামলাইতে। পাঁচ মাসে উমামা ফাতেমা কতদিন, কতঘণ্টা অফিসে সময় দিছেন? আগত এসব ব্যক্তিদের কথা শুনেছেন? এদের সাথে কথা বলতে বলতেই "গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল" এর আইডিয়া আমার মাথায় আসে। এক্সিকিউটিভ মিটিংয়ে সেটা উত্থাপন করলে সবাই সায় দেয়। এই সেলটি ভালোই এক্টিভ ছিলো। উমামা এমন কয়টি কাজ করতে চাইছেন? আমি উনার থেকে বৈছাআর জন্য নতুন কোনো প্রপোজিশন শুনি নাই। 

আমাদের অনেকের সাথেই উনি ইডিওলজিক্যালি এলাইন হইতে পারেন নাই। এই বিষয়ে আরিফ সোহেল এবং আমি উনার সাথে কয়েক দফায় দীর্ঘ আলোচনা করি। উমামা তার পজিশনে রিজিড ছিলেন। সেটাতে সমস্যা নাই। এজন্য আর সমাধান হয় নি। উনি কয়েকবার এই এলাইনমেন্ট না হওয়ার জন্য পদ ছাড়তে চাইলেও শেষমেশ কেনো যেন ছাড়েন নাই। 

সর্বশেষ কাউন্সিলে উমামা ফাতেমা ভোট দিছেন, উনার হাস্যোজ্জ্বল ছবি আমি ফেসবুকে দেখেছি। তবু, দেখলাম নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ভালোই। কাউন্সিল বিষয়ক একটি মিটিংয়ে আরেকজন নির্বাহী সদস্যকে ফিজিক্যালি এসল্ট করার বিষয়টি আমি আর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। পুরো ঘটনাটিই আমার কাছে ট্রমাটাইজিং। এতবেশি সেলিব্রেটেড একজন লিডারের থেকে এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিলো না। তার সাথে যদিও আমার হাজারটা দ্বিমত থাকে। পুরো সময় মুখপাত্র থেকে পরিচয় ব্যবহার করেছেন। নির্বাচনেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সকল অভিযোগ আসলো, যখন মুখপাত্র পদের কোনো মূল্যমান নাই, বিক্রি করা যাবে না। এটাই পলিটিস!’

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ