বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫ ।। ৫ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৭ সফর ১৪৪৭


এক যুগ পর স্বরূপে ফিরল হেফাজত!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

২০১৩ সাল। ঠিক এক যুগ আগের কথা। এপ্রিল মাস পুরোটাজুড়ে আলোচনার তুঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে হেফাজত। সংগঠনের বয়স বেশি না হলেও গোটা দেশবাসী এক নামে তখন চিনে সংগঠনটি। ৬ এপ্রিল শাপলা চত্বরে লংমার্চপরবর্তী লাখ লাখ লোকের সমাবেশ করে ‘নতুন শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হয় হেফাজত। নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিসহ ১৩ দফা দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সমর্থনে পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে তখন দেশজুড়ে হেফাজতের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে ৫ মে শাপলা চত্বর ট্রাজেডি হেফাজতের সংঘবদ্ধ শক্তিকে যেন তছনছ করে দেয়। জুলুম-নিপীড়নের স্টিম রুলার নেমে আসে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের ওপর। শাপলা চত্বরে রক্ত দেওয়া ছাড়াও অনেককে দিনের পর দিন কারাভোগ করতে হয় হেফাজতের কারণে। মামলা-হামলা তাড়িয়ে বেড়ায় বছরের পর বছর।

মাঝে কয়েক বছর বিরতি দিয়ে ২০২১ সালে আরেক দফা হেফাজত আলোচনায় আসে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সরব হলে হেফাজতের ওপর আরেক দফা নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে বেশ কয়েকজন শহীদ হন। পঞ্চাশের বেশি নেতাকে কারাগারে যেতে হয়। এই ইস্যুতে কারাগারে যাওয়া অনেকেই টানা কয়েক বছর কারাগারে থাকতে হয়।

তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পায় হেফাজত। যদিও এখনো সংগঠনের নেতাদের গলায় ঝুলছে ডজন ডজন মামলার খড়গ। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বারবার দাবি জানালেও হেফাজতের হয়রানিমূলক মামলাগুলো বাতিল করা হয়নি। এসব মামলা থেকে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিসহ নতুন করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামবিরোধী প্রতিবেদনও যুক্ত হয় প্রতিবাদের তালিকায়। ফলে চারটি দাবিকে সামনে নিয়ে হেফাজত মহাসমাবেশের ডাক দেয়, যা গতকাল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

শনিবার (৩ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের ডাকা মহাসমাবেশে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই মহাসমাবেশের মাধ্যমে হেফাজত নতুন করে তাদের শক্তির জানান দিতে সক্ষম হয়েছে। যারা হেফাজতের শক্তি ভুলতে বসেছিল তাদের নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে। দেশি-বিদেশি মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে হেফাজতের কর্মসূচি এবং তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছে।

এবারই প্রথমবারের মতো কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়া হেফাজত বড় ধরনের কোনো আয়োজন সম্পন্ন করল। এর আগে যত বার বিভিন্ন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তত বারই নানা বাধা-বিপত্তি এসেছে। নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতকে সবসময়ই ভয় পেয়ে আসছে এবং কলে-বলে কৌশলে এই সংগঠনটিকে দমিয়ে রাখার সব চেষ্টাই করেছে।

অনেক দিন পর হেফাজত তার ছন্দে ফিরেছে। নিজের যে শক্তি তা কিছুটা হলেও জানান দিতে সক্ষম হয়েছে। এতে নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যেই স্বস্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় হেফাজত সবার মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আলেম-উলামার নেতৃত্বাধীন এই শক্তিকে সমীহ করা ছাড়া কোনো গত্যান্তর নেই- সেটা হেফাজত অন্তত গতকালের মহাসমাবেশের মাধ্যমে জানান দিতে সক্ষম হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন হেফাজতের এই শক্তির জানান দেওয়াটা বিশেষ তাৎপর্যও বহন করে।

সূত্রে খবর, হেফাজতের দাবি-দাওয়াগুলোর কিছুটা হলেও পূরণ করার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে। প্রাথমিকভাবে হেফাজতের মামলাগুলো নির্বাহী আদেশের নিষ্পত্তি করা হতে পারে। কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়া নারী সংস্কার কমিশন ইস্যুতেও সরকার ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যায় এমন পদক্ষেপ নেবে না বলে জানা গেছে। সব মিলিয়েই বলা যায়, হেফাজত আবার স্বরূপে ফিরেছে। সংগঠনটি তার নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারলে এদেশে সমীহ করার মতো শক্তি হিসেবে টিকে থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর