নাজমুল হাসান।
ঘুম আমাদের শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটি শুধু বিশ্রামই দেয় না, বরং শরীরের সব সিস্টেমকে পুনরুজ্জীবিত ও শক্তিশালী করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ঘুমের গুরুত্ব:
ঘুমের সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন সিস্টেম যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়ু, কঙ্কাল এবং পেশীর পুনর্নির্মাণ কাজ করে থাকে। এটি মেজাজ, স্মৃতিশক্তি, এবং অন্যান্য জ্ঞানীয় কাজের উন্নতি করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত বা অনিয়মিত ঘুম, বিশেষত রাত জেগে থাকা, এই প্রক্রিয়া ব্যাহত করে এবং শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
ঘুমের উপকারিতা:
১. প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি: ঘুমের সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। ঘুমের অভাবে সর্দি-কাশি বা অন্যান্য সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণ: ঘুমের সময় শরীরের বিপাক ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করে। কম ঘুমে বিপাক হার কমে যাওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৩. বয়সের ছাপ কম পড়ে: ঘুমের সময় ত্বকের কোষ পুনর্নির্মাণ হয়, ফলে ত্বকের তারুণ্য বজায় থাকে।
দিনের ঘুম বনাম রাতের ঘুম:
মানুষের প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া রাতের ঘুমের জন্য সাজানো। পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ বলেছেন, "তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে করেছেন আরামপ্রদ..." (সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৪৭)। রাতে ঘুমানোর সময় শরীর সঠিকভাবে বিশ্রাম নেয়, বিশেষত গভীর ঘুম (ডেল্টা স্লিপ) হয়, যা শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
যদিও দিনের ঘুম কিছুটা উপকারী হতে পারে, তা রাতের গভীর ঘুমের মতো কার্যকর নয়। দিনের ঘুমের ফলে শরীরের পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং ওজন বাড়তে পারে।
ঘুমের অভাবের ক্ষতিকর প্রভাব:
ঘুমের অভাবে যে রোগগুলো বৃদ্ধি পায় সেগুলি হল:
উচ্চ রক্তচাপ: ঘুমের অভাবে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
হার্টের সমস্যা: ঘুমের সময় হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম নেয়, কিন্তু ঘুমের অভাবে এটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: কম ঘুমে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হয়, ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা: ঘুমের অভাবে শরীরের 'লিভিং অরগানিজম' (যেমন রোগ প্রতিরোধী কোষ) সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।
হজমের সমস্যা: ঘুমের অভাবে পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
ঘুম শরীরের জন্য অপরিহার্য। রাতে গভীর ঘুম শরীরের পুনর্নির্মাণ ও শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত, পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এনএইচ/