মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
ফেরাউন—মিসরের সেই একচ্ছত্র শাসক, যিনি নবী মূসা (আঃ)-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে তার গল্প একটি সতর্কবার্তার মতো স্থান পেয়েছে, যেখানে অহংকার, অবাধ্যতা এবং আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহের পরিণতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
কুরআনের ঘোষণা
কুরআনের সূরা ইউনুসে আল্লাহ তাআলা বলেন—“আজ আমি তোমার দেহকে রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারো।”(সূরা ইউনুস: আয়াত ৯২)
এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, ফেরাউনের দেহকে সংরক্ষণ করা হবে এবং তা ভবিষ্যতের মানুষের জন্য এক নিদর্শন হয়ে থাকবে।
ইতিহাসের পৃষ্ঠা ও ফেরাউনের মৃত্যুর ঘটনা
ইতিহাসবিদরা ও মিসরীয় প্যাপিরাস অনুসারে, মিসরের এক ফেরাউন রেড সি বা লোহিত সাগরে ডুবে মারা যান। এই বর্ণনা মিলে যায় হযরত মূসা (আঃ)-এর সময়ের ঘটনার সঙ্গে, যখন তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে সাগর পেরোচ্ছিলেন এবং পেছনে ধাওয়া করতে গিয়ে ফেরাউন সৈন্যবাহিনীসহ ডুবে মারা যায়।
মমি আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা
১৮৯৮ সালে মিসরের লাক্সরে কিং র্যামসেস পরিবারের একটি মমি আবিষ্কৃত হয়। অনেক গবেষক ও মিসরোলজিস্ট মনে করেন, এই মমিই সেই ফেরাউনের দেহ, যার কথা কুরআনে বলা হয়েছে।
পরবর্তীতে বিখ্যাত ফরাসি চিকিৎসক ড. মরিস বুকাই এই মমিটি পরীক্ষা করেন। তিনি দেখতে পান—দেহটি এমনভাবে সংরক্ষিত, যেন মৃত্যুর পর তড়িৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মমিটির ফুসফুসে জল, লবণ ও শ্বাসরোধের চিহ্ন মেলে, যা ডুবে মৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়।
বুকাই বলেন, “কুরআন ছাড়া আর কোনো ধর্মগ্রন্থে এই দেহ সংরক্ষণের কথা বলা হয়নি। আমি যখন এটা কুরআনে পড়ি, আমি অবাক হয়ে যাই এবং ইসলাম গ্রহণ করি।”
বিশ্বাস, বিজ্ঞান ও বার্তা
এই ঘটনা শুধু একটি ঐতিহাসিক সত্য নয়, বরং কুরআনের অসাধারণ প্রামাণিকতা ও অলৌকিক বার্তার নিদর্শন। একদল অহংকারী শাসকের পতনের গল্প যেমন এতে আছে, তেমনি মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি যে অটুট—তার সাক্ষ্যও মেলে।
ফেরাউনের সংরক্ষিত লাশ আমাদের জন্য শুধুই এক জাদুঘরের নিদর্শন নয়, এটি এক ঈশ্বরপ্রদত্ত শিক্ষা—অহংকার, অবাধ্যতা ও অন্যায়ের পরিণতি কী হতে পারে। কুরআনের এই ঐতিহাসিক ঘোষণার বাস্তব প্রমাণ আজও চোখের সামনে উপস্থিত, যা চিন্তাশীলদের জন্য গভীর বার্তা বয়ে আনে।
আরএইচ/