দেশের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বুধবার (১ অক্টোবর) আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বকশীবাজারে অবস্থিত ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এতে অংশ নেবেন।
১৭৫৭ সালে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের অবসান হয়। শুরু হয় ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন। রাজত্ব, শাসন ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা ও প্রভাব-পতিপত্তি হারিয়ে বাংলার মুসলিম সম্প্রদায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় ইসলামি শিক্ষার কেন্দ্রগুলো। বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়তে থাকে সব ক্ষেত্রে।
জাতির ক্রান্তিলগ্নে ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তাহযবি-তামাদ্দুন রক্ষার জন্য কতিপয় মুসলিম শিক্ষাবিদ ১৭৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় বড় লাট স্যার ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কলকাতায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। যাতে এ মাদরাসার শিক্ষিত যুবকগণ সরকারি অফিস আদালতে জজ, এম.এস.আর ইত্যাদি পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হতে পারেন। বড় লাট তাদের প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। কলকাতার বৈঠকখানা রোডে মাসিক একশত টাকায় একটি বাড়ি ভাড়া করে ১৭৮০ সালে মাদরাসা চালু করা হয়।
১৭৮০ সালের অক্টোবর থেকে ১৭৮১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট সাত মাস ভাড়া করা বাড়িতে মাদরাসাটি চলতে থাকে। ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কলকাতার পদ্মপুকুর লেনে একখন্ড জমি কিনে বড় লাট মাদরাসার জন্য একটি ভবন নির্মাণ করেন। এর নাম রাখা হয় মোহামেডান কলেজ। ১৭৮৫ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত করেন।
পদ্মপুকুর লেন হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় ১৮২৪ সালে ওই এলাকার সম্পত্তি বিক্রি করে ওয়েলেসলি স্ট্রীটের পাশে গোল তালাব (হাজী মহসিন স্কোয়ার) এলাকায় উপযুক্ত জায়গা কেনা হয়। সেখানে মাদরাসার নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।
১৭৮১ হতে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত মাদরাসাটি বোর্ড অব গভর্নরস দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৮১৯ হতে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংরেজ সেক্রেটারি ও মুসলমান সহকারী সেক্রেটারির অধীন বোর্ড অব গভর্নরস দ্বারা মাদরাসা পরিচালিত হয়।
১৮৫০ সালে ড. এ স্পেংগার (এম.এ.)-কে অধ্যক্ষ পদে প্রথম নিয়োগ করা হয়। ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ৭৭ বছরব্যাপী ইংরেজ কর্মকর্তারা এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে খাজা কামালুদ্দীন আহমদ (আই.ই.এস) সর্বপ্রথম মুসলমান হিসেবে ১৯২৭ সালে মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মাদরাসা-ই-আলিয়ার যাবতীয় আসবাবপত্র, লাইব্রেরির মূল্যবান কিতাবপত্র, বোর্ডের সকল রেকর্ডপত্র এবং ইলিয়ট হোস্টেলের যাবতীয় আসবাবপত্র ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
তথ্য মতে, ঢাকায় স্থানান্তরের পর লক্ষীবাজারের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ও ডাফরিন মুসলিম হোস্টেলে মাদরাসার কার্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৫৬ সালে তদানিন্তন প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী আশরাফ আলী চৌধুরী এবং মাদরাসার অধ্যক্ষ প্রফেসর মকবুল আহমদের চেষ্টায় বকশিবাজারে মাদরাসার জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়।
১৯৫৮ সালের ১১ মার্চ মাদরাসার ভবন ও ছাত্রাবাসের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান। ১৯৬০ সালে মাদরাসাটি লক্ষ্মীবাজার থেকে বকশিবাজারে স্থানান্তরিত হয়।
আরএইচ/