আওয়ার ইসলাম/ফিচার ডেস্ক
একটা সময় ছিল যখন বিকেলে মাঠে খেলতে না নামলে বন্ধুদের সঙ্গে দিনই কাটত না। এখন সেই মাঠ খালি, আর তরুণদের আঙুলে আঙুলে মোবাইল। প্রযুক্তির এই আশীর্বাদ কি আস্তে আস্তে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে?
পরিসংখ্যান যা ভাবায়
বাংলাদেশে ১৫-৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ৭ জন দিনে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইলে ব্যয় করে। এর মধ্যে ৪০% ঘুমানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্ক্রিনে চোখ রাখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—"স্ক্রিন অ্যাডিকশন এক ধরনের মস্তিষ্কের নেশা তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে মনোযোগ, স্মৃতি, ঘুম ও সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।"
কীভাবে ক্ষতি হচ্ছে তরুণদের?
- অধ্যবসায় ও মনোযোগের ঘাটতি: ক্লাস, পড়াশোনা, চাকরির প্রস্তুতি – কোথাও মন বসে না।
- দৃষ্টিশক্তি ও ঘুমের সমস্যা: দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা।
- মানসিক উদ্বেগ: সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে তৈরি হয় আত্মবিশ্বাসের অভাব, একাকিত্ব, হীনমন্যতা।
- সম্পর্কের টানাপোড়েন: পরিবারের সাথে সময় না কাটানো, বন্ধুত্ব বা ভালোবাসার সম্পর্কে দূরত্ব।
বাস্তব গল্প: মোবাইল কেড়ে নিলে আত্মহত্যা!
চট্টগ্রামের এক কিশোর পড়াশোনায় মনোযোগ না দেওয়ায় তার মা মোবাইলটি লুকিয়ে রাখে। পরে সেই কিশোর আত্মহত্যা করে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এমন খবর এখন নিয়মিত সংবাদপত্রে।
কীভাবে এই আসক্তি কমানো যায়?
নিয়ম করে মোবাইল ব্যবহার: দিনে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি না
স্ক্রিন টাইম মনিটর করুন: Android/Apple-এ আছে Screen Time অপশন
বিকল্প রুটিন তৈরি করুন: বই পড়া, হাঁটাহাঁটি, মেহেদি আঁকা, গান/আর্ট
বেডরুমে মোবাইল নয়: ঘুমের আগে অন্তত ১ ঘণ্টা স্ক্রিনমুক্ত থাকুন
পরিবারের সময় বাড়ান: একসঙ্গে খাওয়া, গল্প করা, ঘুরতে যাওয়া
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামে সময়ের অপচয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে—
“পাঁচটি বিষয় আসার আগে পাঁচটিকে গনিমত মনে করো… সময়কে গনিমত মনে করো।” (হাকিম)
প্রযুক্তি আমাদের জন্য, আমরা প্রযুক্তির জন্য নয়। মোবাইল ফোন আমাদের সাহায্য করার কথা আমাদের গ্রাস করার নয়। তরুণরা যদি এখনই সচেতন না হয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম আরও বড় বিপদের মুখোমুখি হবে।
এনএইচ/