দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মাদরাসা শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেছেন, লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী মাদরাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আমরা চাই এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, বাস্তবমুখী এবং আধুনিক রূপে গড়ে তুলতে।
বুধবার (১ অক্টোবর) দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সরকারি আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ওবায়দুল হক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
শিক্ষা উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ১৭৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৪৬ বছরের ইতিহাসকে গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষার ঐতিহ্যে যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, বিজ্ঞানচর্চা ও ধর্মবিদ্যা একসঙ্গে ছিল। আমরা চাই এই ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষার একটি সমন্বিত রূপ তৈরি করতে।
অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই মাদরাসা শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে আধুনিক শিক্ষার উপাদানগুলো সংযোজন করতে হবে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে বলেন, অ্যালামনাইদের অংশগ্রহণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতিতে অবদান রাখতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, বিশুদ্ধ পানি ও পরিবহন সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ২৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকারি আলিয়া মাদরাসাকে আরও আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হবে। এটি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জ্ঞানের ধারক।
সব ধর্ম ও পেশার মানুষের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার আহ্বান জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।
উপধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের গুরুত্ব তুলে ধরে সি আর আবরার বলেন, সমাজে বিভেদ নয়, সহমর্মিতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাই আমাদের পথপ্রদর্শক হবে। ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করে আমরা উন্নত ও কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে দেশ ও সমাজে অবদান রাখতে পারব।”
অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষা অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরএইচ/