আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই ধরনের প্রস্ততি নিয়ে রেখেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথমটি বৃহত্তর ইসলামী জোট গঠন ও দ্বিতীয়ত বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা। তবে জামায়াতের নেতৃত্বে কোনও জোটে যাবে না দলটি। এসব কথা জানিয়েছেন দলের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি মনে করেন, জামায়াতের আকিদার সঙ্গে মূল ধারার ইসলামী দলগুলোর দ্বন্দ্ব চিরন্তন।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, এক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের জোট হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেওবন্দের অনুসারী দাবি করলেও এ দলটি সব সময় সুবিধাবাদী নীতি অনুসরণ করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মূলত তারা কখনও স্থির থাকেনি।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা দেখছেন না। তিনি মনে করেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবিরের জয়ের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পরবে না।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, সম্ভাব্য জোট গঠন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও চলমান ইস্যু নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা প্রশ্নে উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, প্রথমত আমরা নিজেরা একটি ইসলামিক জোট গঠনের চেষ্টা করছি, যেখানে জামায়াত থাকবে না। তারা থাকলে আমরা থাকবো না। প্রয়োজনে আমরা বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করবো। আর সেখানেও কাঙ্ক্ষিত আসন না পেলে নিজেদের সম্ভাবনাময় আসনগুলোতে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।
তিনি জানান, জামায়াতের ব্যাপারে উপমহাদেশের আলেমদের আপত্তি রয়েছে। তারা ইসলামের সঠিক আকিদায় নেই। তাই তাদের সঙ্গে জোট গঠনের কোনও প্রশ্নই আসে না।
এক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জোট হওয়ার তৎপরতাকে কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানামতে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় আছে। ১৫ মাসেও এ বিষয়ে কোনও কিছু খোলাসা করতে পারেনি।
তিনি বলেন, নিজেদেরকে দেওবন্দি বা কওমি ঘরানার মনে করলেও তারা পুরোপুরি দেওবন্দি না। আমরা তাদেরকে দেওবন্দি মনে করি না। তারা তাদের নিজস্ব রাজনীতি করে গেছে। কখনও হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। বিগত দিনে সুবিধার জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলের নায়েবে আমির কিল-ঘুষি খাওয়ার পর সরে এসেছে। এখন আবার ভোটের সুবিধার জন্য জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সঠিক সময়ে নির্বাচনে হওয়ার বিষয়ে কোনও ধরনের শঙ্কা দেখছেন কিনা জানতে চাইলে জমিয়ত সভাপতি বলেন, দুই-এক মাস আগেও শঙ্কা ছিল, এখন নেই। কারণ এখন সব দলই নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছে। আমি নিজেও নিজের নির্বাচনি এলাকায় প্রতিদিন গণসংযোগ করছি। আমি মনে করি, দেশ এখন এক ধরনের অভিভাবক শূন্যতায় ভুগছে। তাই নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, সংকট তত বাড়বে। দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে এমনটিই প্রত্যাশা করি।
আগামী নির্বাচনে জমিয়ত কয়টি আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কতটি আসনে জয়ী হবো এটা বলতে চাই না। তবে আমরা এককভাবে নির্বাচন করলেও কমপক্ষে ৩০টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবো। আর জোটগত আসনে নির্বাচন করলে বেশ কয়েকটি আসনে জয় নিশ্চিত। এক্ষেত্রে তিনি নিজে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ), দলের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি নীলফামারী-১ (ডিমলা-ডোমার) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জানান তিনি।
এর বাইরে সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট), সুনামগঞ্জ-(জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ), নড়াইল-২ (লোহাগড়া), ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) ও নেত্রকোণা-৩ (কেন্দুয়া, আটপাড়া) সহ কয়েকটি আসনে একক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও জমিয়ত ভালো করবে বলে তিনি আশাবাদী।
জুলাই জাতীয় সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, এনিয়ে কোনও সংকট দেখছেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে এই মুহূর্তে আর কোনও সংকট দেখছি না। কারণ ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ আলোচনার পর এটি একটি পরিণতি পেয়েছে। সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন বিষয়গুলো অধ্যাদেশে, আর সংবিধান-সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবগুলো জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। এটি কমিশনের সঠিক প্রস্তাব।
সম্প্রতি দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একচেটিয়া জয়ের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পরতে পারে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, তা মনে করি না। কারণ, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভোট দেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাদের কিছু স্বার্থ থাকে। অপরদিকে জাতীয় নির্বাচনে সর্বস্তরের মানুষ ভোট দেয়। তাই সেখানে এক ধরনের সমীকরণ থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বেশিরভাগ ভোট পেয়েছে শিবির। তারা হয়তো ভিন্ন সমীকরণে শিবিরকে বেছে নিয়েছে। তাই বলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পরবে, এ ধারণা অবান্তর।
এলএইস/
                                
                              
                                 
                            
                            
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                         
                               
                               
                              