সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ ।। ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৫ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
সরকার না করলে জুলাই সনদ আমরা প্রকাশ করব: নাহিদ ইসলাম নীতি নির্ধারণী সপ্তাহ: গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি নতুন কোনো ষড়যন্ত্র? ঐক্যের এই সময়ে খাদেম সুলায়মানদের এড়িয়ে চলুন! ‘ভোট নয়, পরকালে জবাবদিহির ভয় নিয়েই মাঠে নেমেছি’ ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের পরিধি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার বিচারে একদিনও অতিরিক্ত সময় নিচ্ছি না: চিফ প্রসিকিউটর  ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ ছিল ‘ভয়ানক’: ট্রাম্প সবাইকে রাজা বানিয়ে দিলে রাজ্যের অবস্থা হবে কাহিল সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী হলেন মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতিসংঘের মানবাধিকার  কার্যালয় অনুমোদন বাতিল করুন: খেলাফত 

মনোযোগে দক্ষতা অর্জন ও  বৃদ্ধির কৌশলে


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| এম. হাসান ||

আজকের দুনিয়ায় মনোযোগ ও একাগ্রতা ধরে রাখা যেন এক পাহাড় বেয়ে ওঠার মতো। এটা শুধু উন্নতির ইচ্ছা নয়, বরং বাস্তবসম্মত, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কৌশল খুঁজে পাওয়া, যা সত্যিই মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

এখানে, সেরা চিন্তা ও গবেষণার ফলাফল  দেওয়া হয়েছে, যেন আপনি আপনার মনকে শানিত করতে পারেন এবং জীবনে বা ব্যবসায়ে যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারেন।

মনোযোগ কীভাবে কাজ করে:
একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা মনোযোগ বাড়ানোর উপায় বোঝার আগে এর কার্যপ্রণালী বুঝে নেওয়া জরুরি। মনোযোগ একটি ক্ষণস্থায়ী অবস্থা নয়—এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা আমাদের দৈনন্দিন উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং ডিজিটাল যুগের নানা বিভ্রান্তিকে জয় করতে সাহায্য করে।

মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা একে অপরের পরিপূরক :
 মনোযোগ আর উৎপাদনশীলতা শুধু সম্পর্কযুক্ত নয়, বরং একে অপরের ভিত্তি। যখন আমরা নির্দিষ্ট একটি কাজে মনোযোগ দেই, তখন আমরা আরও পরিষ্কারভাবে ভাবতে পারি, এবং কম সময়ে বেশি কাজ করতে পারি। একাগ্রতা আমাদের আশেপাশের বিভ্রান্তি থেকে দূরে রাখে, যেন আমার লক্ষ্য সোজাসুজি দেখা যায়। ফলে, যে কাজগুলো সাধারণত কয়েক ঘণ্টা লাগে, সেগুলো অনেক কম সময়েই শেষ করা সম্ভব হয়।

মনোযোগ ও বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক :
মনোযোগ ও বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক অন্বেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন—একাগ্র মন জটিল বিষয় বোঝার, তথ্য মনে রাখার এবং শিখে নেওয়া জ্ঞান কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অনেক ভালো করে। মানে, বুদ্ধিমত্তা হলো একটি সামর্থ্য, আর মনোযোগ সেই সামর্থ্যকে পুরোপুরি প্রকাশ করার উপায়।

যখন আমরা মনোযোগী থাকি, তখন আমার বোধশক্তি ও বিশ্লেষণক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। তাই বলা যায়, মনোযোগ বাড়ালে আমাদের মস্তিষ্ক আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।

মনোযোগ দিয়ে চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব :
প্রতিদিনই কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জ আসে—কখনো কাজের পাহাড়, কখনো সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন। এইসবের মাঝে আমাদের বুঝতে হবে, মনোযোগ এক বিশাল হাতিয়ার। যখন আমরা একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা না করে একটার পর একটা কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে করি, তখন আমরা দ্রুত ও দক্ষভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি।

এটা , বর্তমানের অগণিত বিভ্রান্তির মাঝে মনোযোগ ধরে রাখা যেন এক ধরনের “সুপারপাওয়ার”—যা দিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জকে জয় করতে পারি।

এই অভিজ্ঞতা থেকে আমার উপলব্ধি:
মনোযোগ বাড়ালে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ হয়। এটি আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে সাহায্য করে। মনোযোগের মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান সহজ হয়। এই প্রক্রিয়াগুলো ও ধারণাগুলো আমাদের পথ দেখায় আরও দক্ষ, স্বচ্ছ এবং ফোকাসড চিন্তার দিকে।

মনোযোগ বাড়ানোর কার্যকর কৌশল :
মনোযোগ বাড়াতে হলে প্রথমে জানতে হবে—আপনার ফোকাস হারানোর কারণ কী। কারণ চিহ্নিত করতে পারলে সমস্যার গোড়াতে পৌঁছানো সহজ হয়। এরপর নিচের কিছু কার্যকর ও ব্যতিক্রমধর্মী পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
মনোযোগ বাড়ানোর কার্যকর কৌশলসমূহ

১. কারণ বুঝুন ও চিহ্নিত করুন :
প্রথমে নির্ধারণ করুন কেন আপনার মনোযোগ হারিয়ে যাচ্ছে। ক. অধিক মনোযোগ বিঘ্নিতকরণ (যেমন সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন)। খ. মনের মধ্যে নানা চিন্তা বা উদ্বেগ। গ. কাজ বা পরিবেশের অনুপযুক্ততা।ঘ. সমস্যার মূলচিন্তা চিহ্নিত হলে ঠিক জায়গা থেকে সমাধানে এগিয়ে যেতে পারবেন।

২. নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন:
Pomodoro পদ্ধতি। ২৫ মিনিট ধরে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন (“Pomodoro”) প্রতিটি Pomodoro এর পর ৫ মিনিট বিরতি নিন ৪টি Pomodoro করার পর বড় বিরতি (১৫–৩০ মিনিট) নিন
এই পদ্ধতি মনোযোগ ধরে রাখতে ও মস্তিষ্ককে অ্যালার্ম অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে।

৩. “একক টাস্কিং” (Single-tasking) :
একসঙ্গে একাধিক কাজ না করে একবারে একটি কাজ ছেড়ে দিন। নির্দিষ্ট দায়িত্বে মনোযোগ দিন—একাধিক কাজ একসঙ্গে/সমান্তরালে করাটা মনোযোগকে বিচ্ছিন্ন করে ও মানসিক চাপ বাড়ায়।

৪. ডিজিটাল বিভ্রান্তি কমান :
মোবাইল/কম্পিউটারের নোটিফিকেশন বন্ধ করুন বা নির্দিষ্ট সময়ে রাখুন
কাজের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেইল চেক করা থেকে বিরত থাকুন
কিছু সময় “ডিজিটাল ডিটক্স” করুন—একদমই ডিসকানেক্ট হয়ে থাকুন

৫ . উপযুক্ত পরিবেশ  তৈরি করুন: 
পরিবেশ বানান মননোযোগের উপযোগী নিরিবিলি, পরিষ্কার ও সংগঠিত কাজের স্থান রাখুন যথাযথ আলো, আরামদায়ক আসন ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখুন বিঘ্নিত করার মতো জিনিস—যেমন টিভি, খোলা জানালা থেকে শব্দ—দূর রাখুন

৬. মানসিক প্রস্তুতি (Mindset) :
কাজ শুরু করার আগে একবার মার্জিন রিভিউ করুন: “আমি কি করবো?”, “কেন?”ইতিবাচক আত্ম-উৎসাহ দিন। যেমন: “আমি এটা পারবো”, “এটা আমার সময়” কাজ শুরু করার জন্য নিজেকে অল্প অল্পভাবে উৎসাহ দিন

৭. দৈহিক ও মানসিক চিন্তা সমসাময়িক করুন :
মাঝেমধ্যে ছোট হাঁটা বা স্ট্রেচিং করুন । নিচে চোখ বন্ধ করে বা গভীর নিশ্বাস নিয়ে রিফ্রেশ হোন। হালকা স্ন্যাকস বা পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করুন

৮. ব্যস্ততার রেকর্ড রাখুন: 
Journaling কাজের শেষে রেকর্ড করুন—আজ কোন কাজ ছিল, কতটা মনোযোগ দিলেন, বিঘ্নতা কি ছিল। এই তথ্য আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে—কী সময়, কি ধরনের পরিবেশে আপনি বেশি মনোযোগী নিয়মিত রিভিউ করলে সহজে আপনার সবচেয়ে সক্রিয় সময় ও অবস্থান চিহ্নিত হবে।

৯. দীর্ঘ মেয়াদে মনোযোগ বাড়ান :
মাইন্ডফুলনেস/মেডিটেশন অনুশীলন করুন—প্রতিদিন মাত্র ৫–১০ মিনিট ধ্যান করলে মনোযোগের ক্ষমতা অনেক বাড়ে।  ডিকনাস্ট্রাক্ট কৌশল—আপনার মনকে নিয়মিত ফোকাস কাজে ফিরিয়ে আনার অনুশীলন বুঝিয়ে দেয় যে আপনার মন ভালোই আছে; এটা বিকাশে সহায়ক।

১০. রুটিন তৈরি করুন :
প্রতিদিন একই সময়ে কাজ শুরু/সমাপ্তি করুন। রুটিন মেনে চলার ফলে মস্তিষ্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ চালানোর অভ্যাস হয়—ফোকাস সহজে আসে।

১১. ফিজিক্যাল ফিটনেস রাখা :
নিয়মিত ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, যোগ, ভারোত্তোলন) মস্তিষ্কের সার্কুলেশন বাড়ায়
ভালো ঘুম—প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম মনোযোগ বাড়ায় ও মানসিক উজ্জীবন বৃদ্ধি করে

১২. অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং ব্রেইন স্টর্মিং :
দৈলে দিনের শুরুতে “টুডু লিস্ট” তৈরি করুন। ৩টা টপ টাস্ক সিলেক্ট করুন, কাজ শুরু করার আগে সংক্ষিপ্ত সময় (২–৩ মিনিট) ব্রেনস্টর্ম করুন—“কি করলে আমি আসলেই এটা ভালোভাবে শেষ করতে পারব?”

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ