|| কাজী সিকান্দার ||
পৃথিবীতে যেকোনো ব্যক্তি যে কাজ করুক না কেন তা হয়তো ইতিবাচক না হয় নেতিবাচক। হয়তো তা পুরস্কার পাওয়ার হক রাখে, না হয় তিরস্কার পাওয়ার। আর দুনিয়ার কাজের মাধ্যমে রচিত হবে বান্দার জান্নাত বা জাহান্নাম। তাই নেতা বা আমির হয়তো তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পুরস্কার পাবে, না হয় তিরস্কার। আল্লাহ তায়ালা জগতের সব আমির বা নেতাকে তার উত্তম বদলা দেবেন।
আমরা অনেকেই নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। চেষ্টা তদবির করে থাকি। টাকা খরচ করি। প্রচুর সময় ব্যয় করি। কেউ কেউ লোকবল লালন-পালন করেন কেবল নেতা হওয়ার মানসে। নেতৃত্ব হাতে আসার কারণ যেমন রয়েছে অনেক সুসংবাদ বা অনেক ভালো দিক। ঠিক তার বিপরীত নেতা হওয়ার মাধ্যমে অনেক ক্ষতির সম্মুখী হতে হবে। কারণ যে বিষয়ের যত দাম তার যত সম্মান ওই বিষয় নষ্ট হলে তার ক্ষতিও তত বেশি, লাঞ্ছনাও ততধিক। সুতরাং দায়িত্ব পালনে শতভাগ নিজের প্রতি আস্থা না থাকলে দায়িত্ব নেওয়ার প্রতি আগ্রহী না হওয়া অতি বেশি উত্তম। আর দায়িত্ব যদি চলে আসে না চাইতে তবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। এ দায়িত্ব বা নেতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে এটি আল্লাহর বিশেষ দান।
ক্ষমতা আল্লাহর দান
বলুন, ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন; যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ২৬)
ক্ষমতা যেহেতু আল্লাহর দান। তার যথাযথ পালনে তার পুরস্কারও রয়েছে অতি উত্তম।
নেতারা আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তার (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না, তার মধ্যে প্রথম- ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা)। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৩)
শাসক জ্যোতির মিম্বারে থাকবে
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট যারা ন্যায়পরায়ণ, তারা দয়াময়ের ডান পাশে জ্যোতির মিম্বরের ওপর অবস্থান করবে। আর তাঁর উভয় হস্তই ডান। (ওই ন্যায়পরায়ণ তারা) যারা তাদের বিচারে, পরিবারে এবং তার কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ।’(মুসলিম)
এত বড় পুরস্কার যাদের জন্য তারা যদি তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হন তবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন থেকে কঠিন বিপদ।
নেতার জন্য রাসূল সা. এর দোয়া ও বদ-দোয়া
হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমার এ ঘরে রাসূল সা.কে দোয়া করতে শুনেছি যে, আয় আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের যেকোনো কাজের নেতা, আমির নিযুক্ত হয়, অতঃপর সে লোকদেরকে কষ্টের মধ্যে ফেলে, আপনিও তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিন। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের যেকোনো বিষয়ে জিম্মাদার নিযুক্ত হয় এবং লোকদের সাথে নম্র ব্যবহার করে আপনিও তার সাথে নম্র ব্যবহার করুন। (মুসলিম, হাদিস ৪৭২২)
যে নেতা জান্নাতে যাবে না
হজরত মালেক ইবনে ইয়াসার রা. বলেন, আমি রাসূল সা. কে এ এরশাদ করতে শুনেছি, যে নেতা মুসলমানদের বিষয়সমূহের জিম্মাদার হয়ে মুসলমানদের কল্যাণ কামনায় চেষ্টা করবে না, সে মুসলমানদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস ৪৭৩১) 
প্রতারণাকারী নেতা জান্নাতে যাবে না
হজরত মালেক ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সা. এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কোনো বান্দার ওপর সাধারণ জনগণের কোনো দায়িত্বভার অর্পণ করলে, অতঃপর সে তাদের ধোঁকা দিয়ে মারা গেল, তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেন।’ (বুখারি: হাদিস ৭১৫১; মুসলিম ১৪২)
হজরত আবু মারইয়াম আযদী রা. বলেন, আমি রাসুল সা.কে এরশাদ করতে শুনেছি, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের কোনো কাজের জিম্মাদার বানিয়েছেন, আর সে মুসলমানদের অবস্থা, প্রয়োজনসমূহ ও তাদের অভাব অনটন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার অবস্থা ও প্রয়োজনসমূহ এবং অভাব অনটন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। (আবু দাউদ : হাদিস ২৯৪৮)
রাসুল সা. বলেন- জালিমই হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট প্রশাসক। (মুসলিম ১৮৩০)
অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যেতে পারবে না (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি দশ জনের নেতা বা আমির হলেও তাকে (কিয়ামতের দিন) গলায় হাত বেঁধে উপস্থিত করা হবে। তার ইনসাফ তাকে ছাড়িয়ে নেবে অথবা তার জুলুম তাকে ধ্বংস করবে।’ (আহমাদ: হাদিস ৯৫৭৩, ইব্নু আবি শাইবাহ্, হাদিস ১২৬০২)
হজরত আবু ওয়ায়েল রহ. বলেন, হজরত ওমর রা. হজরত বিশর ইবনে আসেম রা. কে হাওয়াযেন (গোত্র) এর সদকা উসূল করার জন্য আমেল নিযুক্ত করলেন, কিন্তু হজরত বিশর রা. গেলেন না। হজরত ওমর রা. এর সাথে তার সাক্ষাৎ হলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কেন গেলে না? আমার কথা মানা ও শোনা তোমার ওপর জরুরি নয় কি? হজরত বিশর রা. আরজ করলেন, কেন জরুরি হবে না? কিন্তু আমি রাসূল সা.কে এ এরশাদ করতে শুনেছি যে, যাকে মুসলমানদের কোনো কাজের জিম্মাদার বানানো হলো তাকে কেয়ামতের দিন এনে জাহান্নামের পুলের ওপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে। (যদি জিম্মাদারি পূর্ণ রূপে আদায় করে নাজাত পাবে, না হয় জাহান্নামে) (বুখারি, এসাবাহ খণ্ড ১, হাদিস ১৫২)
সুতরাং যারা নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য আগ্রহী। যারা নেতা হতে চান তারা বিষয়গুলো ভেবে চিন্তে অগ্রসর হওয়ার আহ্বার রইল। কারণ দুনিয়ার এ নেতৃত্ব অতি ক্ষণিকের আখেরাতের ক্ষতি হবে অতি দীর্ঘ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুন।
লেখক: পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ
এসএকে/
                              
                          
                              
                          
                        
                              
                          