শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা তালেবান সরকারের নিষিদ্ধের তালিকায় মওদুদীর বই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা পর্তুগালের যাত্রাবাড়ীতে এসি বিস্ফোরণে একই পরিবারের দগ্ধ ৪ দালাল ধরে গিয়েছিলেন ইরাকে, ময়লার ভাগাড়ে তিন টুকরায় মিলল লাশ দক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ১,৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প নোয়াখালীতে অটোরিকশা উল্টে প্রাণ গেল নারীর ,আহত-৪ ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট মহানগর, জেলা ও শাবিপ্রবি’র সহযোগী সদস্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন এডভোকেট এর ইন্তেকাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুলঞ্জ ইউনিয়ন শাখা কমিটি গঠন সম্পন্ন

আফগান যুদ্ধে আমেরিকার বড় বড় কিছু ভুল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সালিম সাফি।।

আফগান গবেষক ও জিও নিউজ উর্দুর অ্যংকর>

আমেরিকা ও ন্যাটোর মতো শক্তিশালী জোট কেন আমেরিকা থেকে তাদের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি? কেন তারা আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতে সমর্পণ করে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হচ্ছে? এর সোজা উত্তর হল আমেরিকা নিজের ভুল ও মূর্খতার কারণে এমন করতে বাধ্য হচ্ছে?

তালেবানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক স্থাপনে পাকিস্তান, ইরান, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশগুলো ভূমিকা রেখেছে তবে বাস্তবতা হচ্ছে আফগানিস্তানে পরাজয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই দায়ী। আফগানিস্তান ইস্যুতে আমেরিকা যেসব ভুল করেছে আমার বিশ্লেষণ মতে সেগুলো কিছুটা এমন।

নাইন ইলেভেনের পর যেই সুরক্ষা কাউন্সিলের নীতিমালা অনুযায়ী আমেরিকা ও ন্যাটো জোট আফগানিস্তানে আগ্রাসন-এর অনুমতি পেয়েছিল, তাতে রুশ ও চীনের সমর্থন ছিল; বরং বলা যেতে পারে চীনই এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে অনেকাংশে।

বব উডওয়ার্ড তাঁর বই 'বুশ এডওয়ারে' লিখেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ আশঙ্কা করেছিলেন যে রাশিয়া হয়তো আফগানিস্থানে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাবে; কিন্তু যখন মার্কিন সেনাবাহিনীর জেনারেল কলিন পাওয়েল তাকে আশ্বস্ত করলেন যে পুতিন ন্যাটো জোটকে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এটা শুনে বুশের খুশির অন্ত ছিল না। আফগানিস্তানে প্রাথমিক দিকে আমেরিকা তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা পাওয়ার পর বুশ ইরানকে অশুভের অক্ষ বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপর চীন, রাশিয়া ও ইরানের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করেছিল, এই কারণে এই দেশগুলো ২০০৩ সালের পরে তাদের পলিসি পরিবর্তন করেছিল। এভাবে চীন, ইরান ও রাশিয়াকে অসন্তুষ্ট করা আফগানিস্তান ইস্যুতে আমেরিকার প্রথম বড় ভুল ছিল।

পারভেজ মোশাররফ চাপের মধ্যে পড়ে হলেও নাইন এলিভেনের পর আমেরিকাকে সমর্থন করেছিলেন। তাদেরকে পাকিস্তানের স্থল ও আকাশপথ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিলেন। তালেবান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছিলেন যে কারণে আমেরিকার ধারণারও আগে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল।

পারভেজ মোশাররফ-এর সরকার আমেরিকানদের খুশি করার জন্য সাবেক তালেবান রাষ্ট্রদূত আব্দুস সালাম জায়ফ এবং প্রাক্তন আফগান রাষ্ট্রদূত ডাক্তার গায়রত বায়রকে গ্রেফতার করে আমেরিকা হাতে তুলে দিয়েছিল। বিনিময়ে পারভেজ মোশাররফের একটাই চাওয়া ছিল, ইন্ডিয়া যেন আফগানিস্থানের ভূমিকে পাকিস্তান বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার করার অনুমোদন না পায়; কিন্তু আমেরিকা তাদের এই প্রতিশ্রুতি পুরা করেনি, যে কারণে আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান প্রক্সি যুদ্ধের অঙ্গনে পরিণত হয়েছে। এর কিছুকাল পরেই পাকিস্তানও তালেবান ইস্যুতে তাদের পলিসি পরিবর্তন করে ফেলে। পারভেজ মোশাররফের দাবি না মেনে ইন্ডিয়ার পাকিস্তান বিরোধী কর্মকান্ডের অনুমতি দেওয়া আমেরিকার দ্বিতীয় বড় ভুল ছিল।

নাইন ইলেভেনের পর থেকেই পাকিস্তান আমেরিকার কাছে দাবি করে আসছিল, তারা যেন তালেবানকে একেবারে আফগান ভূমি থেকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা না করে, তাদের সাথে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করে। পাকিস্তানের চেষ্টা ছিল তালেবানকেও যেন বন কনফারেন্সে আহ্বান করা হয়; কিন্তু আমেরিকা তখন তালেবানের নাম শুনতেই রাজি ছিল না।

আফগান প্রধানমন্ত্রী হামিদ কারজাইও পাকিস্তানের এ দাবির সাথে একমত ছিলেন, তালেবানের সাথে সমঝোতার জন্য সিবগাতুল্লাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বে তিনি একটি টীমও গঠন করেছিলেন; কিন্তু আমেরিকা তাদের এই প্রচেষ্টায় কর্ণপাত করেনি। এটা আমেরিকার দ্বিতীয়ও  বড় ভুল ছিল।

২০০২ ও ২০০৩-এ যখন আফগানিস্তানের অবস্থা স্থিতিশীল হচ্ছিল, আলাদা সংবিধান তৈরি হচ্ছিল, আফগান নাগরিকরা দেশে ফিরতে শুরু করেছিলেন, তালেবানও এতে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি, এই সময়ে আফগানিস্তানে কোধরণের আত্মঘাতী হামলাও হয়নি, কিন্তু আফগানিস্তানের অবস্থা পুরোপুরি স্থিতিশীল হওয়ার আগেই আমেরিকা ইরাকে যুদ্ধ শুরু করে দেয়, যে কারণে সবথেকে বড় ক্ষতি হয়েছে আফগানিস্তানের। এ সময় আমেরিকা স্পেশাল ফোর্স ইরাকে পাঠিয়ে দেয়।

আমেরিকার এ ধরনের পদক্ষেপের পর ইরান লক্ষ্য করল যে, ইরাক ও আফগানিস্তানে সৈন্য রেখে আমেরিকা এক ধরনের তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে, এরপরে ইরান তালেবান ও আল কায়দার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে।

হামিদ কারজাই ও হোসনি মোবারকের মত মার্কিন মিত্ররাও ইরাকে আমেরিকার এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন; কিন্তু তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ক্ষমতার নেশায় মত্ত ছিলেন। এর ফলে চীন-রাশিয়াও এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর মতো আফগানিস্তানে বিদেশি সেনার উপস্থিতি সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলে। ইরাকে আমেরিকার অবৈধ আগ্রাসনের পর তালেবান ও আল কায়দার ওপর আবু গারিবের কারাগারে অমানবিক নির্যাতনের বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়। এটা ছিল আফগানিস্তান ইস্যুতে আমেরিকার চতুর্থ এবং সম্ভবত সবথেকে বড় ভুল।

আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন নীতিগুলোও বিরোধপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন দিক থেকে বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন এই ইস্যুতে এক কাতারে দাঁড়াতে পারছিল না। এমনিভাবে ন্যাটো জোটের আওতাধীন দেশগুলোর মাঝেও মতপার্থক্য ফুটে উঠত।

উদাহরণস্বরূপ; মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা একদিকে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে এর জন্য সময়ও নির্ধারণ করে দেন; অন্যদিকে আরো সৈন্য পাঠিয়ে যুদ্ধ তীব্র করে তোলেন। এমনিভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ট্রাম্পও প্রথমে এক ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরবর্তীতে অন্য ধরনের।

আরো পড়ুন: বিশ বছরের আফগান যুদ্ধের অপেক্ষা এখন ১১ সেপ্টেম্বর

প্রথমে ট্রাম্প বলেছিলেন, যদি তিনি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেন তাহলে আফগানিস্তানে আবারও 'সন্ত্রাসী কার্যক্রম' (ট্রাম্পের ভাষ্য ও ধারণা মতে) বৃদ্ধি পাবে। এর দু'বছর পর তিনি বলেন তাকে পাকিস্তান ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে সফরে যেতে হবে। পরস্পর বিরোধী এই নীতি আমেরিকার পঞ্চম ভুল ছিল।...

জিও নিউজ উর্দুর অ্যংকর, বিশিষ্ট আফগান গবেষক ও সাংবাদিক সালিম সাফির কলাম  ( জিও নিউজ অনলাইন ১৬ জুন ২০২১) থেকে ভাষান্তর নুরুদ্দীন তাসলিম।

এনটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ