শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ১০ পৌষ ১৪৩২ ।। ৬ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামপন্থীদের ‘একবাক্স নীতি’ কি মুখ থুবড়ে পড়ছে? শহীদ হাদির আদর্শ সামনে রেখে মিশরে 'আজহার আফকার'র যাত্রা আবারও বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা তারেক রহমানের দেশে ফেরা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন: হাসনাত ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের এভারকেয়ার থেকে গুলশানের বাসার উদ্দেশে তারেক রহমান সাহিত্য সভায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন কবি ও লেখক মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন মহানবী (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার আলোকে দেশ পরিচালনা করবো: তারেক রহমান ১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে যা বললেন পীর সাহেব চরমোনাই

ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট, দুদকের মামলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এটি দুদকের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ দুর্নীতির মামলা বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

রোববার (৯ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ মামলার সিদ্ধান্ত হয় বলে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ জানিয়েছেন।

যে ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন—এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার ভাই রাশেদুল আলম ও সহিদুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মায়মুনা খানম, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম, মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হাসান (পিএইচডি), সাবেক পরিচালকবৃন্দ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিনিয়োগ কমিটির সদস্যসহ আরও অনেকে।

দুদকের তদন্তে দেখা যায়, এস আলম গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান—এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড এবং এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হয় ৯ হাজার ২৮৩.৯৩ কোটি টাকা, যা বর্তমানে লভ্যাংশসহ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৭৯.৬২ কোটি টাকায়।

অভিযোগ অনুযায়ী, ঋণের নামে নেওয়া এই অর্থ জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয় এবং পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয়। এসব অনিয়মে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য, বিনিয়োগ কমিটির সদস্যসহ মোট ৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দুদকের তদন্ত অনুয়ায়ী, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমে বেপরোয়া অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘন শুরু হয়। ২০২০ সালে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণসীমা ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা করে, যা ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার স্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়।

তদন্তে আরও জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের আইটি সফটওয়্যার ম্যানিপুলেশন করে অনুমোদনবিহীনভাবে ঋণসীমা বৃদ্ধি ও মেয়াদ পরিবর্তন করা হয়। সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এসব লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।

এসব অর্থ বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান—আহসান এন্টারপ্রাইজ, দুলারী এন্টারপ্রাইজ, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ইত্যাদির মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, এস এস পাওয়ার, এস আলম স্টিলস, এস আলম সিমেন্ট ও সোনালী ট্রেডার্সের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

দুদকের নথিতে উল্লেখ রয়েছে, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রূপালী ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ২৯০ কোটি টাকার সমপরিমাণ (২৩.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অব চায়না শাখায় এস এস পাওয়ার–১ লিমিটেডের অফশোর অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।

দুদক বলেছে, এ মামলায় তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও নতুন নাম যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের অর্থনৈতিক অনিয়মের এই ঘটনা এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত দুর্নীতির কেলেঙ্কারি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ